পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সকাল সাড়ে ১০টা। নগরীর ব্যস্ততম শাহবাগ মোড়ে অফিসগামী মানুষের প্রচন্ড ভীড়। প্রতিটি পয়েন্টে অপেক্ষমান যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছিলেন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায়। তবে দীর্ঘ যানজট ও মানুষের প্রচন্ড ভীড়েও দেখা যায়নি আগের মতো বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য। চোখে পড়েনি বেপরোয়া রাস্তা পারাপার। বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে, পুলিশের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে রোভার স্কাউট, স্কাউট, বিএনসিসি ও গার্লস গাইডসহ শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। তারা মূলত জেব্রা ক্রসিং ও ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করে রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করছিল পথচারীদের। ট্রাফিক আইন মানতে নানা দিক নির্দেশনা দিয়ে সচেতন করছিল নগরবাসীকে।
দুই যুগ ধরে সমস্যা জর্জরিত রাজধানীর এক বাসিন্দা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছরেও রাজধানীর সড়কে এমন শৃঙ্খলার চিত্র চোখে পড়েনি। শত চেষ্টা করেও নাগরিকদের দায়িত্ব পালনে সচেতন করা সম্ভব হয়নি। তবে বেখেয়াল এই মানুষগুলোকে অনেকটা সচেতন করতে সক্ষম হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনই পেরেছে নগরীর অতীত সৌন্দার্য ফিরিয়ে আনতে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে নগরীর সড়কে ফিরেছে প্রতীক্ষিত শৃঙ্খলা। যা বহুদিন দেখা যায়নি।
গত কয়েকদিন শাহবাগ, কারওয়ানবাজার, মতিঝিল ও সাইন্সল্যাবসহ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট সরেজমিনকালে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীদের এমন যুগপদ প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। কোন মানুষ জেব্রা ক্রসিং বাদ দিয়ে মূল সড়ক দিয়ে হাটতে গেলে তাকে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে হাটতে অনুরোধ করছিল শিক্ষার্থীরা। সড়কের মাঝখানে কোন বাস থামার সাথে সাথে সেটিকে একপাশে সরিয়ে দিচ্ছিলেন। স্কুলের ছোট ছোট শিশু শিক্ষার্থী ও বয়স্কদের হাত ধরে রাস্তা পাড় করে দিচ্ছিল তারা। অনেককে দেখা গেছে ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত লিফলেট বিলি করতে। এসব শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, নাগরবাসীকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই তারা পুলিশকে সহযোগিতা করছেন। তারা এক মাস জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবেন।
ডিএমপির ট্রাফিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে- সমন্বিতভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা, রেজিস্ট্রেন ও লাইসেন্স পরীক্ষা, যাত্রী ও পথচারীদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা, গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণ ছাড়াও নির্দিষ্ট জায়গায় যাত্রী ওঠা-নামা করানোর জন্য ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত বিভিন্ন সাইন বসানোরা কাজ চলছে।
পুরান ঢাকার কে এল জুবেলি স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কাউট সদস্য সাব্বির আহমেদ নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য পথচারী-চালক উভয়ের দোষ রয়েছে। সব থেকে বেশি উদ্যত ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে মোটরসাইকেল চালকরা। তারা কোন নিয়মের পরোয়া করেন না। অনেক মোটরসাইকেল চালক ও রিকসা চালককে উল্টো পথে যেতে শত নিষেধ করলেও তারা কোন বাধা মানেন না।
আরেক স্কাউট সানরাইজ ওপেন স্কুলের শিক্ষার্থী তৌহিদ ইসলাম জানান, মানুষকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বললে তারা বিষয়টিকে বাকা চোখে দেখেন। কোন নিয়ম না মেনে সিগন্যাল অমান্য করে রাস্তা পাড় হওয়াকে এসব লোক ক্রেডিট মনে করেন।
মহখালী থেকে ময়মনসিংহ রুটে চলাচলাকারী একটি বাসের সুপারভাইজার আ. সালাম জানান, সড়কে দুর্ঘটনার জন্য চালক-পথচারী উভয়ে দায়ী। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন না মানা ও প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানোর জন্য চালক যেমন দায়ি তেমনি মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে দৌড়ে রাস্তা পাড় হওয়ার জন্য পথচারী ও যাত্রীরা দায়ি।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্র রোবার স্কাউট মো. মোস্তাফ জানান, চালক-পথচারী কেউ আইন মানতে চায় না। বিশেষ করে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোযুক্ত গাড়িগুলো ট্রাফিক আইন বেশি অমান্য করে। এ সব শিক্ষার্থীদের নিয়ম মানতে বললে তারা সব চেয়ে বেশি স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। ফার্মগেটে পথচারী শাকিল আহমেদ জানান, অভ্যাসগত কারণে ট্রাফিক আইন মানতে অনীহা। অন্যদের আইন ভাঙতে দেখলে নিজে আইন মানতে ইচ্ছে করে না। তবে আগের তুলনায় এখন আইন মেনে চলেন বলে তিনি জানান।
মতিঝিলে ট্রাফিক পুলিশের সদস্য আবুল হোসেন জানান, নাগরিকরা নিজেদের থেকে সচেতন না হলে কেউ তাদের সচেতন করতে পারবে না। সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সচেতন হলে সড়কে কোন বিশৃঙ্খলা থাকবে না। তখন সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি অনেক হ্রাস পাবে।
রেড ক্রিসেন্ট সদস্য মিরপুর পলিটেকনিকের ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী রাসেল রানা জানান, রাজধানীর তিনটি স্পটে রেড ক্রিসেন্টের ২০ জনের অধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। সকালে ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুটি শিফটে শাহবাগ, বাংলা মোটর ও রূপসী বাংলা মোড়ে এসব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।
বিএনসিসির সামরিক প্রশিক্ষক ল্যান্স কর্পোরাল ফখরুল হোসেন ইনকিলাবকে জানান, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে সহযোগিতার মাধ্যমে সড়কে সুশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নাগরবাসীকে ট্রাফিক আইনের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই বিএনসিসির সদস্যরা সড়কে দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, এক মাস সড়কে বিএনসিসির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে পুলিশকে সহযোগিতার পাশপাশি নগরবাসীকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করবে।
বাংলাদেশ গার্লস গাইডের রাজধানী অঞ্চলের ট্রেইনার কামরুন্নাহার কেয়া ইনকিলাবকে জানান, জনগণকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে সারা দেশে গার্লস গাইডের ৪ লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এই সদস্যদের পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ট্রেনিং ও সভা সেমিনারের মাধ্যমে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকদিনের মধ্যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যাবে। তখন অনেক সহজে কাজ করা যাবে।
রোভার স্কাউটের লিডার প্রতিনিধি জুলিয়া গোমেজ ইনকিলাবকে জানান, রাজধানীর ১২টি পয়েন্টে রোভার স্কাউটের ৪শ’র বেশি সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন নগরীতে তাদের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। তিনি জানান, জনগণ সচেতন না। শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে থেকে কাজ করে তখন অবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক থাকে। স্কাউটরা ঘরে ফিরে গেলে আগের মতো অবস্থা হয়ে যায়। নাগরিকদের মধ্যে স্থায়ীভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে একটি সুস্থ নগরী উপহার দেওয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নাগরিকদের আইন মানতে কঠোরভাবে বাধ্য করার আগে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। তিনি বলেন, নগরীর প্রতিটি পয়েন্টে পর্যাপ্ত ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডার পাস, জেব্রা ক্রসিং ও সড়ক বিভাজন তৈরির পাশাপাশি বিকল্প সড়ক তৈরি করতে হবে। এসবের পর আইন না মানলে তখন কঠোর হওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।