বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোপা আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার পর্যন্ত এই অঞ্চলের পাঁচ জেলায় পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪১ হেক্টর জমিতে আবাদ শেষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ৯৮ হেক্টর বেশি। এবার পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ভেজাল বীজের ছড়াছড়ি, পাহাড়ি ঢলসহ প্রকৃতির বৈরী আচরণের মধ্যেও কৃষকের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন শতাংশ বেশি জমিতে আবাদ শেষ হয়েছে। টার্গেটের চেয়ে আবাদ আরও বাড়বে বলে জানান কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এবার আমনের ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন (চাল)।
চট্টগ্রাম অঞ্চল খাদ্য উদ্বৃত্ত না হলেও এ অঞ্চলে ধানের আবাদ বাড়ছে। বিশেষ করে বাজারে চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা ধান আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আগে যেসব জমি পতিত থাকতো এখন সেখানেও ধানের চাষ হচ্ছে। বোরো এবং আউশে আবাদ খরচ বেশি হলেও প্রায় পুরোটাই প্রকৃতি নির্ভর আমন আবাদে খরচও অপেক্ষাকৃত কম। আর এ কারণে আমনের আবাদ বাড়ছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বীজতলা তৈরির সময় চট্টগ্রামসহ এ অঞ্চলের প্রায় সব জেলাতেই অতিবর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল হয়েছে। এ কারণে অনেক এলাকায় কয়েক দফা বীজতলা নষ্ট হয়েছে। সার এবং কীটনাশক সময়মতো পাওয়া গেলেও বাজারে ভালমানের বীজের সঙ্কট ছিল। বিশেষ করে ভেজাল বীজের কারণে বীজতলা নির্মাণ করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়েছে চাষিদের। কিন্তু এরপরও চাষিরা দমে যাননি। নষ্ট বীজতলায় নতুন করে বীজ বুনেছেন। পাহাড়ি ঢলে আসা বালির আস্তর সরিয়ে সেখানে আমনের আবাদ করছেন।
মীরসরাই পশ্চিম মায়ানি এলাকার কৃষক জসিম উদ্দিন গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তিনি চার কানি জমিতে আমন আবাদ করেছেন। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। ভেজাল বীজের কারণে বীজতলা তৈরিতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দফা বীজতলা তৈরি করতে গিয়ে দেখা যায়, চারা গজায়নি। পরে নতুন করে ভাল বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা করতে হয়েছে। মীরসরাই এলাকায় পাহাড়ি ঢলের কারণে বীজতলা নষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি।
দেশের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলের কৃষক আবদুল আজিজ বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে বীজতলা নষ্ট হয়েছে। তবে নতুন করে বীজতলা তৈরি করে আবাদ করা হয়েছে। এখনো গুমাইবিল ও আশপাশের এলাকায় রোপা আমনের আবাদ হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রান্তিক চাষিদের নানা প্রতিকূলতা আর সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে বোরোর তুলনায় আমন আবাদে খরচ কম হওয়ায় চাষিরা ব্যাপকহারে আমনের চাষ করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আবু হেসেন তালুকদার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমন আবাদে এবার অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে ছোটখাটো কিছু সমস্যা থাকলেও সার্বিকভাবে সার, বীজ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় আবাদ ভাল হচ্ছে। পাহাড়ি ঢল ও অতিবর্ষণে কিছু এলাকায় শুরুতে বীজতলা নষ্ট হলেও নতুন করে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন শতাংশ বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আবাদ আরও বাড়বে। এখনো অনেক জমিতে আউশ ধান কাটা চলছে। আউশ কাটার পর ওইসব জমিতে রোপা আমন লাগানো হবে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত আমনের আবাদ হয়। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় এক লাখ ৭২ হাজার ৪৪০ হেক্টর, কক্সবাজারে ৭৮ হাজার ২২০ হেক্টর, নোয়াখালীতে এক লাখ ৫২ হাজার ৫০ হেক্টর, ফেনীতে ৬৫ হাজার ৬০১ হেক্টর, ল²ীপুরে ৭৭ হাজার ৩৩০ হেক্টরে আমন আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসেবে, এবার বীজতলা তৈরিতেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। পাঁচ জেলায় ৩০ হাজার ৯৫৬ হেক্টর বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বীজতলা তৈরি হয়েছে ৩৩ হাজার ৮৬৭ হেক্টরে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নয় শতাংশ বেশি জমিতে বীজতলা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আবাদও ৯-১০ শতাংশ বেশি হবে।
এবার আমন ফসল থেকে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এবার হাইব্রিড এবং উফশী জাতের আবাদ বেশি হওয়ায় ফলনও বাড়বে। চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় ৩ হাজার ৯৭৭ হেক্টরে হাইব্রিড, ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৫ হেক্টরে উফশী এবং ৯৬ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমন আবাদ হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার প্রণোদনা দেয়ায় আউশের ভাল ফলন হয়েছে এ অঞ্চলে। গতকাল পর্যন্ত এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এক লাখ ১১ হাজার ৪৫৪ হেক্টর আউশ ধান কর্তন শেষ হয়েছে। ফলন পাওয়া গেছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ১২২ মেট্রিক টন। কৃষকদের উৎসাহিত করতে এবং উফশী, আউশ ও নেরিকা ধান চাষে এ অঞ্চলের ৪৫টি উপজেলায় কৃষকদের নগদ টাকা এবং বীজ সরবরাহ করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।