Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ম্যাচ নয়, আত্মবিশ্বাস হারালো বাংলাদেশ

জন্মদিনে রশিদ জাদু

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:২০ এএম | আপডেট : ১:২২ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নেহয়েত ‘প্রস্তুতি’ ম্যাচ ছাড়া কি বলবেন এটাকে। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতে আগেই ‘সুপার ফোর’ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। গতকাল বৃহস্পতিবার আবু ধাবিতে অনুষ্ঠেয় দু’দলের মধ্যকার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি তাই ছিল ‘প্রস্তুতিমূলক’ই। আজ শুক্রবারই যে ‘সুপার ফোর’ পর্বে আবার মাঠে নামতে হচ্ছে দুই দলকে। যেখানে আফগানিস্তানের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান আর বাংলাদেশের সামনে ভারত চ্যালেঞ্জ। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে জয় দিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে কে না চায়। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ২৫৬ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিলো আফগানরা। জবাবে প্রস্তুতি তো দূরে থাক, নিদেনপক্ষে লড়াইটুকু করতে পারলো না বাংলাদেশ। ৪২.১ ওভারে ১১৯ রানেই গুটিয়ে গেছে মাশরাফির দল। ১৩৬ রানের বিশাল এই জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই আজ এ মাঠেই পাকিন্তানের মোকাবেলা করবে আজগর আফগানের দলটি।

আবু ধাবি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এদিন তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। রশিদ-নবি-মুজিবদের মত বিশ্বসেরা স্পিন বোলিংয়ের সামনে যেন কর্পুরের মত উবে গেল তামিম-মুশফিক বিহীন বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমানকে বিশ্রাম দিয়ে ওয়ানডে অভিষেক ঘটানো হয়েছে পেসার আবু হায়দার রনিকে। বল হাতে অভিষেকটা ঠিকই রাঙিয়ে নিয়েছেন এই তরুন পেসার। ম্যাচে আবু হায়দারের বোলিং ফিগার ৯-১-৫০-২। কব্জির চোটে টুর্নামেন্ট শেষ হওয়া তামিম ইকবালের জায়গায় প্রথমবারের মত ওয়ানডে দলে খেললেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে ব্যর্থতায় ম্লান হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটের দাপুটে এই ব্যাটসম্যানের ওয়ানডে অভিষেক। ১৩ বল খেলে মাত্র ৭ রানে ফিরেছেন ক্যাচ আউট হয়ে।

বহুল কাক্সিক্ষত মুমিনুল হকের ‘দ্বিতীয়’ অভিষেকটাও হয়েছে ছন্নছাড়া। পাজরের ইনজুরিতে ভোগা মুশফিকুর রহিমকে বিশ্রাম দিয়ে খেলানো হয় মুমিনুলকে। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর রঙিন পোষাকে ফিরে লিটল মাস্টার করেছেন মাত্র ৯। তবে আজ ভারতের বিপক্ষে ফিরতে পারেন মুশফিক। এর মাঝে বল হাতে উজ্জ্বল সাকিব ব্যাট হাতেও দেখাচ্ছিলেন ভালো কিছুর ইঙ্গিত। আট বোলারের মধ্যে একমাত্র ১০ ওভারের কোটা পূরণ করা সাকিবের বোলিং ফিগার ১০-১-৪২-৪। তবে বেশিদূর টেনে নিতে পারেননি দলকে, থেমেছেন ৩২ রানে। মিডল অর্ডারে কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাকেও থামতে হয়েছে ২৭ রানে।

বাকিদের গল্পাটা শুধুই আসা-যাওয়ার। ১০ বলে ৪ রান করে ফেরেন মিরাজ। তার বিদায়ের সময় ৩৩.১ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ১০০/৭। ১১ বল খেলে শূন্য রানে মাশরাফি আউট হলে জয়েল প্রগর গুণতে থাকে আফগানরা। একটু বাদে আরেক অভিষিক্ত আবু হায়দার রান আউটে কাটা পড়েন। আর ৪৭ বল বাকি থাকতে রুবেল হোসেনের উইকেট পতনের সঙ্গে সঙ্গেই আরেক আফগান হতাশা সঙ্গী হয় বাংলাদেশের। গত জুনে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের কাছে হোয়াইওয়াশ হতে হয়েছিলো সাকিবের দলকে।

এর আগে অষ্টম উইকেটে গুলবাদিন নবি ও রশিদ খানের অবিচ্ছিন্ন ৯৫ রানের জুটিই বড় সংগ্রহ এনে দেয় আফগানদের। অষ্টম উইকেটে যা তাদের সবচেয়ে বড় জুটির রেকর্ড। অথচ দ্রুত দুই উইকেট তুলে নিয়ে শুরুর দিকে রাশ টেনে ধরেন অভিষিক্ত আবু হায়দার। টপ মিডল অর্ডার দাঁড়াতে পারেনি সাকিব আল হাসানের ঘূর্নীর সামনে। কিন্তু অষ্টম উইকেটের জুটিটা শত চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি টাইগার বোলাররা। চেষ্টার কমতি করেননি দলপতি মাশরাফি। এজন্য তাকে গুনতে হয়েছে ৮ ওভারে ৬৭ রান। অভিষেক ম্যাচে আবু হায়দারের বোলিং ফিগার ৯-১-৫০-২। আট বোলারের মধ্যে একমাত্র ১০ ওভারের কোটা পূরণ করা সাকিবের বোলিং ফিগার ১০-১-৪২-৪।

দ্বিতীয় ওভারেই আবু হায়দারের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে টানা বাউন্ডারি খেয়ে ভড়কে গিয়েছিলেন কিনা কে জানে হায়দার। কিন্তু পরের বলেই ইহসানুল্লাহকে ফিরিয়ে ঘুরে দাঁড়ান বাঁ-হাতি পেসার। দলীয় ১০ রানে প্রথম উইকেট হারানো আফগানিস্তান দ্বিতীয় উইকেট হারায় ২৮ রানে। সেটাও হায়দারের শিকার। এরপর ৫১ রানের ধীর জুটিতে ইনিংসটা মেরামত করে নেন মোহাম্মদ শেহজাদ ও হাশমতুল্লাহ শহিদি। তাদের পর যারা ব্যাটে নেমেছেন প্রত্যেকেই কোন না কোন অবদান রেখেছেন। তবে সাকিব ৪ উইকেটে ১৩৯ থেকে ৭ উইকেটে ১৬০ স্কোরবোর্ড করে দেয়ার পর মনে হচ্ছিল সংগ্রহটা বেশি বড় হচ্ছে না আফগানদের। কিন্তু গুলবাদিনের ৩৮ বলে ৪২ ও রশিদের ৩২ বলে ৫৭ রানের ক্ষ্যাপা ব্যাটিং শেষ পর্যন্ত তাদের বড় সংগ্রহ এনে দেয়। ব্যাটে বলে দুর্দান্ত পার্ফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে রশিদ খানের হাতে। নিজের ২০তম জন্মদিনটা বেশ ভালোভাবেই স্মরণীয় করে রাখলো এই আফগান অলরাউন্ডার।

আজ সুপার ফোরে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে টপ অর্ডারের এই ব্যর্থতা কি দিয়ে মেটাবে বাংলাদেশ!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৫৫/৭ (শাহজাদ ৩৭, ইহসানউল্লাহ ৮, রহমত ১০, হাশমতউল্লাহ ৫৮, আসগর ৮, শেনওয়ারি ১৮, নবি ১০, গুলবাদিন, রশিদ; রুবেল ১/৩২, আবু হায়দার ২/৫০, মিরাজ ০/২১, মাশরাফি ০/৬৭, সাকিব ৪/৪২, মোসাদ্দেক ০/১৮, মুমিনুল ০/১৫, মাহমুদউল্লাহ ০/৫)।

বাংলাদেশ : (লক্ষ্য ২৫৬) ৪২.১ ওভারে ১১৯ (লিটন ৬, শান্ত ৭, সাকিব ৩২, মুমিনুল ৯, মিঠুন ২, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মোসাদ্দেক ২৬*, মিরাজ ৪, মাশরাফি ০, আবু হায়দার ১, রুবেল ০; আফতাব ১/১১, মুজিব ২/২২, গুলবাদিন ২/৩০, নবি ১/২৪, শেনওয়ারি ০/১২, রশিদ ২/১৩, রহমত ১/৭)।

ফল : বাংলাদেশ ১৩৬ রানে পরাজিত।
ম্যাচসেরা : রশিদ খান (আফগানিস্তান)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ