Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কম খান বেশি বাঁচুন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কৃত্রিম খাদ্য-সঙ্কটের কথা বাদ দিলে বলতে হয়, পৃথিবীতে মানুষ যত না- না খেয়ে মরে, তার চেয়ে বেশি মারা যায় অধিক খাওয়ার কারণেই। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলেই সাধারণত মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কিংবা ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিস সংক্রান্ত অন্যান্য রোগে মৃত্যুবরণ করতে দেখা যায়।
অতিভোজের ফলে বাড়তি মেদ ও অতিশয় মোটা হয়ে যাওয়ার দরুণ দুর্বিষহ জীবনযাপনের নজিরও পৃথিবীতে কম নয়। এ ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি খুবই প্রণিধানযোগ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার দেয়া পবিত্র সামগ্রী থেকে আহার করো, তবে এতে সীমা লঙ্ঘন করো না। তা হলে তোমাদের ওপর আমার অসন্তোষ নেমে আসবে। আর আমার অসন্তোষ বা ক্রোধ যার ওপর আপতিত হয়, সে বরবাদ হয়ে যায়।’ (সূরা ত্বহা (২০) : ৮১)
বেশি খাওয়ার ফলে যত রোগ হয় সে সবকেও আমরা মহান আল্লাহর গজব বা ক্রোধ তথা প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে আখ্যায়িত করতে পারি। হজরত মিকদাম রাজি. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, মানুষ যত পাত্র পূরণ করে, তার মধ্যে সবচেয়ে মন্দ পাত্র হচ্ছে তার পেট। আদম সন্তানের জন্য তো কয়েকটি লোকমাই যথেষ্ট। যা তার শিরদাঁড়া সোজা রাখতে পারে। আর যদি তৃপ্ত হয়েই খেতে হয়, তা হলে পেটের এক ভাগ খাদ্য, এক ভাগ পানীয় আর এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্য রাখবে। (সুনানে তিরমিজী : ২/৬৩)
চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলে, একজন মানুষের বয়স ও শ্রম অনুযায়ী খাবারের তারতম্য হয়ে থাকে। যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি খাবার মানুষ কেবল লোভ বা স্বাদ গ্রহণের জন্য গ্রহণ করে থাকে। অনেকে পেট ভর্তি করার অনুভ‚তি না হওয়া পর্যন্ত খেয়ে যেতে থাকে। কেউ কেউ বেশি খেয়ে পেট বড় করে ফেলে পরে আর বেশি না খেলে সে স্বস্তি পায় না। এ সবই না জানার কারণে হয়। অথচ বিশ্লেষকরা বলেন, প্রয়োজনীয় খাদ্যটুকু ছাড়া বাকি খাবার মানুষের কোনো কাজে আসে না। সেটুকু বরং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অব্যাহতভাবে পেট ভরা থাকলে হজমশক্তিসহ মানবদেহের অনেক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। মাঝে মাঝে রোজা রাখলে মানুষ সবদিক থেকে সুস্থ থাকে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা রোজা রাখো, সুস্থ থাকবে।’ (আত তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/৮৩)
ইসলামী জীবনে প্রতি বছর এক মাস ফরজ রোজা ছাড়াও বছরব্যাপী সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক বা সাময়ীক নফল রোজার প্রশংসনীয় রীতি চালু রয়েছে।
হজরত জাবের রাজি. ও হজরত ইবনে উমর রাজি. হজরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট, দু’জনের খাবার চারজনের জন্য আর চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট। (সুনানে তিরমিজী : ২/৪)
এ হাদিস থেকেও মানুষের খাবারের সঠিক দর্শনটি বোঝা যায়। স্বাভাবিক ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রাপ্ত খাবারের ওপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তৃপ্ত হয়ে পেটপুরে খেয়ে উদাস বা অলস হওয়া চলবে না। অতিরিক্ত খাবার খেয়ে অসুস্থ হওয়া চলবে না। অর্থ ও খাদ্যদ্রব্যের অপচয় করা যাবে না। নিজে বেশি খেয়ে খাদ্য-সঙ্কট সৃষ্টি করা যাবে না। যে খাবার ক্ষুধা নিবৃত্ত করে, মানুষকে সচল ও কর্মঠ রাখে, ইবাদতে আলস্য আনে না, সেটাই উত্তম খাবার। এ জন্য বলা হয়েছে, দু’জনের পরিতৃপ্তির খাদ্য চারজনের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট।
এ তো গেল সাধারণ খাবারের পরিণাম সম্পর্কিত গড় হিসাব। আর অপচয় বা অহঙ্কারের প্রেরণায় তৈরি খাবার নিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ব্যয়বহুল আর বাড়তি মূল্য বিচারে একজনের খাবারের ব্যয় পাঁচ-দশ-ক্ষেত্রবিশেষে ২০ সদস্যের একটি পরিবারের জন্যও যথেষ্ট হতে পারে। দামি হোটেল কিংবা ভোজসভার খাবার-দাবার যে কী পরিমাণ বেশি খাওয়া হয় তাতে কতটুকু বাহুল্য ঘটে কিংবা কত কত খাদ্যসামগ্রী অপচয় এবং কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয় তার হিসাব বের করলে বোঝা যাবে, কেন পবিত্র কোরআন অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই আখ্যা দিয়েছে, আর পৃথিবীর ২০ ভাগ মানুষ কীভাবে ৮০ ভাগ সম্পদ ভোগ করছে। খাদ্যদ্রব্যের বেলায় দুনিয়ার গরিবের ব্যবধানের গড়ও প্রায় অভিন্নই হবে। অথচ ইসলাম বলেছে, সে ব্যক্তি মুমিন নয় যে নিজে পেট পুরে খায় আর তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে। অধিক পানাহার বা পেটপূজা সম্পর্কে হজরত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সতর্কবাণী এই হাদিস থেকেও স্পষ্ট।
এক ব্যক্তি হজরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে এসে ঢেঁকুর তুললে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমাদের সামনে এসে ঢেঁকুর তোলা তোমার ঠিক হচ্ছে না। ঢেঁকুর সংযত করো। কেননা, এ জমিনে যারা বেশি বেশি পেটপুরে খায় পরজীবনে (কিয়ামতের দিন) তারা বেশি ক্ষুধার্ত থাকবে।’ (সুনানে তিরমিজী : ২৪৭৮; সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৩৫০)



 

Show all comments
  • সাইফ ২৮ আগস্ট, ২০১৮, ৯:৫৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা ইনকিলাবের সংশ্লীষ্ট সকলকে এবং লেখক সাহেবকে এর উত্তম প্রতিধান প্রধান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Al Amin ২৮ আগস্ট, ২০১৮, ১১:৫৭ এএম says : 0
    Thank you very much to Inqilab news paper for your nice post it's really helpful for human
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন