পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম কলেজ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবরোধ ও দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে নগরীর বিশাল অংশে অচলাবস্থা নেমে আসে। এ সময় পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম কলেজ সড়কটি যানবাহনশূন্য হয়ে পড়ে। সড়কে তান্ডব চললেও পুলিশ ছিল নিরব দর্শক।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পদবঞ্চিতরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় অন্যপক্ষ তাদের উপর হামলা চালায়। উভয় পক্ষ ইট-পাকটেল ও দেশি অস্ত্র ব্যবহার করে। এ সময় অনেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পদবঞ্চিতরা চট্টগ্রাম কলেজের মেইন গেইটের সামনের সড়কে বাঁশ ও গাছ ফেলে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পুরনো টায়ার ও লাঠিসোটা জোগাড় করে রাস্তায় জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ সময় কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে ছাত্রলীগের অপর অংশ অবরোধকারীদের ধাওয়া দেয়। ইট-পাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে তারা একে অন্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম কলেজ রোড থেকে শুরু করে প্যারেড মাঠ, কলেজ ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রাণভয়ে পালাতে থাকে। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধের কারণে যানবাহন চলাচলও থেমে যায়। ব্যস্ততম এ সড়কে অবরোধের ফলে নগরীর চকবাজার থেকে শুরু করে পাঁচলাইশ ও মেডিকেল কলেজ অন্যদিকে গণি বেকারী থেকে শুরু করে জামাল খান, সিরাজুদ্দৌলা রোড ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম সরকারি স্কুল, মডেল স্কুল, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ চট্টগ্রাম কলেজের আশেপাশে অসংখ্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরাপদে সরে যেতে থাকে। উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা সন্তানদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে স্কুলে ছুটে যান।
সড়ক অবরোধ করে রাখায় আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। নগরীর জামালখান এলাকায় আইডিয়্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মহসিন হাই স্কুল, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট মেরিস স্কুলসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হলে সড়কে পুরোপুরি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তীব্র রোদ ও গরমের মধ্যে যানজটে আটকা পড়া স্কুলশিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকদের এবং সাধারণ মানুষকেও হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিত নেতারা সড়ক অবরোধ করে মিছিল করে। আমরা তাদের সবাইকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তবে সেখান থেকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, কলেজ গেইটে রাস্তার ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভকারীরা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তাদের উপর হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী।
৮০’র দশক থেকে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে একক আধিপত্য ছিল ছাত্র শিবিরের। ছাত্রশিবিরকে হটিয়ে ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর এ দুই কলেজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ছাত্রলীগ। দু’টি কলেজের সবকটি ছাত্রাবাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য করে ছাত্রলীগ। কলেজ দু’টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর থেকে প্রায় নিয়মিতই সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ। তাদের সামাল দিতে চকবাজার থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে আনা হয়। তবে এতেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। পুলিশের উপস্থিতিতেই সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজেকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধে। কলেজ দু’টি কেন্দ্র করে চকবাজার ও আশপাশের এলাকায় অছাত্র ও মাস্তানদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ব্যানারে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
কলেজে আধিপত্য নিয়ে ছাত্রলীগের সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যেই প্রায় তিন দশক পর সোমবার রাতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে মহানগর ছাত্রলীগ। এ কমিটি বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নামে পদবঞ্চিতরা। তারা ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখান করে নতুন কমিটির দাবি জানায়। ১৯৮৪ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছিল। নতুন কমিটিতে মাহমুদুল করিমকে সভাপতি এবং সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মাহমুদুল মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং সবুজ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী। কমিটিতে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী কাউকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়নি। গতকাল অবরোধ চলাকালে ক্যাম্পাসে কমিটিতে পদ পাওয়া মেয়রের অনুসারী ছয়জন পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তারা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে এসে কলেজের সামনে সড়কে অবস্থান নেন।
কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া সহ-সভাপতি ওবায়েদুল হক বলেন, কাউকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কমিটি করেছেন। প্রকৃত ছাত্রলীগ কর্মীদের মূল্যায়ন না করে ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মীদের পদ দিয়েছেন। সড়ক অবরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, অবরোধে জনসাধারণের দুর্ভোগ হয়েছে। এর দায়ভার নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অবশ্যই নিতে হবে। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, শিবির-ছাত্রদল বলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারাতো ক্যাম্পাসে রাজনীতি করে আসছিল। এতদিন তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।