বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কানাডা থেকে একবার জনৈক ব্যক্তি দেখা করতে এলেন। তিনি শুনেছেন, আমি নাকি কেবল মাসয়ালা বলেই ক্ষান্ত হই না, সমস্যাগ্রস্ত মানুষের কিছু সমাধানও বাতলে দিই।
কোনো ওজিফা আমল বা সান্ত্বনামূলক কথাবার্তা বলে তাদের মনে আশাবাদ জাগিয়ে তুলি। ভদ্রলোক ইদানীং দ্বীনের প্রতি ঝুঁকেছেন। কিন্তু তার বেগম এদিকে আসছেন না। এটাই তার সমস্যা। আমাকে দোয়া করতে বললেন। আমি আন্তরিকভাবেই তার সমস্যা দূর হওয়ার জন্য দোয়া করেছি। কয়েক মাস পর তিনি আমাকে ফোন করে বললেন, তার বিবি আমার সাথে কথা বলতে চান। আমি এভাবে ফোনে কথা বলা, মানুষের সমস্যা বা প্রশ্ন নেয়া এবং উত্তর দেয়া পছন্দ করি না। এতে সব কথা বোঝা যায় না, আর নিজের কথা বুঝিয়েও শেষ করা যায় না।
আমি বললাম, তার সব কথা আপনি শুনে আমাকে ডাকে পাঠিয়ে দিন। সুযোগ হলে উত্তর দেবো। নতুবা ফোনেও কথা বলে নেয়া যাবে।
ঠিক তা-ই হলো। কিছুদিন পর তার বেগম আমার ঠিকানায় দীর্ঘ পত্র পাঠালেন। পড়ে মনে হলো, এই মহিলার মানসিক অস্থিরতা চরমে। তিনি দ্বীনের পথে আসতে চান। কিন্তু গতানুগতিক তালিম বা দাওয়াতের মাধ্যমে তার অস্থিরতা দূর হবে না ভেবে তিনি অন্য কোনো ব্যবস্থা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তার স্বামী বিষয়টি বুঝে আমার সাথে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
পত্রের জবাবে আমি লিখলাম, আপনার যে কোনো পত্র বা টেলিফোন যদি আপনার স্বামীর মাধ্যমে হয় তাহলেই আমি আপনাকে সঠিক পরামর্শগুলো দিতে সক্ষম হবো। যেসব বিষয় আপনি পত্রে উল্লেখ করেছেন, তা যদি আপনি আপনার স্বামীকে জানাতে না চান তাহলে এই অংশগুলো বাদ দিয়ে বাকি সব দু’জনে একসাথেই আমাকে লিখে জানান অথবা ফোনে কথা বলে নিন।
দেখা গেল তাদের উভয়েই দ্বীনের পথে বেশ অগ্রসর, মনের অবস্থা ভালো। তবে মহিলার একটি বড় সমস্যা আর একটি প্রশ্ন আমাকে আলাদাভাবে ফোনে তার কথা শুনে শেষ করতে হয়েছিল।
সমস্যাটি খুবই বড়। এই মহিলার বিয়ের আগে একটি সন্তান হয়েছিল। যে অন্য পরিবারে ভিন্ন পরিচয়ে বড় হয়েছে। এ কথা তার স্বামী বা সন্তানেরা জানে না। এর কী সমাধান তা না জানা পর্যন্ত তিনি দ্বীনের পথে নিজেকে নিবেদন করতে পারছেন না। আমি তাকে এর ধর্মীয় ও সামাজিক সমাধান বলে দেয়ায় তিনি বেশ ভারমুক্ত হলেন। অবশ্য এসব টেলিফোনে সম্ভব হয়নি। দেশে বেড়াতে এলে তার ভাইকে সাথে করে তিনি আমার সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলেছিলেন।
এবার আসি তার প্রশ্নটির কাছে। তিনি জানতে চাইলেন, পিতার সম্পত্তিতে তার অধিকার ভাইয়ের অর্ধেক, কিন্তু তার পিতার জীবনে তার ভাইয়ের অবদান খুবই দুঃখজনক। সে পিতার ব্যবসা বা আর্থিক উন্নয়নে কোনো ভ‚মিকা রাখেনি। বরং বহু লোকসান করেছে। সহায়-সম্পদের ক্ষতিও করেছে। পক্ষান্তরে এ মহিলা নিজে পিতাকে সহযোগিতা করেছেন। এখন সম্পত্তি ও টাকা-পয়সা তিনি কম পাবেন এটি মেনে নিতে তার কষ্ট হচ্ছে।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সে ভাইটি কে?
তিনি পাশে বসা ভদ্রলোককে দেখিয়ে বললেন, ইনি।
আমি বললাম, এটি শরিয়তের বিধান। বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়াই আমাদের কর্তব্য। আমরা তকদিরে বিশ্বাসী। হালাল উপায়ে আল্লাহ যা দান করেন তাতেই কল্যাণ থাকে। তবে যেখানে প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা থাকে সেখানে সময় থাকতেই হিসাব করে চলা উচিত। শরিয়ত এটাই পছন্দ করে। কোনো অযৌক্তিক কাজ বা সিদ্ধান্ত ইসলামে নেই। যেমন- যখন দেখা গেল, আপনার পিতার ব্যবসা ও সম্পদ রক্ষা ও উন্নয়নে আপনার সহযোগিতা কাজে লেগেছে, তখনই আপনি ঋণদাতা পার্টনার বা পরিচালক পরিচয়ে আপনার যৌক্তিক সুবিধাদি আপনার পিতার কাছ থেকে নিয়ে নিতে পারতেন। এরপর যা কিছু থাকত তা মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থসম্পদ হিসেবে ভাগ হতো।
ভাইটি তখন কথা বলতে শুরু করল। বলল, এখনো আমি আগের মতোই আছি। আয়-উন্নতি তেমন নেই। বোনের সাহায্য নিয়েই চলতে হয়।
আমি বললাম, এটিই ভাগ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।