বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হাজী সাহেবান মানাসেকে হজ আদায়ের প্রাক্কালে এবং এই পৃথিবীতে বসবাসকারী মুসলমানগণও ঈদুল আজহার সময় পশু যবেহ করে সুন্নাতে ইব্রাহিমীর স্মরণ উদযাপন করেন। এই সকল কাজ মূলত: সেই দৃশ্যের স্মরণকে তাজা করার জন্য করা হয়, যখন আল্লাহর হুকুম প্রতিপালনে হযরত ইব্রাহীম আ. স্বীয় কলিজার টুকরা হযরত ইসমাঈল আ. কে কোরবানি করার জন্য এই ময়দানে নিয়ে এসেছিলেন। এই বৃহৎ কোরবানি দরবারে ইলাহিতে এতখানি মকবুল হয়েছিল যে, আজও প্রতি বছর হাজী সাহেবান এই কোরবানির স্মরণে পশু কোরবানি করে থাকেন। কোরবানি দেয়ার এই সদিচ্ছা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের নিকট এতই পছন্দীয় হল যে, একে শুধু কেবল হজের মানাসেকের মধ্যেই সীমিত রাখা হয়নি বরং প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমানের ওপর তা আবশ্যিক সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, আল্লাহর রাস্তায় তারা যেন কোরবানি করে। ইমাম ওপর এভাবে পর্যালোচনা করেছেন: হযরত ইসমাঈল আ. এর পরিবর্তে বড় একটি মোটা তাজা বকরা ওয়াদিয়ে ছাবীর (মক্কার পাহাড়) হতে নামিয়ে আনা হয়েছিল। কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা এ সম্পর্কে বলেন এবং আমি একটি বহু বড় কোরবানির সাথে তার ফেদিয়া করে দিয়েছি। এই আয়াতে কোরবানির জানোয়ারকে হযরত ইসমাঈল আ. এর ফেদিয়ার সাথে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। -সূরা সাফফাত: আয়াত ১০৭। কিন্তু হযরত ইব্রাহীম আ. এর তরীকার ওপর যবেহ করা কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য সুন্নাত নির্ধারণ করা হয়েছে। ইমাম হাসান বসরী মুসলমানদেরকে খেতাব করে বলেছেন, তোমাদের জানা উচিত যে, কোরবানির পশু মৃতের মন্দগুলোকে দূর করে দেয়। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা কোরবানি আদায় করো। [তাবারী: তারিখুল উমাম ওয়ালমূলক, খন্ড ১,পৃ. ১৬৭; ফাকেহী: আখবারে মক্কা ফী কাদিমিদ দাহরি ওয়া হাদিছিহী, খন্ড ৫, পৃ. ১২৪] এই আমল নিঃসন্দেহে হযরত ইব্রাহীম আ. এবং হযরত ইসমাঈল আ. এর বৃহৎ কোরবানির স্মরণ উদযাপন করা (Celebration) মাত্র। যেন উম্মতে মুসলিমা ধর্মের প্রাণশক্তির সাথে সংযুক্ত থাকে এবং আল্লাহর রাস্তায় জান ও মাল উৎসর্গ করার মধ্যে সব সময় তাসলীম ও রেজার হালতে নিমগ্ন থাকে।
কোরবানির জানোয়ার আল্লাহর নিদর্শন: এমনিতে দুনিয়াভর প্রত্যেক স্থানে আল্লাহর রাস্তায় পশু যবেহ করা হয়। কিন্তু হযরত ইসমাঈল আ. এর সম্পর্ক হওয়ার কারণে কোরবানির জন্য যবেহ করার জানোয়ারের মর্যাদা ভিন্ন এবং পৃথক হয়েছে। এগুলোকে এই খাস সম্পর্কের কারণে আল্লাহর নিদর্শনের দরজা দান করা হয়েছে। যেমন আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন: কোরবানির বড় জানোয়ারগুলোকে (অর্থাৎ উট, গাভী ইত্যাদি) তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। -সূরা হাজ্জ: আয়াত ৩৬। আজও সুন্নাতে ইব্রাহিমীর সেই ঘটনাবলীকে কল্পনায় আনয়ন করে কোরবানি করা হয়, যা দ্বারা আল্লাহর পছন্দীয় আমল তার রেজামন্দি হাসিলের উপায় হয়ে যায়।
বস্তুতঃ বিশ্বজোড়া মুসলিম মিল্লাত ঈদুল আযহার প্রাক্কালে যে পশু যবেহ করে থাকে, এর পেছনে রয়েছে একটি দীর্ঘ মর্মান্তিক ইতিহাস। সে ইতিহাস নবীকুল শিরোমণি হযরত ইব্রাহীম আ. এবং তার প্রাণাধিক পুত্র হযরত ইসমাঈল আ. কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। হযরত ইসমাঈল আ. পিতা ইব্রাহীম আ. এর অত্যন্ত প্রিয় ও প্রাণাধিক সন্তান ছিলো। আল্লাহতায়ালা পিতা পুত্রকে অধিকতর ও উন্নততর সম্মান ও মর্যাদা দানের উদ্দেশ্যে তাদের উভয়কে এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করলেন। হযরত ইব্রাহীম আ. কে নির্দেশ দিলেন তার প্রিয়তম পুত্রকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করতে। পিতা পুত্রকে এ কথা বললে পুত্র বললেন: হে পিতা, আপনি নির্দেশ পালনে তৎপর হোন, আল্লাহর ইচ্ছায় আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন। তারপর হযরত ইব্রাহীম আ. পুত্রকে যবেহ করতে প্রস্তুত হলেন। আল্লাহপাক সন্তুষ্ট হয়ে হযরত ইসমাঈল আ. এর পরিবর্তে হযরত ইব্রাহীম আ. কে একটা মোটা তাজা জন্তু যবেহের জন্য উপহার দিলেন। তার এই আদর্শের বাস্তব অনুসরণের প্রমাণ পেশ করার উদ্দেশ্যেই প্রত্যেক বৎসর ঈদুল আযহার সময়ে পশু কোরবানি করার রেওয়াজ চালু হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।