Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফলন বেশি দাম কম

কুমিল্লায় চাষিদের ভাগ্যে মেলে না ন্যায্য দাম

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বেগুনের ফলন দেখে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছায়কোট গ্রামের কৃষক আবদি মিয়ার মুখে ফুটেছিল তৃপ্তির হাসি। কিন্তু সেই হাসি মিলিয়ে গেল কয়েকদিন পরই। সপ্তাহ ঘুরেই দাম প্রতি মণে দাম কমেছে ২৫০ টাকা। অথচ তার শহর কুমিল্লায়-ই বেগুনের দাম আকাশচুম্বী।
কুমিল্লার চান্দিনা, বুড়িচং এই দুই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজির ফলন হয়। কৃষকরা বেগুন, কাঁকরোল, শসা, ঝিঙা, লাউ, পুঁইশাক, মরিচ, ডাটাশাক, পেঁপে ও কচুর লতি নিয়ে আসেন কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বাজার নিমসার পাইকারি হাটে। সেখান থেকে প্রতিদিন অর্ধশত ট্টাক শাকসবজি নিয়ে রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং অন্যান্য জেলায় যায়। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ওই সব জেলার শাকসবজির চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগই পূরণ করেন এ এলাকার কৃষকরা।
সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত নিমসার সবজি হাটে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমান বাজারে প্রতি মণ বেগুন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, কাঁকরোল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, শসা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, পুঁইশাক ৪০০ টাকা, মরিচ এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা, পেঁপে ৫০০ টাকা, ঝিঙা ৯০০ টাকা, জলপাই ৮০০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিছ ২০ থেকে ২৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চান্দিনার শ্রীমন্তপুর গ্রামের সবজি চাষি শাহাজাহান মিয়া বলেন, দালালরা কম টাকা দিয়ে প্রায় জোর করেই সবজি নিয়ে যায়। তারা কমিশন নিয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেয় সেই সবজি। চাষিদের কাছ থেকে মরিচ কিনে বাজারেই পাইকারি বিক্রি করেন রমজান মিয়া। তিনি জানান, কৃষকের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে মরিচ কিনে তিনি পাইকারদের কাছে ৫০ টাকায় বিক্রি করেন। সেই মরিচ সিলেটে যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেলেও ভোক্তারা বেশি দাম দিয়েই সবজি কিনছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিলে এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে। অথচ সবজি উৎপাদনে রীতিমতো বিপ্লব ঘটালেও এর দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় এই এলাকায় সবজির ফলন ভালো হচ্ছে।
উৎপাদক ও বিশ্লেষকদের মতে, প্রক্রিয়াজাতকরণের সুযোগ না থাকায় চাষিরা কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শহীদ উল্লাহ বলেন, মৌসুমি সবজির আমদানি বাড়লে পাইকারি ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম কমিয়ে দেন। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক।
সবজি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে নতুন সবজি ওঠার সময় দাম একটু ভালো পাওয়া গেলেও আমদানি বেশি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা নামমাত্র দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন। বর্তমানে স্থানীয় সবজির হাটগুলোতে কিছু কিছু শীতের সবজি আগাম ওঠতে শুরু করেছে। তবে এখন চলছে কাঁচা মরিচের ভরা মৌসুম।
চাষি আমির হোসেন জানান, তিনি এ বছর ২৪ শতক জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছেন। প্রথম দিকে প্রতিটি লাউ বিক্রি করেছেন ১২ থেকে ১৫ টাকা করে। এখন বিক্রি করছেন আট থেকে ১০ টাকা দরে। এ দামে লাউ বিক্রি করে কোনো রকমে আবাদের খরচ উঠেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আড়তদার, ফড়িয়া ও বেপারিরা এখানকার হাট নিয়ন্ত্রণ করেন।
নিমসার হাটে সবজি কিনতে আসা ফরিদপুরের ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন এবং টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, হাটের খাজনা, আড়তদারি ও পরিবহন খরচ দিয়ে ঢাকা কিংবা বরিশাল পৌঁছাতে সবজির মূল্য দ্বিগুণ হয়ে যায়। এরপর তাদের লাভের প্রশ্ন থাকে। এখানে একটি লাউ ১০ টাকায় কিনলে, ঢাকার বাজারে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি না করলে লাভ হয় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ন্যায্য দাম

৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ