বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ফিরিস্তাগণ আল্লাহপাকের চির বাধ্যগত বান্দাহ। তারা কখনো আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য হয় না। যাকে যে নির্দেশ দেয়া হয়, অকপটে সে তা পালন করে। সগিরা-কবিরা সকল প্রকার গোনাহ হতে তারা পবিত্র। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন: (ক) তারা তাদের উপরের রবকে ভয় করে এবং যে আদেশ প্রদান করা হয় তা বাস্তবায়ন করে। (সুরা আন নাহল: আয়াত ৫০)। (খ) তারা আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করে না। আল্লাহ যা আদেশ করেন তা পুরোপুরি পালন করে। আল্লাহপাক যে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, তা পালনে তারা সদা জাগ্রত সচেষ্ট। (আকীদায়ে ওয়াসিতিয়্যাহ মায়াস শরহে: পৃ. ২৫)। (গ) ফিরিস্তাগণ নিস্পাপ, তারা আল্লাহপাকের নাফরমানী করে না। তারা নারী পুরুষের বৈশিষ্ট্য হতে মুক্ত ও পবিত্র। (শরহে ফিকহে আকবার: পৃ. ১২।
মোট ফিরিস্তার সংখ্যা কত তা নিশ্চিতরূপে আল্লাহপাকই ভালো জানেন। তিনি ব্যতীত অন্য কারও জানা নেই। তবে, যে সকল ফিরিস্তাকে নির্ধারিত নামে উল্লেখ করা হয়েছে- যেমন আরশ বহনকারীগণ, মুহাফিজগণ, আমলনামার লেখকগণ প্রভৃতি তাদের উপর নির্ধারিত ও বিস্তারিতভাবেই ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। অবশিষ্ট ফিরিস্তামন্ডলী যাদের নাম বা শ্রেণী কিছুই উল্লেখ করা হয়নি, তাদের প্রতি ইজমালী ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র আল্লাহপাকই তাদের সংখ্যা জানেন। তাদের সংখ্যা আল্লাহপাক ছাড়া কেউ নিরূপণ করতে পারবে না। (আকীদায়ে ওয়াসিতিয়্যাহ মায়াস শরহে: পৃ. ২৫)
আল্লাহপাকের নির্দেশে ফিরিস্তাগণ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তারা নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে সদা ব্যস্ত। কিছু ফিরিস্তা মানুষের আমলনামা লেখার কাজে, কিছু ফিরিস্তা মানুষের রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখা-শোনার দায়িত্বে, কিছু ফিরিস্তা দিবা-নিশি আল্লাহপাকের তাসবীহ পাঠে ব্যস্ত। কতিপয় ফিরিস্তা আল্লাহপাকের আরশ বহন করে আছেন। কিছু ফিরিস্তা জান্নাতের ও জাহান্নামের প্রহরা এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত। কিছু ফিরিস্তা আরশের চতুর্দিকে কাতারবন্দী হয়ে দন্ডায়মান। কিছু ফিরিস্তা বাইতুল মামুর তাওয়াফরত। কিছু ফিরিস্তা উম্মতের পঠিত দুরূদ-সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করছে। কোনো কোনো ফিরিস্তা কবরে প্রোথিত মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নির্ধারিত। আকার অবয়বে কোনো ফিরিস্তার দুই, কোনো তিন, কোনো ফিরিস্তার চারটি, কোনো ফিরিস্তার আরও অধিক পাখা আছে। কোনো কোনো ফিরিস্তা মানুষের দোয়া ও মোনাজাতের পর আমীন বলে থাকে। কোনো ফিরিস্তা মানুষকে সাহায্য করার জন্য পৃথিবীতে আগমন করে থাকেন। যেমন- বদর ইত্যাদি যুদ্ধে আগমন করেছিলেন। কোনো কোনো ফিরিস্তা নাফরমান ব্যক্তিদের শাস্তি দেবার জন্যও আকাশ হতে অবতরণ করে থাকেন। যেমন- কওমে লুত, কওমে সামুদ, কওমে আদ ইত্যাদির ওপর আযাবের জন্য ফিরিস্তাগণ অবতরণ করেছিলেন। কিছু ফিরিস্তা জান্নাতে জান্নাতীদের সেবার জন্য নির্ধারিত থাকবেন। কিছু ফিরিস্তা জাহান্নামবাসীদের বিভিন্ন প্রকারের শাস্তির জন্য নিয়োজিত থাকবেন। জাহান্নামে নির্ধারিত ফিরিস্তাদের মধ্যে ১৯ জন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) নিশ্চয়ই তোমাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছেন, সম্মানীত লিপিকারবৃন্দ তার জানেন তোমরা যা কর। (সুরা আল ইনফিতার: আয়াত ১০-১২) (খ) তারা কি ধারণা করে যে, আমি তাদের গোপন কথা ও পারস্পরিক আলোচনা শুনতে পারি না। হ্যাঁ, অবশ্যই শুনতে পারি। তাদের নিকট আছে আমার দূতগণ, তারা লিখে রাখছে। (সুরা আয যুখরুক: আয়াত ৮০)। (গ) তুমি আরশের চতুস্পার্শ্বে বেষ্টনকারী ফিরিস্তামন্ডলীকে দেখতে পাবে তারা আল্লাহ পাকের পবিত্রতা ও স্তুতি বর্ণনা করছে। (সুরা আয যুমার: আয়াত ৭৫)। (ঘ) তোমাদের পরওয়ারদিগার তোমাদের ৫ হাজার বিশেষ চিহ্নযুক্ত ফিরিস্তা দ্বারা সাহায্য করবেন। (সুরা আল ইমরান: আয়াত ১২৫)। (ঙ) ফিরিস্তাগণ তাদের পরওয়ারদিগারের হামদ ও তাসবীহ পাঠ করে এবং পৃথিবীবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। (সুরা আশ শূরা: আয়াত ৫)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।