Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে সবাই ছাত্রলীগের না

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

অতি দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন ও ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। তবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ডাকসু নির্বাচনে আগ্রহী নয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। অন্য সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নির্বাচনের আগেই ডাকসু নির্বাচন চাইলেও ছাত্রলীগ জানিয়েছে এই সময়ে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
গতকাল (রোববার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন ভার্চুয়াল শ্রেণিকক্ষে ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা এসব কথা জানান। দুপুর পৌনে ১২টায় শুরু হয়ে পৌনে চারটা পর্যন্ত চলা এই বৈঠকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পরেই যত দ্রুত সম্ভব ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে তাদের এই মতের সাথে একমত হতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো। ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ততো দ্রুতই ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে সম্ভব হলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগেই ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে।
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সবার মতামতের ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচন হতে হবে। আগামী তিন চার মাসের মধ্যেও সেটা হতে পারে।
ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থানের বিষয়ে গোলাম রব্বানী বলেন, প্রতিটি হলে ৩০ শতাংশের বেশি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী নেই। বাকিরা সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী। আমরা মনে করি, সব সংগঠন সহাবস্থানেই রয়েছে। তিনি বলেন, ছাত্রদল পেট্রোল বোমা ছুড়বে না এবং ক্যাম্পাসে অস্থিরতা তৈরি করবে না এটা যদি নিশ্চিত করে তাহলে তাদের সঙ্গে সহাবস্থানে আপত্তি নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন আটকে আছে ফলে এটি এখনই সম্ভব নয়। এর জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে আরো আনুষাঙ্গিক কাজ আছে ফলে এর জন্য একটু সময় প্রয়োজন। এজন্য ডাকসুর নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের পরে যত দ্রুত হয় ততোই ভালো হবে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্র সংগঠনের সহবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে রাজনীতি করার যে স্বাভাবিক পরিবেশ তা তৈরি করে দিতে হবে। সকল সংগঠনের সহবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। মেধার ভিত্তিতে আসন বণ্টন করতে হবে। তখনই ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আসবে।
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা ডাকসু নির্বাচনের জন্য যা যা প্রস্তুতি দরকার তা সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছি। আগামী মার্চের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সময় বেধে দিয়েছেন সেই সময়ের মধ্যে হোক এটা আমরা চাই।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, আমরা বারবার ডাকসু নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানতে চেয়েছি। কিন্তু তারা জানায়নি। কেউ-কেউ ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরের বিষয় নিয়ে ভাবছেন। আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি। অতএব জাতীয় নির্বাচনে আগে-পরে বিষয় ঠিক নয়, দ্রুততম সময়ে আমরা ডাকসু নির্বাচন নেই। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবীব বলেন, আমরা চাই নভেম্বরের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মতামত নেওয়ার জন্য, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, সংসদীয় মূল্যবোধ বজায় রেখে আলোচনার জন্য বসেছি। বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে পরে আমরা সিদ্ধান্ত জানাব। ছাত্র সংগঠনগুলো সহাবস্থানের বিষয়ে ভিসি বলেন, এটি একটি প্রক্রিয়ার অংশ। যা যা করণীয় তা হলের প্রভোস্টরা করবেন।
এসময় ওই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর নাসরীন আহমাদ, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. সামাদ, ট্রেজারার প্রফেসর কামাল উদ্দীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর প্রফেসর এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ হল প্রোভোস্টরা।
ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী। এছাড়াও ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (দু’টি অংশ) এই আলোচনায় অংশ নেয়।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের বছর যাত্রা শুরু করে ডাকসু। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের পর বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সে নির্বাচন আর হয়নি। ছয় বছর আগের একটি রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি এক রায়ে হাইকোর্ট ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সাত মাসেও নির্বাচনের কোনো আয়োজন দৃশ্যমান না হওয়ায় গত ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিশ পাঠান রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তার জবাব না পেয়ে গত বুধবার তিনি হাই কোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন ভিসি সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
আগামীকাল রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চে মামলাটির শুনানির জন্য উঠতে পারে বলে মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন। এদিকে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ পরিষদের সভায় আহ্বান করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বুধবার ও বৃহস্পতিবার ছাত্র-সংগঠনগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বরাবরে পৌঁছে দেয়া হয়।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগ

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ