Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাজা কমিয়ে মন্ত্রিসভায় শ্রম আইন অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কোনো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ওই কারখানার শ্রমিকদের সমর্থনের হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৮-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কেউ যদি শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে, তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হবে। ১৪  থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে। আগে ১২ বছরের শিশুরা হালকা কাজের এ সুযোগ পেত। শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা  বৈঠকে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৮ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন,  ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যপদ হ্রাস করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগে আইনে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন না পেলে ট্রেড ইউনিয়ন করা যেত না। সংশোধিত আইন অনুযায়ী এখন ২০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন মিললে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনের আবেদন পাওয়ার ৫৫ দিনের মধ্যে সরকারকে নিবন্ধন দিতে হবে। আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে ৩০ দিনের মধ্যে শ্রম আদালতে আপিল করা যাবে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা এবং উৎপানশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০০৬ সালের শ্রম আইন করে সরকার। ২০১৩ সালে আইনটির ব্যাপক সংশোধন করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) চাহিদা অনুযায়ী শ্রমবান্ধব নীতি সব জায়গায় কার্যকর করতে শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।সংশোধিত আইন অনুযায়ী কারখানার শ্রমিকদের উৎসব ভাতা  দেওয়া হবে। নারী শ্রমিক প্রসূতি কল্যাণ সুবিধাসহ প্রসবের পরে আট সপ্তাহ পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকতে পারবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো কারখানায় ২৫ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য পানির ব্যবস্থাসহ খাবার কক্ষ রাখতে হবে, সেখানে বিশ্রামেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে। শ্রমিকরা ইচ্ছা করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে পরে তা উৎসব ছুটির সঙ্গে ভোগ করতে পারবেন। উৎসবের ছুটিতে কাজ করালে এক দিনের বিকল্প ছুটিসহ দুই দিনের ক্ষতিপূরণ মজুরি দিতে হবে।তিনি জানান, অপ্রাপ্ত বয়স্ক শব্দটি শ্রম আইন থেকে বাদ দিয়ে সেখানে কিশোর শব্দটি যোগ করা হয়েছে। আগে ১২ বছর বয়সী শিশুরা কারখানায় হালকা কাজের সুযোগ পেত। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে। সংশোধিক শ্রম আইন পাস হলে খাবার ও বিশ্রামের সময় বাদে টানা ১০ ঘণ্টার  বেশি কোনো শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো যাবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বলপ্রয়োগ, হুমকি প্রদর্শন, কোনো স্থানে আটক রাখা, শারীরিক আঘাত এবং পানি, বিদ্যুৎ বা গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বা অন্য  কোনো পন্থায় মালিককে কোনো কিছু মেনে নিতে বাধ্য করলে তা অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। শ্রমকিরা বেআইনি ধর্মঘটে গেলে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। ধর্মঘট করতে আগে দুই তৃতীয়াংশ শ্রমিকের সমর্থনের প্রয়োজন থাকলেও সংশোধিত আইনে ৫১ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন থাকার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংশোধিত আইন পাস হলে শ্রম আদালতগুলোকে মামলা দায়েরের তারিখ  থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রায় দিতে হবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে রায় দিতে হবে। এত দিন রায়  দেওয়ার জন্য ৬০ দিন নির্ধারিত ছিল।  শ্রম আপিল ট্রাইবুনালে কেউ আপিল করলে তা ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে আবশ্যিকভাবে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে তা শেষ করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো মালিক মহিলা শ্রমিককে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করলে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দল্ডিত হবেন। কোনো মালিক বা শ্রমিক অসৎ শ্রম আচরণ করলে এক বছর কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আগে দুই বছর সাজার সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা বিধান ছিল। বেআইনি ধর্মঘট করলে আগে এক বছর কারাদন্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হত। সংশোধিত আইনে সাজা কমিয়ে ছয় মাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সাজা আগের মত পাঁচ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। বেআইনি ধর্মঘট কোনটা হবে সংশোধিত আইনে তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা আছে জানালেও এ বিষয়ে কিছু বলেননি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলে এক মাস কারাদন্ডে দন্ডিত হবে। আগে এই অপরাধে ছয় মাস কারাদন্ড দেওয়া হত। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী সংশোধিত আইনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার মিলে একটি ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ গঠন করতে পারবে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, শ্রমিকরা কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে একলাখ টাকার বদলে দুই লাখ টাকা এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে সোয়া একলাখ টাকা পরিবর্তে আড়াই লাখ টাকা পাবেন। কোনো ব্যক্তি  কোনো শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
তিনি জানান, নতুন আইনে প্রধান পরিদর্শকের পদকে হালনাগাদ করে মহাপরিদর্শক এবং উপ-প্রধান পরিদর্শকের পদকে অতিরিক্ত প্রধান পরিদর্শক করা হয়েছে। এছাড়া যুগ্ম-মহাপরিদর্শক, উপ-মহাপরিদর্শক এবং সহকারি মহাপরিদর্শক ছাড়াও বেশি কিছু নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো বিদেশ থেকে চাঁদা গ্রহণ করলে সরকারকে জানাতে হবে।প্রতিবন্ধী শ্রমিককে বিপদজনক বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগানো যাবে না।সংশোধিত শ্রম আইন ইপিজেড এলাকার কারখানার জন্য প্রযোজ্য নয়। তবে বিদ্যমান আইনগুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা হচ্ছে।



 

Show all comments
  • উর্বশী ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:০৬ এএম says : 2
    আইনের বাস্তবায়ন হলেই হয়
    Total Reply(0) Reply
  • কাজল ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:০৬ এএম says : 3
    ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • মারুফ ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:০৭ এএম says : 0
    আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে না পারলে আইন করে কোন লাভ নেই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মন্ত্রিসভায়

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২ জানুয়ারি, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ