পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
র্যাব পুলিশের অভিযানেও থামছেনা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ। ফলে হুমকির মুখে এখন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি শিল্প। দেশের সিংহভাগ চিংড়ি উৎপাদন ও বিপননের বিশাল কর্মকান্ড সংগঠিত হয় মুলত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে। অথচ সেখানেই চলছে অপকর্ম। যে কারণে সম্ভাবনাময় শিল্পটি নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা সমস্যার দ্রুত উত্তরণ কামনা করেছেন। গত ৩ বছরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। আর চলতি অর্থ বছরে এ অবস্থা চলতে থাকলে এ সংকট মহাসংকটে পরিনত হতে পারে।
সূত্রমতে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দেড় কোটি লোক জড়িত। রপ্তানির সিংহভাগ বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের। এ অঞ্চলের প্রায় ৩০টি হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাকী ১০টি চট্রগ্রাম অঞ্চলে।
এদিকে, র্যাব-৬ এবং মৎস্য পরিদর্শন ও মান-নিয়ন্ত্রণ দপ্তর পূর্ব রূপসায় মৎস্য ডিপোর সামনে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ অপদ্রব্য পুশকরা একশ’ কেজি গলদা চিংড়ি জব্দ করেছে। গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান-নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সূত্র জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় মৎস্য ব্যবসায়ী আল-আমিন অপদ্রব্য পুশকরা পাঁচ ক্যারেট গলদা চিংড়ি নিয়ে মংলা থেকে পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মৎস্য ডিপোতে আসেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৬ এবং মৎস্য পরিদর্শন ও মান-নিয়ন্ত্রণ দপ্তর যৌথ অভিযান চালিয়ে অপদ্রব্য পুশ করা একশ কেজি গলদা চিংড়ি (৫ ক্যারেট) জব্দ করেন। এ সময় চিংড়ি ব্যবসায়ীকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দকরা চিংড়ি রূপসা নদীতে ফেলে বিনষ্ট করা হয়। অভিযানে মৎস্য পরিদর্শন ও মান-নিয়ন্ত্রণ দপ্তর খুলনার পরিদর্শক মোঃ আমিনুল ইসলাম, লিপ্টন সরদারসহ র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে অসাধু চিংড়ি ব্যবসায়ীরা র্যাব পুলিশের সাড়াষি অভিযানেও চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিদেশের বাজারে হিমায়িত চিংড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ও প্রসিদ্ধ বায়াররা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিদেশের অনেক বাজারে চিংড়ি ক্রয় বন্ধও করে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে মুচিলেকা দিয়ে রপ্তানি ঠিক রাখা হয়। শুধু বিদেশের বাজারে নয় খোদ খুলনার অভিজাত হোটেল রেস্তোরাতেও পুশকৃত চিংড়ি সরবরাহ হচ্ছে। মাঠ পর্যায় থেকে ফিস প্রসেসিং কোম্পানীগুলো পর্যন্ত সর্বত্র পুশকৃত চিংড়ির ছড়াছড়ি। এ এক মহামারির মত। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা একে মহাবিপর্যয়ের সাথে তুলনা করেছেন। চিংড়িতে পুশ করে বাজারজাতের মাধ্যমে অসাধু সিন্ডিকেট রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। আর প্রকৃত ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়ছে। বিদেশীদের কাছে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
সুত্রমতে, র্যাব পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সম্প্রতি রূপসা এলাকায় বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার পুশকৃত বাগদা ও গলদা চিংড়ি জব্দ করেছে। সিলগালা করেছে ডিপোগুলোকে এবং উদ্ধার করেছে পুশকরা সিরিঞ্জ, জেলী, জেলী জ্বালানো গ্যাসের চুলা ও হাড়ি পাতিল।
অপরদিকে, বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত চিংড়ি ও সাদা মাছ রফতানি কমছে। গত তিন বছর ধরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় বিদেশে রফতানির পরিমাণের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও কমে গেছে। অবকাঠামোগত অসুবিধা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও খাবার ব্যবস্থাপনার সংকট, আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামা করা, অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি এবং বেশ কিছু প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রফতানি কমে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট র্কতৃপক্ষ দাবি করেছেন।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১১০ মিলিয়ন পাউন্ড চিংড়ি বিদেশে রফতানি করা হয়। এ থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এর আগের বছর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১২০ মিলিয়ন পাউন্ড চিংড়ি মাছ রফতানি করা হয়। এ বছর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয় সোয়া ৪ হাজার টাকা।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা রপ্তানির স্বার্থেই অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, কোন অবস্থায় যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা চিংড়িতে পানি, ভাতের মাড়, সাবু, এরারুট, লোহা বা সীসারগুলি, মার্বেল, ম্যাজিকবলসহ অনাকাঙ্খিত পদার্থের দ্বারা পুশ করে চিংড়ির ওজন বাড়িয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের চেষ্টা না করে। রাসায়নিক তরল পদার্থের মধ্যে চিংড়ি ভিজিয়ে রেখে ওজন বাড়াবার চেষ্টা না করা প্রভৃতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।