Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোমতীর চরে সারাবছর মুলা চাষ

মুলা চাষ সহজ ও স্বল্পসময়ে উৎপাদন

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

মুলা চাষাবাদ সহজ এবং স্বল্প সময়ে উৎপাদনের কারণে কুমিল্লার জেলার গোমতী নদী তীরবর্তী চরের বিভিন্ন স্থানে মুলা বছরব্যাপী চাষ হচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে মুলা চাষ। কুমিল্লার প্রায় প্রতিটি পাইকারি ও খুচরা বাজারে মুলার ব্যাপক কেনাবেচা চলছে।
জেলার কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, গোমতী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে উৎপন্ন হয়ে সদর উপজেলার কটকবাজার সীমান্ত পথে এদেশে প্রবেশ করে দাউদকান্দি উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। জেলার সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস উপজেলায় গোমতীর চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৪০০ হেক্টর জমিতে মুলা চাষ হচ্ছে। গোমতীর দু’তীরের চরাঞ্চলে সারা বছর ব্যস্ত সময় পার করেন মুলা চাষিরা।
সদর উপজেলার বিবিরবাজার, জগন্নাথপুর, শাহপুর, গাজীপুর, কৃষ্ণপুর, গোলাবাড়ি, সুবর্ণপুর, টিক্কাচর, শ্যামারচর, শ্রীপুর, নিশ্চিন্তপুর, বুড়িচংয়ের ভান্ডী, বালিখাড়া, পূর্বহুরা, কাহেতরা, ভরাসার, ফরিজপুর, রামপাল, নানুয়ারবাজার, কাঁঠালিয়া, বাগিলারা, বাজেহুরা, কিংবাজেহুরা, মিথিলাপুর, বাজেবাহেরচর, জালালপুর, মহেষপুর, এতবারপুর, মীরপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়ার মনোহরপুর, মালাপাড়া, চন্ডিপুর, বিষ্টিপুর, অলুয়া, রামনগর, দেবীদ্বারের কালিকাপুর, নাল্লা, সাইচাপাড়া, কামাল্লা, মুরাদনগরের নবীপুর, ডুমুরিয়া, করিমপুর, তিতাসের ভাষানিয়াসহ বেশকিছু চর এলাকায় কৃষকরা বারো মাসই চাষাবাদ করছেন মুলা।
নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার একাধিক কৃষক জানান, সারা বছরই নদীতীরে নানা জাতের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। তবে সা¤প্রতিক সময়ে বাজারদর ভালো হওয়ায় পুরো বছরই কৃষকরা মুলা চাষে ব্যস্ত থাকেন। সদর উপজেলার সুবর্ণপুর এলাকার কৃষক আল আমিন জানান, শীতকালীন সবজি হিসেবে মুলার কদর থাকলেও বাজারদর অন্য সবজি অপেক্ষা কম থাকে। তবে বছরের অন্য সময় বাজারদর বেশ ভালো থাকায় এখানকার কৃষকরা বছরজুড়ে মুলা চাষে ঝুঁকছেন। এতে একেকজন কৃষক বছরে ৪-৫ বার ফলন পাচ্ছেন। ময়নামতির বাজেহুরা এলাকার আলম, আবদি মিয়াসহ একাধিক কৃষক জানান, শীতকালে অন্য সবজির মতো মুলাও বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় দাম অনেক কম থাকে। কিন্তু বছরের অন্য সময় বাজারে মুলার ভালো দাম পাওয়া যায়। বর্তমানে জমিতেই প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার অনেক কৃষক গোমতী চরে ব্যাপকহারে মুলা চাষ করছেন। একবার ফলন উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে ফের জমি চাষ করে বীজ বপন করা হয়। এভাবে পুরো বছরে অন্য সবজির তুলনায় ৩-৪ গুণ আবাদ করা যায়। তারা আরও জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালোসহ কাছাকাছি পাইকারি ও খুচরা অনেক বাজার থাকায় খুব সহজেই কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার বুড়িচংয়ের নিমসারে দুই পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুর রব ও জাহাঙ্গীর জানান, আমরা সরাসরি জমি থেকে মুলা কেনেন। সেখান থেকে ঢাকা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন। কামাল্লা গ্রামের কৃষক ইউসুফ জানান, লাভ ভালো হওয়ায় এখানকার কৃষকরা দিন দিন ব্যাপকহারে মুলা চাষে ঝুঁকছেন। প্রতিটি ফলন উঠতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগে। এককালীন ৫০ শতক জমিতে তিনি মুলা চাষ করতে ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় করে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
কৃষি বিভাগ থেকে মাঠপর্যায়ের লোকজন এসে তাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ ছাড়াও সরকারিভাবে বীজ-সার সুবিধা পাচ্ছেন। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উন্নয়ন কর্মকর্তা আবদুল হাদি জানান, জেলার মোট মুলার প্রায় ২০ শতাংশ উৎপাদিত হয় গোমতীর চরে। চরে ৪৩০ হেক্টরের বেশি জমিতে মুলা আবাদ হয়। এ ফসলটি স্বল্প সময়ে অর্থাৎ ৪৫-৫০ দিনে বিক্রির উপযোগী হওয়ায় অন্য ফসলের চেয়ে বেশি আবাদ হয়। এতে লাভও বেশি। ফলে দিন দিন বাড়ছে গোমতীর চরাঞ্চলে মুলা চাষ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুলা চাষ

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ