Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদারীপুরের হাট-বাজারে পদ্মার ডিমওয়ালা ইলিশে সয়লাব

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৪:৪৯ পিএম

বাঙালিদের মাছের তালিকা মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের মাছ হচ্ছে ইলিশ। বর্তমানে পদ্মা নদীর মাদারীপুর অংশে তিনটি ইউনিয়নের কয়েকশ জেলেদের জালে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পরছে। এর ফলে মাদারীপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ পাওয়ায় যাচ্ছে। বাজারে মাছের সরবরাহ বিগত কয়েক মাসের তুলনায় অনেক বেশি। মাছ বাজারে বেশি পাওয়া গেলেও দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বাজারে এখন ডিমওয়ালা ইলিশ বেশি ওঠায় ক্রেতারাই আনন্দের সাথে ক্রয় করলেও অনেকে আবার হতাশার কথা বলছেন। এই ডিমওয়ালা মাছ না ধরার পক্ষে মত দিয়েছেন। সরকার যদি ডিমওয়ালা মাছগুলো এখন থেকে আগামী দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত ধরা নিষিদ্ধ করতো তা হলে আগামীতে এ ডিমওয়ালা মাছগুলো থেকে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেতে। সাধারন মানুষও অনেক কম দামে কিনতে পারতো।
মাদারীপুরের বেশ কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জেলা শিবচর উপজেলার পদ্মানদী বেষ্টিত বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ি ও চরজানাজাত এ তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের প্রায় কয়েকশ জেলে এখন পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ ধরায় ব্যস্ত সময় পার করছে। জেলারা প্রতিদিন হাজার হাজার ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ ধরছে। যা বিক্রি করছে উপজেলার পাঁচ্চর আড়তে, মাওয়া ঘাটের আড়তে ও জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে। সরবরাহ বেশি থাকার পরও দামের ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন চোখে পরছে না। চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে এ সব মাছ । তবে জাটকা ইলিশের দাম তুলনামুলক ভাবে একটু কম। মাদারীপুরের স্থান ভেদে বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজরে ইলিশের দামের পার্থক্য রয়েছে। ১ কেজি ৩শ’ থেকে ১ কেজি ৪শ’ গ্রাম পরিমান মাছের পাইকারী দাম ১৬শ’ টাকা ২ হাজার টাকা, ১ কেজি পরিমান ১২শ’ থেকে ১৫শ টাকা, ৫শ’ গ্রাম পরিমান মাছের দাম ৭শত থেকে ৮শ’ টাকা, ৩টায় ১ কেজি হয় এরকম মাছের দাম ৫শ’ এবং জাটকা’র দাম দুইশ’ থেকে আড়াই শত টাকা।
শহরের ইটেরপুল বাজারে মাছ ক্রয় করতে আসা মেহেদী হাসান বলেন, বাজারে মাছের পরিমান ভালো। কিন্তু সে অনুযায়ী দামও বেশি। গত বর্ষা মৌসুমের তুলনায় বর্তমানে মাছের দাম অনেক বেশি। প্রায় প্রতিটি মাছে ডিম রয়েছে। সরকার যদি ডিমওয়ালা মাছগুলো এখন থেকেই ধরা নিষিদ্ধ করতো তা হলে আগামী বছরে প্রচুর ইলিশ মাছ পাওয়া যেতে। সাধারন মানুষও কম দামে কিনতে পারতো।
মস্তফাপুর বাজারে সকালে মাছ কিনতে আসা হাবিব হাওলাদার বলেন, ৫/৬ পিচ মাছে ১ কেজি হয়, এরকম ইলিশের দাম কিছুটা কম হওয়ায় নি¤œ আয়ের মানুষেরা ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে । এছাড়াও বড় ইলিশের দামও অন্যান্য সময়ের চেয়ে একটু কম। এই সময়টা একটু বেশী ভাল বড় ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। প্রায় প্রতিটি ইলিশ মাছের ভিতরে ডিম রয়েছে।
মাছের খুচরা বিক্রেতা বাচ্চু খন্দকার বলেন, মোকামে ইলিশ মাছ এখন বেশি। প্রচুর পরিমানে ইলিশ আসছে আড়ৎগুলোতে। আগের চেয়ে কিছুটা কম দামেই এখন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। হাট-বাজারগুলোতে এখন অন্য মাছের চেয়ে যেমন বেশি উঠছে ইলিশ মাছ, তেমনই বিক্রিও বেশি হচ্ছে। বেশির ভাগ মাছের ভিতরে ডিম রয়েছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পুরান বাজার মৎস আড়তের ব্যবসায়ীরা দিদার হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ইলিশ মাছের ব্যবসা করে আসছি। শহরের সবচেয়ে বড় মাছের বাজার হচ্ছে এটা। এখানে পদ্মার ইলিশ বেশি পাওয়া যায়। বর্তমানে যে মাছগুলো বাজারে আসছে তার বেশির ভাগ মাছের পেটে ডিম রয়েছে। অন্য সময়ের তুলনায় মাছ বেশি উঠলেও দামও অনেক বেশি। পদ্মার মাছ ছাড়াও বরিশাল ও চাঁদপুর অঞ্চল থেকে এখানে ইলিশ আসে।
মাদারীপুর পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব নেচারের নির্বাহী পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, এখন বাজারে যে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার বেশির ভাগ মাছের পেটে ডিম রয়েছে। অথচ সরকার ডিমওয়ালা মাছ ধরা বন্ধ রাখে অক্টোবর মাসে ১২/১৫দিন । সরকার এখন থেকে পুরো অক্টোবর মাস পর্যন্ত যদি মাছ ধরা বন্ধ রাখতো তা হলে আগামী বছরে এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুন / তিনগুন মাছ বেশি পাওয়া যেত। সাধারন মানুষ সহজেই মাছ কিনে খেতে পারতো।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান আহম্মেদ বলেন, ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন বাজারে যে সব ইলিশ মাছ পাওয়া যায় তার বেশির ভাগ মাছে ডিম রয়েছে। সরকার মাছ ধরা নিষেধ রাখছে অক্টোবর মাসের প্রথম দিক থেকে। আমরার দৃষ্টিকোন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে পুরো অক্টোবর মাস পর্যন্ত মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলে সামনের মৌসুমে প্রচুর ইলিশ মাছ পাওযা যেত। এ বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবো মাছ ধরা নিষেধের সময়টা বৃদ্ধির জন্য ।
মাদারীপুর জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, মাদারীপুরের বাজারগুলোতে ইলিশের বেশ সরবরাহ রয়েছে। তাছাড়া পদ্মানদীতেও জেলেদের জালে বেশ ইলিশ ধরা পরছে। আর একারনেই বাজারগুলোতে ইলিশের দামও তুলনামূলক কম। প্রতি বছর অক্টোবার মাসে ২২ দিন সকল ইলিশ মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও এখনো আমাদের কাছে কোন চিঠি আসে নাই ডিমওয়ালা মাছ ধরা নিষেধ কবে থেকে। তিনি আরও বলেন, এখন যে মাছে ডিম পাওয়া যায়, সেই মাছের পরিপূর্ণ ভাবে ডিম ছাড়ার সময় আসে নাই। আর ডিমওয়ালা মাছ ধরা কবে থেকে নিষেধ করবে তা নির্ধারন মৎস গবেষণা কেন্দ্র।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিমওয়ালা ইলিশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ