Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটের ফেঞ্জুগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বেসামাল, আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে আবার আলোচনায় উঠেছেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৯:২৬ পিএম

দলের নেতাকর্মীদের বাংলা ভাই, হিজড়া, নাস্তিক আখ্যায়িত, হত্যা আশংকা, আক্রমণের উসকানি দিয়ে প্রকাশ্যে রণ হুংকার দিয়েছেন এমপি কয়েছে। তার এই বক্তব্য এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে তোলপাড় চলছে। একই সাথে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে তীব্র উত্তেজনা। ১৮:২৪ মিনিটের এই বক্তব্য নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তুঙ্গে। ইতিপূর্বে ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা, ড. জাফর ইকবালকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য ও ইলিয়াস আলীকে মিস করেন বলে বক্তব্য প্রদান করে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি ।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্থানীয় ফেঞ্চুগঞ্জের ১ নং ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার পিঠাইটিকর সরকারী প্রাথমিক সরকারী বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ৪তলা ভবনের উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখছিলেন এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিতিদের বেশিরভাগ ছিলেন বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী। তাদের সামনে বক্তব্যে শুরুতেই নিজের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা সহ অতীতের বিভিন্ন বিষয়ে গর্বিত স্মৃতিচারণের এক পর্যায়ে এমপি বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জে বাংলা ভাইয়ের সন্ধান পেয়েছেন তিনি। বাংলা ভাইকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন তার রক্ষা নেই। এছাড়া কথিত বাংলা ভাইয়ের সাথি সাব্বির-শিব্বিরও। মাইজগাঁও এর সাব্বির ও ওই এলাকার শিব্বির। এই নাস্তিকদেরও রেহাই নেই।

গত বছর ফেঞ্চুগঞ্জের স্থানীয় ডাক বাংলা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ সহ শীর্ষ নেতারা। ওই সভাকে ইংগিত করে এমপি বলেন, কিছুদিন আগে এই ডাক বাংলায় আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন যারা, আমি যদি চাইতাম তাহলে উনাদের কেউ কুশিয়ারা নদীর উপারে যেতে পারতেন না। আমি যদি চাইতাম তাহলে ডাক বাংলা এট্যাক করে যারা আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন তাদের হাকালুকির হাওরের তলায় নিয়ে যেতাম।

তিনি বলেন, যে সমস্ত মানুষ সারাজীবন আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন করেছে। যারা আমাকে সারা জীবন ভোট দেয় নাই। তারাই এখন আমার বিরুদ্ধে আছে। তাদের খেতাব আমি দিয়েছি। বিশাল বড় খেতাব দিয়েছি। আমাদের পু: লিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ এই দুই লিংগই আছে বাংলার মাটিতে। আর এই সরকার আরেকটি লিঙ্গ দিয়েছে, হিজড়া লিঙ্গ। আমি ওদের বলি তারা হিজড়া পার্টি। ওদের না আছে ধর্ম, আর না আছে কর্ম।

তিনি স্থানীয় এক যুবকের খুনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রত্যেক খুনের পেছনে একজন রহস্যময় মানুষ থাকেন। ভারতে রয়েছে দাউদ ইব্রাহিদ। সে এখন পলাতক। এই বাংলার মাঠিতে ২১ আগস্ট বোমা হামলা চালিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণে মারা চেষ্টা ও আইভি রহমান সহ ২১/২২ নেতাকর্মী নিহত, জেলে ৪নেতাকে হত্যা সবই করেছিল বাংলা ভাই।
ফেঞ্চুগঞ্জে আমাদের একজন বাংলা ভাই রয়েছেন। ছুফি সাহেব ! তাকে দেখলে নাকি দুরুদ শরিফ পড়তে হয়। উনি আমার সামনে একদিন পড়েছিলেন। ওই দিন পার পার পেয়েছিলেন। আর জীবনে সামনে পড়লে পার প্ওায়ার কোন সুযোগ নাই।

তিনি বলেন, একটি কথা মনে রাখবেন শেখ হাসিনা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনারা, এই ফেঞ্চুগঞ্জের মানুষ। আমাকে ওই আওয়ামীলীগ এমপি বানিয়ে আমার হাতে আপনারা ডাণ্ডা বেড়ি পরিয়েছেন। এই বেড়ির কারনে অনেক কিছু করতে পারি না। মন চায় করতে। করতে পারি না। কিন্ত যেদিন আমার হাতে ডাণ্ডা বেড়ি থাকবে না সেই দিন আপনার এই নজরুলের কবিতার মতো কারার ওই লৌহ কপাট ভেঙ্গে আমি চুরমান করে দিয়ে এই ফেঞ্জুগঞ্জে অবস্থান করবো। এমপি আমার জন্য কিছু নয়, নাও হতে পারি।
যারা আমাকে ফেল করাবেন তাদের সর্তক করে দিয়ে তিনি বলেন, আমাকে ফেল করাইয়ে একটি খারাপ মানুষের জন্ম ফেঞ্চুগঞ্জে দিবেন না।
তিনি বলেন, ভয় পাচ্ছি এবারও বিল, জলমহালে অন্তত ৪/৫টি খুন হবে। একজন খুনিকে আমি পার করে দিয়ে কবিরা গুনাহ করেছি । এই খুনিকে আপনারা প্রত্যাখ্যান করুন। কেন তাকে আপনারা তাকে ধরেন না, পিঠাইয়া দেন না, ছাল উঠাইয়া দেন না। আজকের পর সাবধান হুশিয়ার করে দিচ্ছি, যদি আইন ছাড় দেয়, তাহলে ফেঞ্চুগঞ্জের মানুষ ছাড় দিবে না।
এমপি কয়েছ, তার বক্তব্যের কথিত বাংলা ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন রেডি হয়ে যান, হুশিয়ার করে দিচ্ছি, আলিফ হয়ে যান না হলে মানুষ আপনার ছাল তুলবে।

তিনি বলেন, আগামী ২৭ ডিসেম্বর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন তিনি। তার মতো যোগ্য প্রার্থী আরেক জন ফেঞ্চুগঞ্জে পাওয়া কঠিন। বেশিরভাগই চুর টাউট, বাটপার, খুনি, রাহাজানী ও রেইফ করে, মানুষের বদ্ধ করে গিয়ে হানা দেয় এদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি হুশিয়ারী জানান।
এব্যাপারে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ্ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশফাকুল ইসলাম সাব্বির বলেন, তাকে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর বক্তব্য ও হুমকি দিয়ে নিজের মানসিক অসুস্থতা ও রাজনীতিক অযোগ্যতা প্রমান করেছেন এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আ‘লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল বলেন, বাংলা ভাই বলতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ‘লীগ সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামকে ইংগিত করেছেন এমপি । এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি বর্তমান যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশফাকুল ইসলাম সাব্বির ইউনিয়ন আ‘লীগ সাবেক সাধারন সম্পাদক শিব্বির আহমদ মেম্বারকে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন উদ্বোধনী সভায় এমপি। এহেন বক্তব্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে গোট ফেঞ্চগঞ্জের রাজনীতিক অংগন সহ আপামর জনগনের মধ্যে। যা নৌকা ও দলের জন্য চরম দু:সংবাদ। বিষয়টি নিয়ে আইনী মুকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ