বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বলা হয়, যারা বেশি কথা বলে, তারা বেশি বাজে কথা বলে। বাজে কথা মানে অপ্রয়োজনীয় কথা। অপ্রয়োজনীয় কথার মধ্যে আড়ম্বর থাকে, যাকে বলা হয় বাগাড়ম্বর। বাগাড়ম্বর অনেক ক্ষেত্রে গর্ব ও অহঙ্কারের প্রকাশক। অপ্রয়োজনীয় কথার মধ্যে মিথ্যার মিশ্রণ থাকে অনেক সময়। অতিকথনে অথবা মিথ্যা কথনে বিরোধ-বিতর্ক, মনোমালিন্য সৃষ্টি হতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে বিরোধ-সঙ্ঘাত দেখা দিতে পারে। ঝগড়া বা বাদ-প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে। বাকসংযম এসব উপসর্গ, বিবাদ, বিসংবাদ ও ক্ষত থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। বাকসংযম হলো, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কথা বলা। সততা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বলা। ফজুল কথা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা। তর্ক-বিতর্ক ও বিরোধের আশঙ্কা থাকলে কথা না বাড়িয়ে নীরব থাকা। তর্ক করা মূর্খতার পরিচায়ক। বিরত থাকা বুদ্ধিমানের লক্ষণ। পৃথিবীতে এ যাবৎ যত অনিষ্ট হয়েছে, তার বেশির ভাগের জন্যই মুখ বা জিহ্বাই দায়ী। তাই বেশির ভাগ অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে হলে সকলেরই উচিৎ কম কথা বলা বা বাকসংযম প্রদর্শন করা। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, কম কথা বলা শারীরিক ও সামাজিক উভয় দিক দিয়েই উপকারী। কথা বলতে প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয়, যা শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে কম কথা বললে মানসিক অবস্থা শান্ত ও স্থির থাকে, বেশি কথা বললে যা থাকে না। কাজেই যতটা কম কথা বলা সম্ভব, ততটাই শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। হাদিসে এসেছে, ‘যে নীরব থাকবে সেই নাজাত পাবে।’
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, শ্রবণ, দৃষ্টি, অন্তরসহ প্রতিটি ক্ষমতার সঠিক প্রয়োগের ব্যাপারে মানুষ জিজ্ঞাসিত হবে। মহানবী সা. মুখ ও জিহবার অনিষ্টতার ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান করে দিয়েছেন। একটি হাদিসে আছে, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুসলমান, যার জবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’ এই হাদিস থেকে এটা স্পষ্ট যে, একের মুখ ও হাত থেকে অন্যের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে। অতএব, কারো মুসলমান হতে হলে সর্বাবস্থায় তার মুখ ও হাতকে সংযত রাখতে হবে। বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, এখানে মুসলমান হওয়ার শর্ত হিসেবে মুখ ও হাতের ব্যবহারকে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। মুখ ও হাতের অপব্যবহার কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এই হাদিস থেকে সহজেই সেটা উপলব্ধি করা যায়।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সুফিয়ান রা. এর পিতার একটি বর্ণনা থেকে জানা যায় : তিনি বলেছেন, ‘একবার আমি রাসূল পাক সা. এর খেদমতে আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল সা. আমি কোন বিষয় থেকে বেঁচে থাকব?’ জবাবে তিনি জিহ্বার দিকে ইশারা করে বলেন, ‘এটা থেকে বেঁচে থাকো। হজরত উকবা বিন আমের রা. এর একটি বর্ণনা : তিনি বলেছেন, একবার আমি রাসূল সা. এর খেদমতে আরজ করলাম, নাজাতের উপায় কী? তিনি বললেন, ‘তোমার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, তোমার ঘর যেন তোমার জন্য যথেষ্ট হয় এবং নিজের গোনাহের জন্য অশ্রুপাত করো।’ অন্য একটি হাদিসে আছে, সেখানে রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের উদর, লজ্জাস্থান ও জিহ্বার ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকে, সেই ব্যক্তি সর্বাধিক অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকে।’ একদা হজরত আব্দুল্লাহ সাকাফী নবী পাক সা. এর খেদমতে আরজ করেন, হে আল্লাহর রাসূল সা. আপনি আমার সম্পর্কে কোন বিষয়টি অধিক আশঙ্কা করছেন? রাসূল সা. স্বীয় জিহ্বা মোবারক স্পর্শ করে বললেন, ‘এটা সম্পর্কে।’
রাসূল পাক সা. এর এসব হাদিসে যেসব বিষয়ে নির্দেশনা আছে, যা অনুসরণ করলে মুখ ও জিহ্বার অনিষ্টতার পরিণতি থেকে সহজেই মানুষ রেহাই পেতে পারে। ইহকাল ও পরকালীন সাফল্য ও কল্যাণ লাভ করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।