পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আব্বু ফিরে আসো, তোমার সাথে স্কুলে যাবো’, ‘চাচ্চু ফিরে আসো, আমাকে আদর করো’, বাবা ফিরে আসো তোমার মা অপেক্ষায়’। ‘আমাদের কারো প্রতি অভিযোগ নেই, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন’। উপরের আর্তনাদগুলো কোন নাটিকা মঞ্চের ঝোলানো প্লাকার্ড নয়। বুকের ভেতরে তীর বিদ্ধকারী হৃদয় হন্তারক এ সব আর্তনাদ ছিল স্বজনহারা অসহায় পরিবারের। গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়েদের ডাক’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গুম হওয়া স্বজনদের ফেরত পেতে এমন আর্তনাদ ছিল স্বজনহারা শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধ পিতা-মাতার।
গতকাল বিশ্বজুরে পালিত হয়েছে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ দ্যা ভিকটিমস অব এনফোসর্ড ডিসঅ্যাপিয়ারেনসেস।’ বাংলাদেশেও প্রতিবছর এই দিনে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়েদের ডাক’ জাতীয় প্রেসক্লাবে এ দিবসটি পালন করে। আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষ্যে প্রেসক্লাবে আসা স্বজনহারা পরিবারগুলো বলেন, আমাদের কারও প্রতি কোন অনুযোগ, অভিযোগ নাই। শুধু আমাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে দিন।’ গুম হওয়া স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারের কাছে এ ভাবেই আকুতি জানিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, গতকালের আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না গুমকারীদের ভোট না দিতে গুম হওয়া পরিবার ও স্বজনদের প্রতি অনুরোধ জানান।
গুম হওয়া সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা বড় কষ্টের। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকা আরও কষ্টের। আমরা সরকারের কাছে আহবান জানাই, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিতে ব্যবস্থা নিন।’
গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘মায়ের সন্তান ফিরে আসুক মায়ের কোলে। গুম হওয়া সব সন্তানদের তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন। আমাদের কারও প্রতি কোন অভিযোগ নেই। শুধু চাই সন্তান ফিরে আসুক। সন্তান ফিরে আসবে এই আশায় পথ চেয়ে বসে আছি।
অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ভুল করে গুম করা হয়নি। জেনে শুনেই গুম করা হয়েছে। স্বজনহারা মানুষের কান্না কী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানে যায় না? অবশ্যই যায়। মানুষ গুম হচ্ছে এটিও সরকার জানে। তবুও তারা কিছু করেন না। সরকার বুঝে শুনেই গুম করছে মানুষ। এই মানুষেরা রাজনৈতিক কারণেই গুমের শিকার হয়েছে। তাই তাদের খুজে বের করতে সরকার উদাসীন। রাজনীতিতে গুমের চাষ জিইয়ে রাখা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকার সব থানার ওসি যদি বলেন তারা রাজনৈতিক কাজে সরকারকে সহায়তা করবেন না তবে সরকার থাকতে পারবে না। তাই বাহিনীর লোকদের বিরুদ্ধে তুলে নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও বিচার হয় না। সুষ্ঠু ভোট হলে এই সরকার আগামীতে পুলসিরাত পার হতে (ক্ষমতায় যেতে) পারবে না। তাই ভয় দেখাতে গুমের নিবিড় চাষ করা হচ্ছে।
মান্না আরো বলেন, ‘সব অধিকারই তারা কেড়ে নিয়েছে। তাদের ভোট দেব না। যারা ক্ষমতায় গেলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেবে, তদন্ত করে গুম হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের খুনীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আশ্বাস দেবে তাদেরকে ভোট দেব।
মান্না বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে মানুষ গুম হচ্ছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে স্বরাষ্ট্রন্ত্রী এত বড় মিথ্যাচার করলে মানুষ তো তার পদত্যাগ চাইতেই পারে। জনগণের মুক্তির জন্য, হারানো স্বজনদের ফিরে পেতে সবাইকে একসাথে লড়াই করার আহবান জানান তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, কেউ যদি প্রেম করে ব্যর্থ হয়ে বা ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে গুম হয়ে যায় তবে তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। যদি তিনি খুঁজে বের করতে না পারেন তবে মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। কোন সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বাহিনী যখন বন্দুকযুদ্ধ করে, মানুষ খুন করে তখন এ ব্যবস্থা দিয়ে ভাল কিছু সম্ভব না। তিনি বলেন, জনগন এদের সাথে নেই। তারাও জনগণকে পরোয়া করে না। তারা তাই ডান্ডা মেরে মানুষকে ঠান্ডা রাখতে চায়। দেশে যদি নির্বাচন না থাকে তবে সরকার লাগামহীন হয়ে যায়। ভোটের অধিকার না থাকায় তারা এখন লাগামহীন। ভোটের অধিকার এ সরকারের কাছ থেকে আদায় করতে হবে।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, এসব গুম-খুন হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। ভয় দেখাতে এসব করা হচ্ছে যাতে মানুষ রাস্তায় না নামে। ঐক্যবদ্ধ লড়াই করে গুম-খুন বন্ধ বিদায় করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রেমের কারণে মানুষ গুম হয়ে যায়, ব্যবসায় বিফল হয়ে গুম হয়ে যায় তা হলে স্বজন হারাদের পরিবার মামলা করতে গেলে থানায় মামলা নেওয়া হয় না কেন? গুমের সাথে রাষ্ট্র সম্পৃক্ত না থাকলে অবশ্যই মামলা নেওয়া হত। দেশে এমন পরিস্থিতি যে, কখন কাউকে তুলে নেওয়া হবে কেউ বলতে পারে না।
বাংলাদেশের বিপবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গুমের অধিকাংশ ঘটনার সাথে সরকারের বাহিনী জড়িত। গুমসহ নানা ঘটনার বিচার না হলে ভবিষ্যতে ট্রাইবুনাল করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
মানবাধিকার সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা অনেক দীর্ঘ না হলেও খুব ছোট নয়। তাদের মতে, বাংলাদেশে গুমের তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্য থেকে রয়েছে সাধারণ মানুষ। এই তালিকায় সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলী, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান ছাড়াও অনেক রাজনৈতিক কর্মীসহ নানা পেশার মানুষ।
‘মায়েদের ডাক’ এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সাল থেকে দেশে গত পাঁচ বছরে গুম, বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭২৭ জন। এছাড়া এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের হিসেব মতে, গত ৯ বছরে গুম হয়েছে ৪৩২ জন, যার মধ্যে সন্ধান মিলেছে ২৫০ জনের। এসব সংগঠনের মতে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ ফেরত এলেও তাদের অধিকাংশ এখনও নিখোঁজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।