বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুসলমানগণ আল্লাহর হুকুম প্রতিপালনে সর্বদা সময়মতো নামাজ আদায় করেন। কিন্তু হাজী সাহেবান আরাফাত ময়দানে জোহর এবং আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করেন। এটা এ জন্য যে, আল্লাহপাকের প্রিয়তম পয়গাম্বর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফাত ময়দানে জোহর এবং আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করেছিলেন, সুতরাং তার এই সুন্নাতের পায়রবি করা প্রত্যেক আম ও খাস লোকের জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে। তারপর মাগরিবের সময় এসে যায়। মুসলমানগণ সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ আদায় করার পাবন্দ। আরাফার মাঠে এই পাবন্দি বেকার হয়ে গেছে। মাহবুবে খোদা রাসূল আকরাম সা. মুজদালিফায় গমন করে মাগরিবের নামাজ এশার নামাজের সঙ্গে আদায় করেছিলেন। এ জন্য হজ আদায়কারীগণও মুজদালিফায় পৌঁছে উভয় নামাজকে একসাথে আদায় করেন। এতদসংক্রান্ত কতিপয় হাদিস নিম্নে উপস্থাপন করা হলো : (ক) মোহাদ্দেসীনে কেরাম হুজুর নবী আকরাম সা. এর বিদায় হজ সম্পর্কে হজরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিস রেওয়ায়েত করেছেন। এতে তিনি বিস্তৃতভাবে বয়ান করেছেন যে, হুজুর নবী আকরাম সা. এক আজান এবং দুই একামতের সাথে আরাফাত ময়দানে জোহর এবং আসরের নামাজ এবং মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেছিলেন। [সহিহ মুসলিম : কিতাবুল হজ্জ, বাবু হাজ্জাতিন নাবিয়্যি সা., খন্ড ২, পৃ. ৮৮৬, ৮৯২, বর্ণনা সংখ্যা ১২১৭] (খ) ইমাম জাফর সাদিক রা. স্বীয় বুজুর্গ পিতা ইমাম মোহাম্মদ বাকের রা. হতে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই হুজুর নবী আকরাম সা. আরাফাত ময়দানে এক আজান ও দু’একামতের সাথে জোহর এবং আসর নামাজ পড়িয়েছিলেন এবং এই দু’য়ের মধ্যে কোনো তাসবিহ পাঠ করেননি। আর মাকামে মুজদালিফায় এক আজান এবং দু’একামতের সাথে মাগরিব এবং এশার নামাজ পড়িয়েছেন এবং এগুলোর মধ্যে কোনো তাসবিহ পাঠ করেননি। [সুনানে আবু দাউদ : কিতাবুল মানাসিক, বাবু সীফাতি হাজ্জাতিন নাবিয়্যি সা., খন্ড ২, পৃ. ১৮৬, বর্ণনা সংখ্যা ১৯০৬] (গ) হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে সর্বদা সময়মতো নামাজ আদায় করতে দেখেছি। মুজদালিফায় মাগরিব এবং এশার দুই নামাজ ছাড়া। তিনি এই দুই নামাজ একত্রে আদায় করেছেন। [সহিহ মুসলিম : কিতাবুল হাজ্জ, বাবু এস্তেহবাবি যিয়াদাতিত তাগলিসে ফি ছালাতিস সুবহি ইয়াওমান নাহরি বিল মুজদালিফাতি, খন্ড ২, পৃ. ৯৩৮, বর্ণনা সংখ্যা ১২৮৯]
নামাজ মুমিনীনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে। (আল কোরআন : সূরা নিসা, আয়াত ১০৩)। তবুও উল্লিখিত বর্ণনার দ্বারা বুঝা যায় যে, হজের সময় আরাফাত ময়দানে নির্ধারিত সময়ের পাবন্দী ব্যতীত নামাজ একত্রে পড়ার হুকুম রয়েছে। কেননা, হাবীবে খোদা সা. এর এটাই সুন্নাত। আরাফাত ময়দানে জোহরের সময় জোহর এবং আসর একত্রে আদায় করাকে ‘জময়ে তাকদীম’ বলা হয়। আর মুজদালিফায় এশার সময় মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করাকে ‘জময়ে তাখীর’ বলা হয়। এই দুই স্থানে দুই ওয়াক্তের নামাজ একসঙ্গে পড়া সম্পূর্ণ শরিয়তসম্মত এবং তা সহিহ হাদিসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত। আরাফাত ও মুজদালেফায় হজ আদায়কারীগণ মুসাফির অবস্থায় থাকেন বিধায় ‘জময়ে তাকদীম’ এবং ‘জময়ে তাখীর’ করা তাদের জন্য সম্পূর্ণ যায়েজ ও বৈধ ব্যাপার। তবে কেউ যদি মুজদালিফা পৌঁছার আগে এবং এশার সময় হওয়ার পূর্বেই জময়ে তাখীরের নামাজ আদায় করে তাহলে তা যায়েজ হবে না। এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক, ইমাম আবু ইউসুফ, আবু সওর, ইবনুল মুনযির, সুফিয়ান সওরী ও ইমাম আবু হানীফা রহ.। আর মুজদালিফায় থাকা অবস্থায় খুব বেশি দোয়া করা, লা ইলাহা কালিমা পাঠ করা, আল্লাহু আকবার জিকির করার ফজিলত হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। তা ছাড়া এই দোয়াও বেশি বেশি পাঠ করা যায়। ‘সুবহানাল্লা, ওয়ালহামদু লিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’ (বুলুগুল আমানী মিন আসরারিল ফাতহির রাব্বানী; তুহফাতুল আহওয়াজী শরহে জামে তিরমিজী)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।