Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারসাম্যহীন খাতে লাইসেন্স দিতে মন্ত্রীর নির্দেশ

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

২০১২ সালে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) লাইসেন্স প্রদান করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। ফলে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে এই খাত। অনেক প্রতিষ্ঠানই লাইসেন্স নবায়ন ফি, আয়ের রাজস্ব ভাগাভাগিসহ সরকারের অন্যান্য পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। বাজার সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা যাচাই-বাছাই না করে দেয়া এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বকেয়ার দায়ে বাতিল করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। বকেয়া আদায়ে মামলাও চলছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বিদ্যমান আইজিডব্লিউ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোই যখন বাজারে টিকতে হাসফাঁস করছে ঠিক তখনই আবারও একটি প্রতিষ্ঠানকে এই খাতে লাইসেন্স দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। আইজিডবিøউ লাইসেন্স পেতে আগ্রহ প্রকাশ করাতেই লাইসেন্স দেয়ার জন্য রাজি হয়ে গেছেন তিনি। আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে নির্দেশনাও দিয়েছেন এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এই খাতের অন্যান্য লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কয়েকজন বলেন, পূর্বেই এই খাতে কোন যাচাই-বাছাই না করে লাইসেন্স দেয়ার ফলে একটা ভারসাম্যহীনতা বিরাজ করছে। তারা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমসিম খাচ্ছেন। সেখানে আবারও নতুন করে কোন প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হলে মার্কেটে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয় লাইসেন্স দেয়ার মৌখিক নির্দেশনা দেয়ার পর তা কমিশন অমান্য করতে পারে না। তবে আইনি কিছু প্রক্রিয়া অবশ্যই তাদের অনুসরণ করতে হবে। তাই লাইসেন্স প্রদানের জন্য লাইসেন্স রেগুলেশন অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদন চাওয়া হয়েছে। তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল একটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেতে আগ্রহ প্রকাশ করায় এবং মন্ত্রী নির্দেশ থাকায় কমিশন লোক দেখানোর জন্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জুলাই এল আর টেলিকম লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) লাইসেন্স পেতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। মন্ত্রণালয় থেকে ১৬ জুলাই চিঠি দিয়ে বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এল আর টেলিকম লিমিটেডের ওই আবেদনপত্র সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মালিক স্টারলিংক গ্রæপের চেয়ারম্যান মোঃ সিদ্দিকুর রহমান। তিনি তৈরি পোশাক রপ্তানী শিল্পের সাথে যুক্ত রয়েছে। এর বাইরে স্টক এক্সচেঞ্জ, নদী-খনন, মৎস আহরণ ব্যবসায় যুক্ত আছেন বলে আবেদনে জানান। দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর হওয়ায় স্টারলিংক গ্রæপ টেলিযোগাযোগ খাতে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এজন্য ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডবিøউ) অপারেটর এর লাইসেন্স দেয়ার আবেদন জানান।
এমন আবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ও বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে মৌখিক নির্দেশনা দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন নতুন আইজিডব্লিউ লাইসেন্স প্রদানের জন্য বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন লাইসেন্স দিতে আবেদন আহবান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিটিআরসি।
গত বুধবার বিটিআরসির জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী বা অনাবাসী বাংলাদেশী বা যৌথ উদ্যোগের আগ্রহীরা এ আবেদন করতে পারবে। এজন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত হতে হবে। আবেদন-সংক্রান্ত তথ্য জানতে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত যোগাযোগ করা যাবে। আর আবেদন করতে হবে ১০ অক্টোবরের মধ্যে। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে মূল্যায়নের মাধ্যমে লাইসেন্সের জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করবে কমিশন। তবে ঠিক কয়টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি বিজ্ঞপ্তিতে।
২০০৮ সালে নিলামের মাধ্যমে চার প্রতিষ্ঠানকে আইজিডবিøউ লাইসেন্স দেয়া হয়। আর ২০১২ সালের এপ্রিলে নতুন ২৫টি প্রতিষ্ঠান এই লাইসেন্স পায়। বার্ষিক লাইসেন্স ফি ও রাজস্ব আয় ভাগাভাগির অংশসহ অন্যান্য পাওনা নিয়মিত পরিশোধ না করায় এরই মধ্যে ছয় আইজিডবিøউ’র কার্যক্রম বন্ধ করেছে কমিশন। চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। বর্তমানে চালু রয়েছে ২৩টি প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক কল থেকে প্রাপ্ত আয়ের ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ২০ শতাংশ আইজিডবিøউ, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ও ২২ দশমিক ৫ শতাংশ অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস (এএনএস) প্রোভাইডার পেয়ে থাকে। আইজিডবিøউর মাধ্যমে আসা এসব কল আইসিএক্স হয়ে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দেয় এএনএস প্রোভাইডার হিসেবে পরিচিত সেলফোন ও ফিক্সড ফোন অপারেটররা।
এ বিষয়ে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স দেওয়া হবে। তবে কত সংখ্যক লাইসেন্স দেওয়া হবে তা সরকার নির্ধারণ করবে। ২০১২ সালে বাজার ব্যবস্থার তুলনায় অতিরিক্ত আইজিডবিøউ লাইসেন্স দেওয়াতে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বাজার যাচাই করে এবার নতুন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে জহুরুল হক বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে নতুন লাইসেন্স দেওয়া হবে।
নতুন করে এ খাতে লাইসেন্সের প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, যাচাই-বাছাই করেই আমরা লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেউ এ বিষয়ে আপত্তি করেনি। আপনাদের কাছে আপত্তি জানালে আপনারা বিবেচনা করেন। মন্ত্রণালয় প্রয়োজনের বাইরে কোন কাজ করে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিটিআরসি

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ