পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
তালিকাভুক্ত অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে জিইয়ে রাখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা
অনিচ্ছা স্বত্তেও শেয়ার নিয়ে বছরের পর বছর বসে আছে বিনিয়োগকারীরা
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অস্তিত্বহীন কোম্পানিকে ঘিরে উভয় সংকট তৈরি হয়েছে। একদিকে মামলা করা না হলে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি লিকুইড করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে মামলা করার মতো কোনো বড় বিনিয়োগকারী বা পাওনাদার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া অস্তিত্বহীন এসব কোম্পানি অন্যত্র বিক্রি করায় মামলা করলে তার রায় অনুকূলে আসবে না। ফলে বিপুল পরিমাণ শেয়ার নিয়ে অনিচ্ছা স্বত্তেও বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের বসে থাকতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে অবস্থানরত ২৪টি কোম্পানি অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এসব কোম্পানি অনিয়মের চরম সীমায় উপনীত হয়েছে। তালিকাভুক্ত থাকা অবস্থায়ও এগুলোর সঙ্গে পুঁজিবাজারের কোনো যোগাযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো লাপাত্তা। আরো জানা যায়, কোনো রকম মিটিং বা এজিএম করছে না এসব কোম্পানি। অথচ আইন অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানির জন্য প্রতি বছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বা অ-তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানিই এর আওতাভুক্ত।
কোম্পানি আইন উপেক্ষা করে এসব কোম্পানী দীর্ঘদিন ধরে এজিএম করছে না। এছাড়া নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল না করা, দায়বদ্ধতা এড়িয়ে চলা ইত্যাদি অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে এসব কোম্পানি। কিন্তু কোম্পানিগুলোকে দায়বদ্ধতার ভেতর নিয়ে আসতে নীরব ভূমিকা পালন করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অন্য কোম্পানির চেয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এজিএম না করে, বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড না দিয়ে, নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল না করে এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট নিয়ম-কানুন না মেনে কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গের পাশাপাশি অনিয়মের চরম সীমায় উপনীত হয়েছে। এসব কোম্পানির জন্য অবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বর্তমানে ওটিসিতে অবস্থানরত ২৪ কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে এজিএম না করার পাশাপাশি বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মেটালেক্স করপোরেশন, বেমকো, আমাম সি ফুড, টিউলিপ ডেইরি, রাসপিট ইনক, ঢাকা ফিশারিজ, মোনা সি ফুড, জার্মান বাংলা জেবি ফুড, সালেহ কার্পেট, ডায়নামিক টেক্সটাইল, মিতা টেক্সটাইল, বিডি ডায়িং, বিডি জিপার, এম হোসেন গার্মেন্টস, চিকটেক্স, ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনাল, আজাদী প্রিন্টার্স, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, পারফিউম কেমিক্যালস, ম্যাক পেপার, ম্যাক এন্টারপ্রাইজ, রাসপিট ডাটা, বিডি লাগেজ এবং রোজ হেভেন বলপেন।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, কোম্পানি আইন উপেক্ষা করে এসব কোম্পানি বহাল তবিয়তে চলছে।
এ ব্যাপারে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে সিকিউরিটি গার্ড ছাড়া কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ২-১টি কোম্পানিতে নগণ্য পরিমাণ কর্মকর্তা পাওয়া গেলেও মালিকপক্ষের দোহাই দিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাননি। কিছু কোম্পানির সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছুই নেই। আবার কোনো কোনো কোম্পানি বিক্রি করে দিয়ে মালিকপক্ষ গা ঢাকা দিয়েছে। তবে প্রতিটি কোম্পানিরই মালিকপক্ষ খুবই ক্ষমতাবান।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিজেদের দুর্বল কোম্পানির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে তারা অন্য কোম্পানি নিয়ে ব্যস্ত। পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে তারা তালিকাভুক্ত কোম্পানি উন্নত না করে অন্য কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করেছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের লাখো বিনিয়োগকারী হাতে শেয়ার নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বহাল তবিয়তে দিন কাটাচ্ছেন কোম্পানির মালিকপক্ষ। অন্যদিকে তাদের বাহুবল, অর্থবলের কাছে নীরব দর্শক হয়ে দিন কাটাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নানা অনিয়ম করার পরও এসব কোম্পানির ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শুধু মাঝেমধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শোকজ জরিমানার চিঠি পাঠানো হয়। তাতেও কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো উত্তর আসে না। শুধু ফেরত আসে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পাঠানো শোকজ জরিমানার সে চিঠিটি।
সূত্র মতে, মেটালেক্স করপোরেশন সর্বশেষ এজিএম করেছে ১৯৯৬ সালে। বেমকো কোম্পানি এজিএম করেছে ২০০৫ সালে। এছাড়া আমাম সি ফুড ২০০৯ সালে, টিউলিপ ডেইরি ২০০৮ সালে, রাসপিট ইনক ২০০২ সালে, ঢাকা ফিশারিজ ২০০৯ সালে, মোনা ফুড ২০১০ সালে, জার্মান বাংলা জেবি ফুড ২০০৮ সালে, সালেহ কার্পেটস ২০০২ সালে, ডায়নামিক টেক্সটাইল ২০০৪ সালে, মিতা টেক্সটাইল ২০০৯ সালে, বিডি ডায়িং ২০০৯ সালে ও বিডি জিপার ২০০৯ সালে সর্বশেষ এজিএম করেছে। একই সঙ্গে এম হোসেন গার্মেন্টস ২০০২ সালে, চিকটেক্স ২০০৪ সালে, ফার্মাকো ২০০৭ সালে, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ২০০৯ সালে, পারফিউম কেমিক্যাল ২০০৪ সালে, আজাদী প্রিন্টার্স ২০০৯ সালে, ম্যাক পেপার ২০০৭ সালে, ম্যাক এন্টারপ্রাইজ ২০০৬ সালে, রাসপিট ডাটা ২০০৪ সালে, বিডি লাগেজ ২০০৯ সালে এবং রোজ হেভেন বলপেন সর্বশেষ ২০০৫ সালে এজিএম করেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব নাম সর্বস্ব অস্তিত্বহীন কোম্পানিগুলোকে জিইয়ে রেখে বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রয়োজনে আইন করে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন তারা।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।