Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নওয়াপাড়ায় অপরাধীদের আস্তানা ‘কার্গো’

কার্গো থেকে পানিবাহী ট্রাক সড়ক ধ্বংস ও দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে

আশাশুনি (সাতক্ষীরা) থেকে জি এম মুজিবুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন স্থানের অপরাধীরা নওয়াপাড়া গ্রামে বেতনা নদীতে পানি সরবরাহের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা কার্গোতে আশ্রয় নিয়ে থাকে। মদ-গাঁজা-ইয়াবা সেবন ও বিক্রয় করার পাশাপাশি চুরি-ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয় এখান থেকে। অতিরিক্ত পানি ভরে ট্রাক চলাচল করে আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়ক ধ্বংস ও সড়কে দুর্ঘটনার পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
নওয়াপাড়া গ্রামে পাশ দিয়ে বেতনা নদী প্রবাহিত। মাঝখান দিয়ে আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়ক। তিনটি কার্গো সাগর থেকে লোনা পানি নিয়ে গ্রামের মাঝখানে বেতনা নদীতে নোঙর করে ট্রাকে পানি লোড দিয়ে থাকে। সড়কের পাশে ট্রাক দাঁড় করিয়ে কন্টেইনারে পানি ভরা হয়। একটি ছোট (পাঁচটন) ও দু’টি বড় ট্যাংক (কমপক্ষে সাড়ে সাতটন করে) থাকে ট্রাকে। প্রতি ট্রাকে কমপক্ষে ২০-২৫ টন করে পানি ভরা হয়। ট্রাকের ওজন ১২-১৪ টন। ফলে ৩২ টন থেকে ৩৯ টন ওজন নিয়ে ট্রাক চলে থাকে। সড়কটিতে সর্বোচ্চ ২৫ টন ওজন নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারে। কিন্তু সে নির্দেশ অমান্য করায় সড়কটি নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া ট্রাক থেকে পানি পড়তে পড়তে যাওয়ায় সড়কের ক্ষতির পাশাপাশি পথচারীরা সমস্যায় পড়ে থাকেন। ট্রাকগুলো বেশি লোড নেয়ার কারণে সড়কের মাঝখান দিয়ে চলাচল করা ও অন্য যানবাহনকে পথ না দেয়ায় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার মধ্যে দুর্ঘটনার ফলে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাও ঘটিয়েছে এই ট্রাকে। এত কিছুকে ডিঙিয়ে এলাকাবাসীকে হতবাক করে কার্গো তিনটি নিয়ম অমান্য ও অপরাধ তৎপরতা পরিচালনা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিন গেলে এলাকাবাসী ও কার্গোতে কর্মরতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কার্গো এমভি কয়রা মাস্টার সেলিম, বরগুনা ও ড্রাইভার আরিফুল, চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এমভি রিদুলের মাস্টার ফজুল পিরোজপুরের বাসিন্দা এবং এমভি বেলায়েতের মাস্টার নজরুল, খুলনার বাসিন্দা। এ ছাড়া কার্গোতে আরো শ্রমিক-কর্মকর্তা রয়েছে। যাদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায়। কার্গোতে নিয়মিত যাতয়াত ও গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করে থাকে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীরা। এলাকাবাসীর ধারণা, কার্গো থেকে ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য লেনদেন ও ক্রয়-বিক্রয় করা হয়ে থাকে। এদের কেউ কেউ চুরি ডাকাতির সাথে জড়িত এবং এরা ডাকাত দলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে এখানে বসে অপরাধমূলক কর্মকান্ড ও ডাকাতির পরিকল্পনা করে এলাকায় অপরাধ তৎপরতা চালিয়ে আসছে। কার্গোর ড্রাইভার আরিফুল তাদের কার্গোয় দু’মাস আগে কয়েকজন মাদকসেবীকে আর না আসতে বারণ করার পর আর আসে না বলে দাবি করেন। মাস্টার ফজলু তার কার্গোয় তাদের আসতে দেয়া হয় না বলে দাবি করেন। তবে অন্যরা বলেন, তাদেরকে বারণ করলে হুমকিধামকি দেয়, ফলে ভয়ে কিছু বলা থেকে তারা বিরত রয়েছেন। তবে নিয়মিত তাদের আনাগোনার কথা এলাকার প্রবীণ আ.লীগ নেতা জলিল উদ্দিন ঢালীসহ উপস্থিত অনেকে স্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, কার্গোয় অপরাধমূলক কর্মকান্ড ও মাদকের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
নওয়াপাড়া গ্রামের বিলে ডাকাতদলের আগমনের খবর পেয়ে গ্রামের শত শত মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কার্গো থেকে কয়েকজন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীর অপর পারে গিয়ে ওঠে। শব্দ শুনতে পেয়ে মানুষ সমবেত হলে কার্গো থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় রওশন, গোবিন্দ ও ডালিম নামে আরো তিন মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধ জগতের সাথে জড়িতদের গ্রামবাসী আটক করে। কৌশলে গোবিন্দ ও ডালিম পালিয়ে গেলেও রওশনকে পুলিশে দেয়া হয়। গ্রামবাসীর ধারণা, এদের মধ্যে ডাকাত দলের সদস্যরা থাকতে পারে। পুলিশ রওশনকে আদালতে প্রেরণ ও পালিয়ে যাওয়া তিন জনের নামে মামলা করেছেন। রওশনের স্ত্রী তাছলি, গভীরের মেয়ে জানু, হাকিমের পুত্র রুস্তম ও মনোয়ারার পুুত্র মনিরুল রওশনকে ধরিয়ে দেয়ার কাজে সাহায্যকারীদের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি যারা রওশনকে থানায় দিয়েছে জামিনে আসার পর তাদের মজা দেখে নেয়া হবে বলে আস্ফালন করছে। এলাকাবাসীর দাবি, নওয়াপাড়ায় কার্গো ভেড়ানো বন্দ করা হোক। সড়ক দুর্ঘনা রোধ ও সড়ক নষ্ট বন্ধ করা হোক। মাদক ক্রয়-বিক্রয়, মাদকের আসর বন্ধ ও অপরাধ প্রবণতা দূর করতে নিরাপদ ঘাঁটি কার্গো হঠানো হোক।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাফফারা তাসনীন ও পুলিশ পরিদর্শক বিপ্লব কুমার দেবনাথকে অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ