Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেষ বেলায় আরপিও সংশোধনে ইসির তোড়জোড়, রবিবার সভা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৮, ৯:১২ পিএম

হঠাৎ করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ঈদের পর সরকারি অফিস খোলার প্রথমদিন রবিবারই (২৬ আগস্ট) সভায় বসছে কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আরপিওতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথা ইভিএমে (ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোটগ্রহণের বিধান যুক্তসহ কয়েকটি বিষয়ে সংশোধন আসছে। পাশাপাশি আইনটি ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় রূপান্তর করা হচ্ছে।
জানা গেছে, গত বছরের জুলাইয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনায় ইসি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরপিওসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছিল। সে অনুযায়ী কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে গঠিত ইসির আইন সংস্কার কমিটি আরপিও সংশোধনের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে গত ১২ এপ্রিল কমিশন সভায় উত্থাপন করে। তবে কমিশন তা অনুমোদন না করে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠায়। এরপর আরপিও সংশোধনীর বিষয়টি আড়ালে চলে যায়। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে ইসির মুখপাত্র ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের কণ্ঠেও। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির আরপিও সংশোধনীর পরিকল্পনা নেই। অবশ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হলে আরপিও সংশোধনীর প্রয়োজন পড়বে বলে উল্লেখ করেন হেলালুদ্দীন আহমেদ।
এদিকে আরপিও সংশোধনে ‍দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি না দেখা গেলেও গত ১৯ আগস্ট ইসির আইন সংস্কার কমিটির প্রধান কবিতা খানম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আরপিও সংশোধনীর প্রসঙ্গটি আবারও সামনে আনেন। তিনি জানান, কমিশন আগামী অধিবেশনে আরপিও সংশোধনীর চেষ্টা চালাচ্ছে।
জানা গেছে, কবিতা খানমের বক্তব্যের পরদিনই ২০ আগস্ট কমিশন জরুরি বৈঠক করার নোটিশ দিয়েছে। ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাহ আলমের সই করা নোটিশ অনুযায়ী আগামী ২৬ আগস্ট সকাল ১০টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সভাপত্বিতে ওই বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। বৈঠকের এক নম্বর এজেন্ডায় আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ইসি আরপিও সংশোধনীর জন্য সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব একেএম মোহাম্মদ হোসেনকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পরামর্শক সম্প্রতি ইসির কাছে তার সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছেন।
অবশ্য ইসির পরামর্শন সাবেক অতিরিক্ত সচিব কেএম মোহম্মদ হোসেন এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনের কেউ নই। আমার পেশার অংশ হিসেবে বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। ফলে এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করার কোনও সুযোগ নেই।’
কমিশনার কবিতা খানম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের আইন সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয়ের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। আইন পরামর্শকও এ কাজ করছে। ইভিএমের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ কিছু বিষয় রয়েছে।’
আগামী রবিবারের বৈঠকে আলোচনার জন্য বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে কবিতা খানম বলেন, ‘সংশোধনীর চিন্তা থেকেই বিষয়টি বৈঠকে তোলা হচ্ছে। আমি মনে করি, যে সময় হাতে রয়েছে তাতে আরপিও সংস্কার সম্ভব। সংস্কার না হওয়ারও কোনও কারণ দেখছি না। তবে সব সিদ্ধান্ত ইসির ওপর নির্ভর করছে। কমিশন যেভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই বাস্তবায়ন হবে।’
ইভিএম থাকার বিষয়টি জানালেও অন্যান্য সংশোধনীর প্রস্তাবনার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি এই কমিশনার। তিনি বলেন, ‘কমিশনের কিছু পরামর্শ ছিল। আমরা সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে এবং যুগের চাহিদার বিষয়টি চিন্তা করে সংশোধনী প্রস্তাব করেছি।’
ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে থাকায় আগামী রবিবারের বৈঠকে তিনি থাকতে পারবেন না বলেও জানান এই কমিশনার।
এদিকে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সময় কম হলেও কমিশন চাইলে এই সময়ের মধ্যেও আরপিও সংশোধন সম্ভব। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সংসদ অধিবেশন শুরুর প্রসঙ্গটি টেনে তারা বলেছেন, অধিবেশন শুরুর আগে এখনও দুই সপ্তাহের বেশি সময় রয়েছে। ফলে এর মধ্যেই কমিশনে সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং ও মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করানো সম্ভব।
আসন্ন অধিবেশনের মাসখানেকের মতো চলতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়ে ইসির কর্মকর্তারা জানান, সংসদে বিল ওঠার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই তা আইন আকারে পাস করা সম্ভব। ফলে কমিশন চাইলে আর সরকারের সন্মতি পেলে আরপিও সংশোধনীতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।
১৯৭২ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ১১ বার সংশোধন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২০৯টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (অধ্যাদেশ) (সংশোধন) আইন ২০১৩ বিল পাস হয়। এতে ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা করা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণা করাসহ কিছু সংশোধন এসেছিল।
এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), অনলাইন মনোনয়নপত্র জমা, জামানত বাড়ানো, স্বতন্ত্র প্রার্থিতা সহজীকরণসহ অন্তত ৩৫টি প্রস্তাব নিয়ে বসেছিল ইসির আইন সংস্কার কমিটি। তবে আগামী রবিবার ইসিতে যে সংস্কার প্রস্তাব উঠবে সেখানে এই ৩৫টি প্রস্তাবনার মধ্যে কিছু কাটছাট হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থীতা সহজীকরণের যে উদ্যোগ ছিল সেটা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এটির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থাই বহাল রাখার প্রস্তাব হচ্ছে। এছাড়া ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা করলেও ইসি সেখান থেকে সরে আসছে। তবে, নির্বাচনি আচরণবিধিতে স্যোশাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে একটি গাইডলাইন থাকবে বলে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসির


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ