বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণনা করেন, অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে সতর্ক করে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘ওজন ও মাপ এমন একটি কাজ যে, এতে অন্যায় আচরণ করে তোমাদের পূর্বে অনেক জাতি আল্লাহর আজাবে পতিত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। তোমরাও এ ব্যাপারে পুরোপুরি সাবধানতা অবলম্বন করো।’ (ইবনে কাসীর) হজরত ইমাম মালেক (রা:) স্বীয় গ্রন্থ ‘মোওয়াত্তায়’ হজরত ওমর (রা:) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তিকে নামাজের আরকানে ত্রু টি করতে দেখে তিনি বলেছেন যে, ‘তুমি যথার্থ প্রাপ্য শোধ করোনি ’। এই ঘটনা বর্ণনা করে ইমাম মালেক বলেন, প্রাপ্য পুরোপুরি দেয়া ও ত্রু টি করা প্রত্যেক বিষয়ের মধ্যেই হয়। শুধু ওজন ও মাপের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ নয়। এতে বেঝা যায় যে, যে ব্যক্তি কর্তব্যকর্ম পূর্ণ করে না, সময় চুরি করে কিংবা কাজে ত্রু টি করে, ফাঁকি দেয়, সেও উপরোক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত, সে যে কোনো রাষ্ট্রীয় উচ্চপদের কিংবা সাধারণ কর্মসূচি হোক অথবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মে নিয়োজিত হোক না কেন।
কোরআনের বিভিন্ন আয়াত হতে বোঝা যায় যে, জিনিসপত্রের ওজন ও মাপ দুইটি সময়ে কম করা হয় অন্যের নিকট দ্রব্য কেনার সময় ও অন্যের নিকট জিনিস বেচার সময়। অসাধু ব্যবসায়ীদের সাধারণ নিয়ম এই যে, জিনিস বেচার সময় তারা ক্রেতাকে ন্যায্য মাপের ওজনে কিছু কম দেয়ার চেষ্টা করে। আবার কেনার সময় নানা ছলচাতুরী করে প্রাপ্য পরিমাণ অপেক্ষা বেশি নেয়ার চেষ্টা করে থাকে। কোরআনের আয়াতসমূহে এই দুই প্রকার দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা আল্লাহর এই চিরন্তন বিধানকে বেপরোয়াভাবে লংঘনকরত: সমাজে যে অনাচার সৃষ্টি করে থাকে তা রোধ করার জন্য আইনের শাসন প্রয়োজন। কেননা অসাধু ব্যবসায়ীরা আইনের কড়াকড়ি ব্যতীত ঠিক থাকে না।
পবিত্র কোরআনে সূরা শোআরা এর ১৮১-১৮৩ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘মাপ পূর্ণ করো এবং যারা পরিমাণে কম দেয় তাদের অন্তর্ভুক্ত হইও না। সোজা দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো। মানুষকে তাদের বস্তু কম দিও না এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করে ফেরো না।’
যারা মাপে কম করে, তাদের জন্য দুর্ভোগ, যারা লোকের কাছ থেকে যখন নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদের মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে। (সূরা আত-তাত্ফীফ, আয়াত ১-৪)
ইবনে আবিহাতেমে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত হেলাল ইবনে তাল্লেক (রা:) একদা হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) কে বললেন যে, ‘‘মক্কা-মদিনাবাসীরা উত্তম মাপ করে’। ইবনে উমর (রা:) বললেন, ‘এরূপ কেন করবে না যখন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘ওজন ও মাপে কম-বেশি করে যারা, সর্বনাশ তাদের জন্য’।”
সুতরাং যারা জিনিসপত্রের পরিমাপে কম দিয়ে ব্যবসা করে, তাদের সেই মোনাফালব্ধ অর্থ হারাম উপার্জনেরই অংশবিশেষ, যা আল্লাহর নিকট অপবিত্র ও ঘৃণীত। তাই রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন; ‘মানুষের নিকট এমন একটি যুগ আসবে, যখন তারা হালাল-হারামের কোনো তোয়াক্কা করবে না। যা হাতে আসবে তাই অর্জন করবে।’ (বোখারী) এই হারাম মাল ও হারাম উপার্জন সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘যে দেহে হারাম খাদ্য প্রবেশ করেছে তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না ’। (মেশকাত)
এই হারাম হতে রক্ষা পেতে হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাধারণ লেনদেনে যে সকল দুর্নীতি ও অনাচার বিদ্যমান সেগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং আইনের মাধ্যমে কঠোরভাবে সেগুলোর মূলোপাটন করতে হবে। বৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যকে বৈধভাবে চালু রেখে এই হারাম পদ্ধতি হতে মুক্ত রাখা সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।