পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশব্যাপী নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের পরও পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরেনি। সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিলও বন্ধ হয়নি। পরিবহন মালিক শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলেছেন, সড়ক-মহাসড়ক থেকে তিন চাকার ইজিবাইক না সরানো পর্যন্ত পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরবে না।
বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির এক জরিপে বলা হয়েছে, গত আট মাসে ৩০১৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১১ নারী ও ৪৫৩ শিশুসহ ৩২০২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৭৮৮৩ জন। জাতীয় মহাসড়ক, আন্তজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কসমূহে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমেছে। গত ২৯ জুলাই থেকে সপ্তাহব্যাপী রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনাবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা কমতে শুরু করেছে।
শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ টেম্পু ও লেগুনা চলাচলও নিষিদ্ধ করেছিল। কয়েক দিনের মাথায় আবার পুলিশ এ সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে। এখন আগের মতোই লেগুনা চলছে রাজধানীর সড়কে। তবে আন্দোলনের পর থেকে রহস্যজনক কারনে আড়ালেই থেকে গেছে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ তিন চাকার নিষিদ্ধ যান। ২০১৫ সালের আগস্ট মাস থেকে সরকার মহাসড়কে এ যানগুলো চলাচল নিষিদ্ধ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ তিন চাকার এ যানগুলো। ইতিপূর্বে পরিবহন মালিক, শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ যানগুলো চলাচল বন্ধ করার জন্য জোড়ালো দাবি ওঠে। এমনকি বাস মালিকরা এ জন্য ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছিলেন।
বাস ও সিএনজি মালিক শ্রমিকদের অভিযোগ, শুধুমাত্র চাঁদাবাজির কারণে বন্ধ হচ্ছে না নিষিদ্ধ এ যানগুলো। এ চাঁদার নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা। এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক কারনে ইজিবাইক বন্ধ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ খোকন বলেন, সড়ক-মহাসড়ককে নিরাপদ করতে হলে ইজিবাই ও ব্যাটারিচালিত রিকশাকে কোনোভাবে বৈধতা দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, এই অনিরাপদ যানকে রাস্তায় রাখলে নিরাপদ সড়কের সব প্রচেষ্টাই বিফলে যাবে।
সারাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখেরও বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনাপ্রবন এই যানের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। দুর্ঘটনা কমানোর জন্যই ২০১৫ সালের ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে সব ধরণের থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। কিন্তু নিষিদ্ধ করার পরেও এসব যানের দৌরাত্ম থামানো যায় নি। বরং সড়ক-মহাসড়ক হয়ে খোদ রাজধানীতে এগুলো প্রবেশ করেছে। এখন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার অবৈধ এ যানকে বৈধতা দেয়ার পায়তারা করছে। যদিও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো এর বিরোধীতা করে আসছে।
জানা গেছে, সারাদেশে ১০ লাখ ইজিবাইক ও রিকশায় ৪০ লাখ ব্যটারি রয়েছে। এসব ব্যাটারি চার্জ করতে বিপুল পরিমান বিদ্যুত খরচ হচ্ছে-যার সিংহভাগই অবৈধ সংযোগের। বাড়তি এই বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। আবার ৪০ লাখ ব্যাটারি এক বছরের মাথায় ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার পর সেগুলো ধ্বংস করতে গিয়ে পরিবেশের দূষণ বাড়ছে। নিষিদ্ধ ইজিবাইক সড়কে সচল করার নেপথ্যে সারাদেশে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেটের সাথে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক থেকে শুরু করে এমপি পর্যন্ত জড়িত।
যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল করতে দেশের সড়ক মহাসড়ক উন্নয়নে গত পাঁচ বছরে ২৭ হাজার ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি বছরে এর সাথে যোগ হয়েছে আরও দেড় হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় গত ৫ বছরে সড়কের দৈর্ঘ্য এক ইঞ্চিও বাড়েনি। বাড়ানো যায় নি যানবাহনের গতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার বৈধতা দিলে সড়কে দুর্ঘটনার হার অনেক বেড়ে যাবে। কমবে যানবাহনের গতি, বাড়বে যানজট, ভোগান্তি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ খোকন বলেন, ধীর গতির এই যানগুলোর ব্রেকের সিস্টেম ভালো না। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া সড়কের বিশাল একটি অংশ দখল করে এই পরিবহনগুলো রাখা হয়। এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলে সড়ক-মহাসড়কে যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। দুর্ঘটনার হারও বেড়ে যাবে।
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ১৯২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে সরকারের খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর অংশ ৮ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। যার মধ্যে কোথাও এক লেন, কোথাও দুই লেন ইতোমধ্যে বেদখল হয়ে গেছে। ব্যয়বহুল এ মহাসড়কের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ মহাসড়কে চলাচলকারি যানবাহনগুলো। যার মধ্যে অন্যতম একটি কারন মহাসড়কে ইজিবাইক চলাচল।
২০১৫ সালে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। এখনও কাগজে-কলমে সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। তবে থেমে নেই থ্রি-হুইলারের দাপট। ঝুঁকিপূর্ণ এ যানের কারণে প্রতিদিনই সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের জন্য আলটিমেটাম দেয়া হয়ছিল। হাইকোর্টও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং আগে মহাসড়কে শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যটারিচালিত থ্রি হুইলার চলাচল করতো। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা।
এদিকে, দেশের মফস্বল এলাকা ছাপিয়ে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় রাজধানী সয়লাব। এগুলোর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। শ্রমিক সংগঠনের হিসাবে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত নিষিদ্ধ এ যানের সংখ্যা এখন এক লাখেরও বেশি। আর ঢাকার চারপাশে ইজিবাইক চলছে কমপক্ষে দেড় লাখ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশেই নিষিদ্ধ এ যানগুলো চালানের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা। প্রতিদিন এগুলো থেকে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এতে করে প্রতিদিন তোলা চাঁদার পরিমান দাঁড়ায় কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা। ইজিবাইক চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই টাকার ভাগ পায় স্থানীয় থেকে একেবারে শীর্ষ নেতা পর্যন্ত। একটা বড় অংশ পায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।