Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুহাররম ও আশুরার তত্ত্বকথা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

মাহে মুহাররম সম্মানিত মাসসমূহের মধ্যে একটি। বছরের ১২ মাসের মধ্যে চারটি মাসকে আশহুরে হুরুম বা হারাম মাস তথা সম্মানিত মাস বলা হয়েছে। উক্ত চার মাস হচ্ছে- মুহাররম, রজব, যীলক্বাদাহ ও যিলহিজ্জাহ।
এই চারটি মাসকে আল্লাহতায়ালা বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। এই মাসগুলো ‘হারাম’ বা সম্মানিত মাস হিসাবে পরিগণিত, যার মধ্যে ঝগড়া-ফেসাদ, লড়াই, খুন-খারাবী ইত্যাদি অন্যায়-অপকর্ম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এই মাসগুলোতে তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম-অত্যাচার করো না।’ (সুরাহ তাওবা: আয়াত ৩৬)। বিশেষভাবে মুহাররম মাসের ১০তম দিবস আশুরা নামে অভিহিত, যার মর্তবা অত্যাধিক। এ দিনকে তার পূর্বের দিন কিংবা পরের দিনের সাথে মিলিয়ে রোযা রাখতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ তাকীদ দিয়েছেন। আশুরার রোযার হুকুম: রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম ১০ মুহাররমে সিয়াম পালন করেছেন। কিন্তু ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা ১০ মুহাররমকে সম্মান করত এবং এ দিন তারা সিয়াম পালন করত। তা জেনে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের নিয়ম থেকে পৃথক বৈশিষ্ট মন্ডিত করার জন্য ৯ ও ১০ মুহাররম অথবা ১০ ও ১১ মুহাররম রোযা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আশুরার সিয়াম পালন করলেন এবং সকলকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা এই দিনটিকে (১০ মুহাররম) পালন করে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আগামী বছর বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ আমরা ৯ মুহাররমসহ সিয়াম রাখব। রাবী বলেন, কিন্তু পরের বছর মুহাররম আসার আগেই তার ওফাত হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১১৩৪)। অন্য হাদীসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা আশুরার দিন রোযা রাখো এবং ইয়াহুদীদের বিরোধিতা করো। তোমরা আশুরার সাথে তার পূর্বে একদিন অথবা পরে একদিন রোযা রাখো। (সুনানে বাইহাকী: ৪র্থ খন্ড, পৃ. ২৮৭)। ফজীলতের দিক দিয়ে রমজানের রোযার পরেই আশুরার রোযার অবস্থান। এটা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। অর্থাৎ এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের সগীরা গুনাহ মাফ হয়। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানের পরে সর্বোত্তম রোযা হল মুহাররম মাসের রোযা (অর্থাৎ আশুরার রোযা) এবং ফরজ নামাযের পর সর্বোত্তম হল রাতের নফল নামায (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামায)। (সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১১৩০)। অন্য হাদীসে এসেছে, হযরত আবু ক্বাতাদাহ (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমি আশা করি, আশুরার (১০ মুহাররমের) সিয়াম আল্লাহর নিকট বান্দার বিগত এক বছরের (সগীরা) গুনাহের কাফফারা হিসাবে গণ্য হবে। (সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১১৩০)
আশুরার রোযা রাখার উদ্দেশ্য: ১০ মুহাররম তারিখে অত্যাচারী পাপিষ্ট ফিরআউন ও তার কাওম আল্লাহর প্রিয় নবী মুসা (আ.)-কে হত্যা করার ঘৃণিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে, আল্লাহতায়ালা ফিরআউনকে তার দলবলসহ সাগরে ডুবিয়ে দেন এবং মুসা (আ.) ও তার কাওম বনী ইসরাঈলকে অত্যাচারী ফিরআউনের হাত থেকে মুক্তি দান করেন। এ নিয়ামতের শুকরিয়া হিসাবে মুসা (আ.) এ দিন নফল রোযা রাখেন। তখন তার অনুসারীগণও এদিন রোযা রাখেন। সে জন্য হজরত মুসা (আ.)-এর তাওহীদি আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) এদিন নফল রোযা পালন করেছেন এবং তার উম্মতকে পালন করতে বলেছেন। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদীনায় হিজরত করে ইয়াহুদীদেরকে আশুরার সিয়াম রাখতে দেখেন। তখন তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বললেন এটি একটি মহান দিন। এদিকে আল্লাহতায়ালা মুসা (আ.) ও তার কাওমকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফিরআউন ও তার লোকদের ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তার শুকরিয়া হিসেবে মুসা (আ.) এ দিন সিয়াম পালন করেন। তাই আমরাও এ দিন সিয়াম পালন করি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের চাইতে আমরাই মুসা আ. এর (আদর্শের) অধিক হকদার। অতঃপর তিনি সিয়াম রাখেন এবং সকলকে রাখতে বলেন।



 

Show all comments
  • নাসির ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:৩০ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইবাদাত করার তৌফিক দান করো।
    Total Reply(0) Reply
  • md. Ibrahim Khalil ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:০৬ পিএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের ইসলামের সঠিক পথ বুঝার এবং চলার তৌফিক দান করুক। আমিন!
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Ashraful Alam ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:২২ পিএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইবাদাত করার তৌফিক দান করো।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃনাজমুল ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৭:০৩ পিএম says : 0
    চট্রগ্রাম ভিবাগের সাহরীর শেষ সময় কয়টা?জানালে উপকৃত হব
    Total Reply(0) Reply
  • ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৮:০৩ পিএম says : 0
    asorar ruja koyti raka hoy
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন