Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমরা এখন কোন যুগে বাস করছি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

চন্দ্র এবং সূর্য মহাকাশে নিজ নিজ কক্ষপথে অবিরাম ছুটে চলেছে। এ দুয়ের চলা কখন হতে শুরু হয়েছে তা নির্ধারিতভাবে বলা না গেলেও এ কথা অবশ্যই বলা যায়া যে, এমন একটা সময় অবশ্যই আসবে, যখন এ দুয়ের চলা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। চাঁদ-সুরুজের উদয়-অস্তের খেলা হারিয়ে যাবে বিস্মৃতির অতল তলে। হাজারবার তপ্ত-তালাশ করলেও এর কুলকিনারার সন্ধান লাভ করা যাবে না। তবে, এ কথা সকলেরই মনে রাখা উচিত যে, সূর্যের আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির ওপর নির্ভর করেই দিন এবং বছরের যুগ এবং কালের ব্যাপ্তি বা পরিধির সীমানা চিহ্নিত করা হয়। একই সাথে চাঁদের উদয়, পরিপূর্ণতা এবং ক্ষয় ও নির্লোপ সাধিত হওয়ার বিষয়টিও আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এতে এ কথা স্পষ্টতই বলা যায় যে, মানব জাতির উত্থান-পতন, আবির্ভাব-তিরোভাব, অবস্থান-অবস্থিতি সব কিছুই যুগ ও কালের ঘূর্ণাবর্তের নাগরদোলায় প্রতিনিয়তই আন্দোলিত হয়ে চলেছে। এ চলার যেন শেষ নেই, ইতি নেই।
আমরা মুসলমান। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সা. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দ্বীন ইসলামের অনুসারী। আমাদের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত চিরন্তন সংবিধান কোরআনুল কারীম নাযিল করেছেন। মসজিদগুলোকে আমাদের ইবাদতের স্থান হিসেবে কবুল ও মঞ্জুর করেছেন। হেদায়েতের ঝর্ণাধারা হিসেবে এগুলোর মর্যাদা ও সম্মানকে বুলন্দ করেছেন। দ্বীন ইসলামের জ্ঞানী-মনীষীগণকে ইমাম হিসেবে সম্মানের অধিকারী করেছেন। এই নিরিখে আমরা দিন, মাস, বছর, যুগ ও কালের পৈঠায় কদম রেখে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছি। এ চলার শেষ কোথায় তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু যুগ ও কালের আবর্তনে আবর্তিত পৃথিবীর আধিবাসী মানুষের বিশেষ করে মুসলমানদের অবস্থারও পরিবর্তন ঘটে। মূল মঞ্চে আরোহন না করে তারা রঙ্গমঞ্চের নায়ক-নায়িকা বনে যায়। ভুলে যায় ইসলামের মহান আদর্শের কথা। পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জীবনের আকর্ষণ তখন আর তাদেরকে আকর্ষিত করে না। একই সাথে তারা আল্লাহপাকের দেয়া চিরন্তন সংবিধান কোরআনুল কারীমের দিকনির্দেশনার প্রতি আগ্রহ সহকারে তাকায় না। কোরআনুল কারীম কর্তৃক প্রদর্শিত জীবন ব্যবস্থার প্রতি হয়ে বীতশ্রদ্ধ ও অবজ্ঞার বাণ নিক্ষেপকারী। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি তাদের দেহ, মন-মগজে কোনোরূপ আন্দোলন প্রভঞ্জন সৃষ্টি করতে পারে না। বরং বিধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি তাদের নিকট এতই প্রিয় হয়ে দাঁড়ায় যে, তাদের ঘরে ঘরে সংরক্ষিত কোরআনুল কারীম পাঠ করা এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার প্রেরণা খুঁজে পায় না। ফলে এই শ্রেণীর নামসর্বস্ব মুসলমানের গৃহগুলোতে কোরআনুল কারীমের ছাপানো কপি পওয়া গেলেও, কোরআনুল কারীমের মূল শিক্ষার বাস্তবায়ন পরিদৃষ্ট হয় না। আর হয় না বলেই তারা কোরআন কেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থার শামিয়ানার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করার সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত থাকে। বরং তারা লোকাচারসর্বস্ব ধর্মবোধের নাগরদোলায় দুলতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, এই শ্রেণীর লোকেরা মসজিদগুলোকে সুরম্য প্রাসাদসম গড়ে তোলার জন্য দিশেহারা পাগল হয়ে যায়। মসজিদগুলোর অলঙ্করণ ও সৌন্দর্য বর্ধনে তারা এতই মাতোয়ারা হয়ে উঠে যে, এর জন্য বৈধ-অবৈধ পথ ও পন্থার বাছ-বিচার করার ফুরসৎ তাদের হয়ে উঠে না। যেমন করেই হোক মসজিদগুলোকে দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদতুল্য করে গড়ে তুলতেই হবে। মুসল্লি ও ইবাদতকারীদের সংখ্যা কম-বেশি যা-ই হোক না কেন, এতে কিছুই যায় আসে না। আল্লাহ ও রাসূল সা. প্রদত্ত হেদায়েতের দ্বীপ-শিখা মসজিদগুলোতে প্রজ্জ্বলিত হোক চাই না হোক, হৃদয়গ্রাহী ঝাড়-লণ্ঠন ও নিয়ন বাতির ঝলকানি অবশ্যই চমকাতে হবে। এ ছাড়া কোনোমতেই চলা যাবে না।
ঠিক এ সময়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করবে জ্ঞানী-গুণি ও আলেম শ্রেণীর দুষ্ট লোকদের অদম্য পদচারণা। তারা নিজেদের যেমন ক্ষতিকর অবস্থায় নিপতিত, তেমনি পরিবারে, সমাজে দেশ ও জাতীয় জীবনের সর্বত্র অকল্যাণ, অমঙ্গল এবং অমানিশার জঞ্জাল ছড়াতে থাকবে বদ্ধপরিকর। যা বর্তমান সময়ে মুসলিম বিশ্বেই নয়, গোটা বিশ্বের সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়। এ সময়ে খাঁটি ঈমানদারদের কাজ হলো ঈমানের রজ্জুকে কামড়ে ধরা, আঁকড়ে ধরা। এই বিশেষত্বটিই রাসূলুল্লাহ সা. এর জবানে পাকে উচ্চারিত হয়েছে। তিনি বলেছেন: ‘অতিসত্ত্বর মানব সমাজে এমন একটি যুগ, কাল বা সময় আসবে যখন ইসলামের নামটি ছাড়া আর কিছুই জারি থাকবে না। তখন মসজিদগুলোকে জাকজমকপূর্ণ সুরম্য প্রাসাদতুল্য করে গড়ে তোলা হবে। কিন্তু এর মধ্যে হেদায়েতের চিহ্নমাত্র অবশিষ্ট থাকবে না। তখনকার ওলামা বা বিদ্বান শ্রেণীর লোকেরা হবে দুষ্ট প্রকৃতির। তাদের দ্বারা ফেতনা-ফাসাদ, অশান্তি ও দ্ব›দ্ব-কলহ ব্যাপকভাবে সৃষ্টি হবে। তখন ঈমানকে বাঁচিয়ে রাখা জ্বলন্ত আঙ্গারকে মুখে রাখার চেয়ে কষ্টকর হবে।’ -বায়হাকি, শায়াবুল ঈমান।



 

Show all comments
  • সাইফ ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৯:৪৩ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সকলকে হিদায়েত প্রাপ্তদের উসিলায় হেদায়েত নসিব করুন। লেখার শেষ অংশের যে হাদিসটা বর্ননা করলেন আর মসজিদ সম্পর্কে যে কথাটা বর্ননা করলেন এটাই বর্তমান মুসলমান সমাজের চিত্র। ................... আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন