Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝাউবাগান কেটে স্থাপনা!

কক্সবাজার থেকে বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ৬:৫২ পিএম

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দখল করে ঝাউবাগান কেটে স্থাপনা নির্মাণের পাঁয়তারা করছে একটি চক্র। সমুদ্র সৈকতের বালিকা মাদরাসা পয়েন্টে ঝাউবন কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে এই স্থাপনা। ইতোমধ্যে ওখানে প্রায় এক একর ঝাউবন ঘিরে ফেলা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ৩টি ঘর। এ স্থাপনা নির্মাণের কারণে একদিকে যেমন পর্যটকের স্বাভাবিক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা। এর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যই প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছেন কক্সবাজারের সচেতন মহলসহ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় এই পাঁয়তারা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। সমুদ্র সৈকত রক্ষা ও সংরক্ষণে ২০১১ সালে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা রয়েছে। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অমান্য করে এ স্থাপনাটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্র সৈকতের মাদরাসা পয়েন্টে কবিতা চত্বর এর উত্তর পাশে প্রায় এক একর ঝাউবন দখল করে তিনটি কাঠের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকটা জেটির আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে কাঠের একটি উচু ফ্লাইওভার। এসব নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে ঝাউগাছ। নির্মাণ শ্রমিকেরা বলেছে, এখানে রেস্টুরেন্ট করা হচ্ছে । পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশরাফ বলেন, শুনেছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৈকতে এ স্থাপনাটি নির্মাণ করা হচ্ছে, কিন্তু এ স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। পরিবেশ সংগঠন ইয়েস কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, সমুদ্র সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও সৈকত এলাকা সংরক্ষণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে আন্দোলন করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস অ্যাড পিস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে সৈকত রক্ষায় একটি রিট মামলা দায়ের করা হয়।
ওই মামলার প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৭ জুন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সৈকত রক্ষা এবং সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। তিনি বলেন, সমুদ্র সৈকত দখল করে একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন আমরা দেখছিনা। কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন-কলাতলী সাগরতীরে প্রকৃতি উপাদানে তৈরি তিনটি পরিবেশ সম্মত রেস্টুরেন্ট ছিল। যেখানে পর্যটকের বিচরণ ছিলও বেশ। বিভিন্ন দাবী ও সাগরতীরে হওয়ায় ২০১১ সালের দিকে ওই তিনটি রেস্টুরেন্ট উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এছাড়া সাগরতীরে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মানের অনুমতিও নেই। সেখানে কিভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেস্টুরেন্টে আদলে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। তাও আবার পর্যটক চলাচলের রাস্তা ও সাগরতীরে হাঁটার জায়গার উপর। পর্যটকদের জন্য এটি বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা বলে তিনি মনে করছেন।
কক্সবাজার সম্পদ আন্দোলন রক্ষা কমিটির অন্যতম নেতা নাজিম উদ্দিন বলেন- বিএনপি সরকারের আমলে সৈকতের ডায়াবেটিস পয়েন্টে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছিল। সেতুটি ঝাউবনের ভিতর দিয়ে প্রায় সাগরের কয়েকশ’ ফুট পর্যন্ত নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। ওই সময়ে কক্সবাজারবাসীর আন্দোলনে বিএনপি সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু এখন ওই সেতুটির মতো সাগরতীর ও সাগরে চলাচলের রাস্তার উপর স্থাপনা নির্মাণ করছে প্রশাসন। এ বিষয়েও আমরা আন্দোলনে যাবো।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, সৈকতের মাদরাসা পয়েন্টে একটি চৌকি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। রেস্টুরেন্ট কিংবা অন্য কোনো স্থাপনা নয়। উল্লেখ্য বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় জনৈক ইউসুফ আব্দুল্লাহ একজন ক্ষমতাশালী মন্ত্রীর আশীর্বাদে তখন সৈকতে ঝাউবাগান কেটে জেটি নির্মাণ করেছিল। কক্সবাজারের সচেতন মহলের প্রতিবাদে সেই জেটি ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল প্রশাসন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ