Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনগণ ভোট না দিলে ক্ষমতায় থাকবো না : শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৯ এএম

‘একাদশ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে থাকবো; আর ভোট না দিলে ক্ষমতায় থাকবো না; যদি আবার ক্ষমতায় আসতে না পারি উন্নয়নটা ধরে রাখবেন’ এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পরপর দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। যদি মানুষ আমাদের ভোট দেয়, আমরা আবারও ক্ষমতায় আসবো। আর যদি তারা ভোট না দেয়, আমরা ক্ষমতায় থাকবো না। তবে উন্নয়নটা ধরে রাখবেন’। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউশন মিলনালয়তনে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এর ৬ষ্ঠ জাতীয় কনভেনশন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, টেকসই জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির হার কমাতে সরকার সক্ষম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোর সুবিধা ভোগ করছে।
কেআইবির সভাপতি এ এম এম সালেহিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন কেআইবির মহাসচিব মোঃ খায়রুল আলম, আইএফডিসি’র প্রেসিডেন্ট এবং সিইও স্কট জে অ্যাঞ্জেল। কৃষিবিদ ড. মীর্জা আব্দুল জলিল, ড. আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মান্নান এবং কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অনুষ্ঠানে কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন নাছিমকে কেআইবি’র পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা পদক দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজার রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, কৃষিবিদদের লক্ষ্য রাখতে হবে বাংলাদেশকে আবার যেন খাদ্যের জন্য কারো কাছে হাত পাততে না হয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং খাদ্যের জন্য যেন আর কারো কাছে হাত পাততে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর যেন বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে ভিক্ষার হাত বাড়াতে না হয় সেদিকে বিশেষভাবে কৃষিবিদরা লক্ষ্য রাখবেন, আমরা সেটাই চাই। এইটুকুই আপনাদের কাছে অনুরোধ করে যাচ্ছি।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রতি ইংগিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামনে আমাদের নির্বাচন আমরা একটানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলাম। তৃতীয় মেয়াদে জনগণ ভোট দিলে আসবো, না দিলে নয়। কিন্তু আমরা চাই, যে অগ্রযাাত্রটা শুরু করেছি, বাংলাদেশ আজকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি, সেটা যেন থেমে না থাকে। আমাদের আওয়ামী লীগের নীতি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবো, কারো কাছে হাত পাতবো না। আর বিএনপি’র নীতি খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়া যাবে না, বিদেশ থেকে ভিক্ষা আনতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ কিন্তু আমাদের এখন এসব পণ্যে ভ্যালু অ্যাড করতে হবে, প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে হবে। কারণ, আমাদের দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে, বিদেশে বাজার ও তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এগুলো আমরা দেশে যেমন বিক্রী করতে পারবো তেমনি বিদেশেও রপ্তানী করতে পারবো। এ জন্যই কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। সেজন্য আমরা উৎসাহিত করছি আমাদের বিনিয়োগ যেন এদিকে হয়। আমরা তাহলে অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী হতে পারবো। কৃষি উন্নয়নে এ সময় তিনি স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তাঁর সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এমনো দিন ছিল আমাদের দেশের মানুষ খাবারের জন্য হাহাকার করতো। বিদেশ থেকে চাল আমদানি করেও চাহিদা মেটানো যেত না। ১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখন দেশে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। ২০০১ সালে আমাদের দায়িত্ব ছাড়ার সময় ঘাটতি পূরণ করে উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ মেট্রিক টন। বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে দেশকে আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে। কারণ খাদ্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণ হলে বিদেশ থেকে নাকি খাদ্য সাহায্য আসবে না। লুটপাটও বন্ধ হয়ে যাবে। রাসায়নিক সার, সেচ, জ্বালানি তেল এবং কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করার জন্য তাঁর সরকার কৃষিতে বিপুল ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বর্গাচাষীদের মধ্যে জামানত ছাড়াই নামমাত্র সুদে কৃষিঋণ দেয়া হচ্ছে। ২ কোটি ৮ লাখ ১৩ হাজারেরও বেশি কৃষক কৃষি উপকরণ কার্ডের মাধ্যমে কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন। মাত্র ১০ টাকায় কৃষকদের জন্য ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ আজ কৃষি পণ্য উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা এখন দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণ। চাল, শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ বেশ কিছু কৃষিপণ্য আমরা বিদেশে রপ্তানি করছি। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মৎস্য উৎপাদনে তৃতীয়, ফসলের জাত উৎপাদনে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।
কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে খরা, লবণাক্ততা ও পানিমগ্নতা সহিষ্ণু বেশ কিছু ফসল, ফলদবৃক্ষ ও অন্যান্য গাছের উচ্চফলনশীল জাত আপনারা উদ্ভাবন করেছেন। এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। উন্নয়নের জন্য গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কেমন হবে সেই পরিকল্পনা করে আমরা ‘ডেল্টা প্লান’ করেছি। সেখানে কৃষি ও পানিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ব্লু ইকোনমি শক্তিশালী করার জন্য সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্রও করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত তাঁর সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশজুড়ে আমরা ভাসমান কৃষিক্ষেত করতে পারি। ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জের কিছু জায়গায় শুরু হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। কৃষিক্ষেত্রকে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প নিয়ে আমরা প্রত্যেকটা পরিবারকে উৎসাহিত করছি। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করে দিয়েছি। কেউ ১০০ টাকা সঞ্চয় করলে ব্যাংক থেকে তাকে আরও ১০০ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে মানুষের সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি বাড়বে। একই সঙ্গে কোথাও এক টুকরো জমিও খালি রাখা যাবে না, ফসল ফলাতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর অল্প সময়ের মধ্যে জাতির পিতা এ দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তাঁর নেওয়া সব উন্নয়ন পরিকল্পনা বন্ধ করে দেয় জিয়াউর রহমান ও পরবর্তী এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের উদ্দেশ্যই ছিল এদেশের মানুষকে শোষণ করা। এদেশের মানুষ ভিক্ষা করবে, এটাই চেয়েছিল ক্ষমতা দখলকারীরা। তিনি বলেন, বিএনপি যখন সরকারে ছিল, সারের জন্য কৃষকদের ধর্ণা দিতে হয়েছে। গুলি খেয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে। কিন্তু এখন সারের জন্য ধর্ণা দিতে হয় না, বরং সারই কৃষকের হাতের মুঠোয় পৌঁছে যায়। ##



 

Show all comments
  • মানিক ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:১৬ এএম says : 0
    তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন দিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ