হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আবদুল আউয়াল ঠাকুর
জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক ইউনিয়ন অফিসে চলমান সমাবেশের গত শনিবারের আলোচনার বিষয় ছিল প্রবীণ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ। সকালে গ্রেপ্তার হবার কিছু সময়ের মধ্যেই খবরটি সর্বত্র পৌঁছে যায়। সাংবাদিকদের ওই আলোচনা সভাতেই তার গ্রেপ্তারের নানা প্রসঙ্গ উঠেছিল। যদিও তার গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সাংবাদিক নেতারাই শুধু নয় দেশের ও আন্তর্জাতিক দায়িত্বশীল মহল থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তার সম্পর্কে মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সকালে তার ইস্কাটনের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপ-কমিশনার জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে রাজধানীর পল্টন থানায় পুলিশের দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ডিবির তদন্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার সাথে সাংবাদিক শফিক রেহমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারের পর শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রহমান জানিয়েছেন, বেসরকারি বৈশাখী টেলিভিশন চ্যানেল থেকে সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা বলে কয়েকজন বাসায় ঢোকেন। শফিক রেহমান সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন ভেবে তিনি বাসার ভেতরে ছিলেন। পরে বাসার বাবুর্চি জানায়, শফিক রেহমানকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ সময়ে বাবুর্চি বাধা দেয়। বাবুর্চি জানিয়েছে, তাকে মারধর করে চুপ থাকতে বলা হয় এবং হাতের কার্ডটি ছিনিয়ে নেয়া হয়।
গ্রেপ্তারের বিবরণ দিয়ে বাসার কেয়ারটেকার অবদুল মতিন মোল্লা জানিয়েছে, সকাল ৬টার দিকে বাসার মূল গেটে প্রথমে দুজন ধাক্কা দেয়। তারপর আরেকজন আসেন। তারা বেসরকারি একটি চ্যানেল থেকে এসেছেন বলে জানান। তারা বলেন, ওই টিভিতে শফিক রেহমানের অনুষ্ঠান আছে। তাকে নিতে এসেছেন। কেয়ারটেকার বাসার পেছনে তিনতলা ভবনের নিচতলায় তাদের বসান। তিনতলায় থাকা শফিক রেহমানকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি নাস্তা দিতে বলেন। তারা তিনজন নাস্তা খান। শফিক রেহমানের নামতে দেরি হলে সকাল আটটার দিকে তারা কেয়ারটেকারকে একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে উপরে যেতে বলেন। কেয়ারটেকার উপরে উঠতে শুরু করলে ওই তিনজনও তার পেছনে দোতলায় উঠে যান। এ সময়ে শফিক রেহমান নিচে নামছিলেন। দোতলায় নামার পর ওই তিনজন ডিবি থেকে এসেছেন বলে জানিয়ে তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। যে পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা নিয়েই মূলত সাংবাদিকদের আলোচনা ব্যাপ্ত ছিল। ইতোমধ্যেই তার গ্রেপ্তার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে। প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তার সরকারের চরম স্বেচ্ছাচারিতারই বহিঃপ্রকাশ। এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা নেই বলেই সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট (আইএফজে) ও মানবাধিকার সংগঠন এই গ্রেপ্তারের সমালোচনা করেছে। বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে শফিক রেহমানের মুক্তি দাবি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধের সমাপ্তি দাবি করেছে।
শফিক রেহমানই বাংলাদেশে একমাত্র বিরোধী মতের সম্পাদক গ্রেপ্তার হয়েছেন সে কথা বলা যাবে না। স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে বিরোধী মত প্রকাশের কারণেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দৈনিক গণকণ্ঠের সম্পাদক আল মাহমুদ। গত তিন বছর কারাগারে রয়েছেন দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। মাত্র কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ। নানা ধরনের মামলায় জর্জরিত রয়েছেন দেশের বিরোধী মতের প্রচারক অনেক সম্পাদক। এ ছাড়া সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নের প্রসঙ্গ আলোচনায় না আনাই উত্তম। গত কয়েক বছরে সাংবাদিক পেটানো, হয়রানি করা যেন নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি কেবলমাত্র সাংবাদিকদের বেলায়ই হচ্ছে সেটা আলাদা করে দেখারও কোন সুযোগ নেই। গোটা দেশে যা ঘটছে তার অংশই হয়তো সাংবাদিকরা পাচ্ছেন। সাংবাদিকরা তো সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপের মানুষ নয় বরং তারা সমাজের অগ্রসরমানদের অংশ। প্রকৃত বিবেচনায় সাংবাদিকদের প্রতি সরকারের নীতিই প্রমাণ করে সরকার কতটা গণতান্ত্রিক। মত প্রকাশের বাহক সাংবাদিকরা নিরাপদ নয় বলেই গোটা দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার প্রসঙ্গ এখন বড় করে দেখা দিয়েছে। সমাজে নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝুঁকি বাড়ছে জীবনযাপনের। দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, লাশ মিলছে খালে-বিলে, রাস্তার ধারে এমনকি ডাস্টবিনেও। সড়ক দুর্ঘটনা, রেললাইনে কাটা পড়ে, লঞ্চ ও নৌকাডুবি কিংবা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে অনেকেই। এসব ঘটনায় অনেকেরই পরিচয় মেলে না। আবার পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কিংবা অপহরণের পরেও অনেককে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় যেখানে সেখানে। অনেক ক্ষেত্রে যাতে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা না যায় সে জন্য লাশের চেহারাও বিকৃত করে দেয়া হয়। নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে দিন যতই যাচ্ছে নাগরিক নিরাপত্তা ততই যেন হুমকির মুখে পড়ছে। হত্যা-গুম-খুন দিন দিনই বাড়ছে। সেই সাথে বিস্তৃত হচ্ছে এর গতি-প্রকৃতি। প্রতিটি ক্ষেত্রে কারণ অভিন্ন না হলেও ফলাফল অভিন্ন। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন তিন থেকে চারটি বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া গেছে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায়। অধিকাংশ লাশই ছিল ক্ষতবিক্ষত, গলিত ও গুলিবিদ্ধ। বুুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা থেকে উদ্ধার হয়েছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ। এমনকি সুটকেসবন্দি লাশ মিলেছে রাজধানীতে। পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ বছরে খুন হয়েছে ২৫ হাজার মানুষ। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুধুমাত্র শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৫টি। অন্যদিকে ২০১৫ সাল অবধি তিন বছরে গুম হয়েছে ১৮৮ জন যার মধ্যে লাশ মিলেছে ৩২টি। মূলত এসব সামাজিক অবক্ষয় ও সমাজের বিচারহীনতার নিদর্শন বহন করে। সামাজিক কারণের বাইরেও রাজনৈতিক কারণেও নিখোঁজ হওয়া বা বেওয়ারিশ লাশ অথবা লাশ না পাওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। এ প্রসঙ্গে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল গত কয়েক বছর ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। কার্যত এতে খুব একটা কাজ হয়েছে তেমনটা বলার খুব একটা জো নেই। বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে ধরে নিয়ে যাবার পর খুঁজে না পাওয়া বা বেওয়াবিশ হিসেবে পাওয়ার খবরও প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে।
সাংবাদিক শফিক রেহমানকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তার করাকে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কৌশল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন, পুলিশ সন্দেহবশত বা অভিযোগের ভিত্তিতে যে কোন সময় ছদ্মবেশে যে কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারে। সে হিসেবে সাংবাদিক পরিচয়ে শফিক রেহানকে গ্রেপ্তার করাটাও একটা কৌশল ছিল। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় তিনি আরো বলেছেন, এটা নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন। কিন্তু একটি বিষয়ে তদন্ত চলাকালীন সময়ে এত কথা বলা উচিত নয়। তিনি যে বিষয় নিয়ে কথা বলতে বারন করেছেন সে বিষয় নিয়েই ইতোমধ্যে পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে নানা খবর প্রকাশিত হয়েছে। এটা সঙ্গত কিনা সে প্রশ্ন উঠতে পারে।এটাও বলা কষ্টকর শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারে আগে আদালতের অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা। যে ধরনের গুরুতর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সে মামলায় আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় কোন অসুবিধা ছিল কিনা। গ্রেপ্তারে জন্য যে কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে তার প্রয়োজনীয়তা ছিল কিনা মহল ব্যাখ্যা করেননি। ধোঁয়াশার ব্যাপরটি সেখানেই। এদিকে গ্রেপ্তারের আলোচিত ঘটনা নিয়ে বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য মামলার যে পূর্ণ বিবরণ সংশ্লিষ্ট আদালতের ওয়েবসাইটে রয়েছে সেখানে এ ধরনের কোন প্রসঙ্গ নেই। গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট। সংগঠনটির ডিরেক্টর আব অ্যাডভোকেসি ও কমিউনিকেশন্স স্টিভেন এম এলিস বলেছেন, শফিক রেহমানের ক্ষেত্রে আমরা আহ্বান জানাই হয় আপনারা প্রমাণ প্রকাশ করুন যেখানে আছে যে তিনি অপরাধী কর্মকা-ে জড়িত, অন্যথায় তাকে অবিলম্বে ছেড়ে দিন ও অভিযোগ প্রত্যাহার করুন। আমরা সরকারকে আরো আহ্বান জানাই যারা সাংবাদিক ও অন্যদের খুন করছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করুন। দেখান যে তারা বিচারহীনতা ভোগ করছে না।
যে কৌশল নিয়ে এত আলোচনা সেখানেই ফিরে যাওয়া যাক। ভারত থেকে ব্রিটিশদের তাড়াতে এদেশের আলেমসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৮৫৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হবার প্রেক্ষিতে ইংরেজ বাহিনী ভারতের আলেম সমাজের ওপর তার বর্বর প্রতিশোধ নিয়েছিল। এরকম একটি ঘটনায় একদিন ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার তৎকালীন প্রধানকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করতে যায়। পুলিশ দেখে তিনি বসার স্থান পরিবর্তন করেন। পুলিশ তাকে জিজ্ঞেস করে তারা যাকে খুঁজছে তিনি তাকে দেখেছেন কিনা? জবাবে তিনি বলেন এই তো কিছুক্ষণ আগেও তিনি এখানে ছিলেন। অতঃপর পুলিশ চলে যায়। ১৭৫৭ সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী যখন প্রথমে বাংলা পরে সারা ভারতবর্ষ দখল করে নিয়েছিল তখনও নানা কৌশল অবলম্বন করেছিল। প্রায় বিনা যুদ্ধে তারা বাংলা দখল করে নিয়েছিল। রাজনীতিতে কৌশল আপস, বেইমানী নানাভাবে বিবেচিত হয়। এসব ক্ষেত্রে আঁতাত মিত্রতারও নানা প্রসঙ্গ রয়েছে। কে কার সাথে কখন কোন বাস্তবতায় আঁতাত বা কৌশলগত মিত্রতা গড়ে তুলবে তা নির্ভর করে সমসাময়িক বাস্তবতার উপর। বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সাধিত হবার পর যেসব ইতিহাস প্রকাশিত হয়েছে তাতে এ ধরনের মিত্রতা কৌশল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। স্বৈরাচারে বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বেলাতেও মিত্রতার প্রসঙ্গ রয়েছে। আমাদের দেশেও এর ভূরিভূরি উদাহরণ রয়েছে। আলোচ্য ক্ষেত্রে যে প্রসঙ্গটি গুরুতর তাহলো সাংবাদিকতার পরিচয় দেয়া কি কোন ছদ্মবেশের মধ্যে পড়ে? সাংবাদিক-পুলিশ গোয়েন্দাদের কাজের প্রকৃতির কারণেই এদের অনেকের সাথেই সুস্পর্ক রয়েছে বা থাকতে পারে। এর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন না করেও বলা যায় মাঠের কর্মীদের এক ধরনের ঐক্য থাকে। তার অর্থ কিন্তু কোন বিবেচনাতেই এই নয় যে পরস্পর পরস্পরের সীমা অতিক্রম করবে। বর্তমান সময়ের কথা বাদ দিলে সাংবাদিক-পুলিশের মধ্যকার সম্পর্কের মধুরতার ব্যাপরটির অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু হচ্ছে জনগণের কল্যাণ। এমন নজিরও রয়েছে অনেক সময়ে জাতীয় স্বার্থে বা বৃহত্তর কল্যাণের চিন্তা থেকে কাজের সুবিধার্থে এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়। অবশ্যই তা কোন অনৈতিক প্রেক্ষিত বা বাস্তবতায় নয়। গ্রেপ্তারের জন্য সাংবাদিকের কার্ড ব্যবহার যদি কৌশল হয় তাহলে একজন সাংবাদিক যদি পুলিশের পরিচয় দিয়ে কারো ওপর চড়াও হয় তখন এটিকে কোন বিবেচনায় নেয়া হবে? কার্যতই একের জগতে অন্যের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে যা ঘটেছে তাতে সাংবাদিকদের পেশাগত অবস্থান বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকদের যাতায়াত সর্বত্র। যে কোন বিবেচনাতেই সাংবাদিকরা হচ্ছেন জনসাধারণের বন্ধু। সাধারণ মানুষ তাদের বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাসের জায়গাটাতেই হয়তো আঘাত পড়েছে। শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারে যে বেসরকারি চ্যানেলের নাম ব্যবহার করা হয়েছে তাদের থেকেও একটি সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার ছিল যে কিভাবে এমনটি ঘটেছে বা ঘটতে পেরেছে।
কথিত কৌশল ব্যবহার করে গ্রেপ্তার মূলত এক ধরনের দূর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের কৌশল স্বাধীন দেশোপযোগী নয়। গ্রেপ্তার করা পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত। কোন কোন ক্ষেত্রে এই ক্ষমতার প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ নিয়ে নানা প্রসঙ্গ রয়েছে। কাজ করতে গেলে সবটাই যে নির্র্ভুল হবে সে কথা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে সতর্কতা। দুর্ভাগ্যের বিষয় দেশে কার্যত কোন জবাবদিহিমূলক সরকার না থাকার ফলে অর্থাৎ কার্যকর কোন সংসদ না থাকায় তার নেতিবাচক প্রভাব অন্যত্র যেমনি পড়ছে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নয়তো প্রসঙ্গটি অবশ্যই সংসদে উঠত। জনগণ সেখান থেকেই পুরো ব্যাপারটি জানতে পারত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সমাজে যে নিরাপত্তাহীনতা স্থান করে নিয়েছে তার একটি বড় উদাহরণ শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার। এর নানামাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে এবং পড়ছে। দেশের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব সক্রিয়। এ কথা সকলেই স্বীকার করবেন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে না পারলে কোন কাজেই কারো আগ্রহ থাকে না। নাগরিকদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারা সাংবিধানিক অধিকার। নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক হবেন, এটাই দেশবাসী প্রত্যাশা করে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।