পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট
দৌলতদিয়ায় নদী পারাপারের অপেক্ষায় শত শত গাড়ি
সিডিউল বিপর্যয়ে কমলাপুরে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা
ভোগান্তি নিয়ে ঘরে ফিরছে মানুষ। ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটে আটকা পড়ে শত শত গাড়ি। ভুক্তভোগি কয়েকজন যাত্রী জানান, ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ার পর গাজীপুর পার হতেই লাগছে ৪ ঘণ্টা। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের পথে মেঘনা গোমতী সেতু পার হতে লাগছে ৫/৬ ঘণ্টা। কোনো কোনো রুটে সড়কের বেহাল দশাও ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে নদী পারাপারের অপেক্ষায় ছিল কয়েকশ’ গাড়ি। এ কারণে পাটুরিয়া ঘাটেও ছিল ভয়াবহ যানজট। প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে মহাসড়কের উপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা মানুষকে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে। অন্যদিকে, এবার ট্রেনেও স্বস্তি নেই। সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে কমলাপুরে ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় কাটছে সময়। সবকিছু মিলে, দিন যতো যাচ্ছে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি ততো বাড়ছে।
ঢাকার মহাখালী থেকে সকাল ৭টার বাসে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলেন সারোয়ার নামে এক প্রকৌশলী। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়ও তিনি সিরাজগঞ্জ পেরিয়েছেন বলে জানান। বগুড়া পৌঁছতে তখনও দুই ঘণ্টার পথ বাকি। সারোয়ার জানান, মহাখালী থেকে বাসটি ছাড়ার পর আশুলিয়া পার হতেই লেগেছে ৩ ঘণ্টা। এরপর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আরও প্রায় তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। টাঙ্গাইলের পথে বাসের গতি ছিল খুবই কম। বঙ্গবন্ধুৃ সেতু অতিক্রম করার পরও বাসের গতি কিছুটা বেড়েছে তবে তা স্থায়ী ছিল না। যানজট ছাড়াও ধীর গতির কারণে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে। ওই যাত্রী বলেন, প্রচন্ড গরমের মধ্যে যাত্রীরা যানজটে আটকে সীমাহীন কষ্ট করেছে। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা ছিল করুণ। পথিমধ্যে অনেকেই শিশুদেরকে নিয়ে নেমে একটু বাতাসের জন্য ছুটোছুটি করেছেন। অনেকে মহাসড়কের পাশে দোকান থেকে ঠান্ডা পানি কিনে পান করার পাশাপাশি শরীরে ঢেলেছেন।
গাবতলী বাস টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের এক কাউন্টার মাস্টার জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজটের কারণে কোনো গাড়িই সময়মতো ফিরতে পারছে না। এ কারণে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দিনাজপুরের বিরামপুরগামী একজন যাত্রী জানান, সকাল সাড়ে ৭টায় তার বাস ছাড়ার কথা ছিল। সেই বাস এসেছে সাড়ে ৯টায়। এরপর সোয়া ১০টায় বাসটি ছেড়েছে। পথিমধ্যে সাভারের আশুলিয়ায় যানজটে প্রায় আড়াই ঘণ্টা আটকে থাকার পর বাসটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উঠতে এরই মধ্যে প্রায় ৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে।
অন্যদিকে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজট না থাকলেও পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে সব গাড়িই আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে গতকাল রোববারও নদী পারের অপেক্ষায় আটকে ছিল ৫ শতাধিক যানবাহন।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যহত হওয়ায় যানবাহন পারাপারে দ্বিগুন সময় লাগছে। আর এতেই এ সিরিয়াল তৈরি হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীমুখি পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দৌলতদিয়া প্রান্তে যানবাহনকে সিরিয়ালে থাকতে হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস পারাপার করা হচ্ছে। চালকরা জানান, অনেকে সকালে রওনা করে পাটুরিয়া প্রান্তে আটকা পড়েছেন। প্রচন্ড গরমে যাত্রী ও তারা অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন।
গরুর মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, লাখ লাখ টাকার গরু নিয়ে তারা একটু লাভের আশায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন। কিন্তু দৌলতদিয়া প্রান্তে এসে ফেরির জন্য এই গরমে গরু নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। গরুগুলোও গরমে কষ্ট পাচ্ছে।
এদিকে, সায়দাবাদ টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলোর মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত পৌঁছতেই লেগে যাচ্ছে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা। অথচ স্বাভাবিকভাবে এটি মাত্র ৩০-৪০ মিনিটের পথ। মূলত মেঘনা টোল প্লাজায় টোল নেয়ায় ধীরগতি, ওজন স্কেলের অব্যবস্থাপনা এবং চালকদের নিয়ম অমান্য করে ওভারটেকিংয়ের চেষ্টার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট লেগেই আছে। গত তিন দিন ধরে মেঘনা- গোমতী সেতুর দুপাড়েই ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। দিন যতো যাচ্ছে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় এ যানজটের ভয়াবহতা ততো বাড়ছে।
এদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও গাড়ির চাপে তীব্র যানজট হচ্ছে। যানজটের কারণগুলোর মধ্যে সড়ক সংস্কার, অটোরিকশা-ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য এবং হাইওয়ে পুলিশের গাফিলতিকে দায়ী করছেন যাত্রীরা।
কমলাপুরে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা
অপরদিকে, ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে গতকালও ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় দেখা দেয়। প্রায় প্রতিটি ট্রেন দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। কোনো কোনো ট্রেন নির্দ্দিষ্ট সময়ের দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর কমলাপুরে এসেছে। এরপর ওই ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে কেটে গেছে আরও এক ঘণ্টা। । এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো হাজারও মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী অভিমুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় ৭টার পর। খুলনা অভিমুখী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে গেছে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে। নীলফামারীর চিলাহাটি অভিমুখী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ১০টা পর্যন্ত ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড়ানো ছিলো। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে ১১টার পর। দিনাজপুর অভিমুখী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে ১১টার পরে। অন্যদিকে, লালমনিরহাটগামী ঈদ স্পেশাল ট্রেন ৯টা ১৫ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে বেলা ১২টার পর। এছাড়া, আগের রাতে দিনাজপুর ঈদ স্পেশাল ৪ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে বলে রেল সূত্র জানায়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার শীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ধূমকেতু, সুন্দরবন, নীলসাগর দেরিতে কমলাপুর স্টেশনে আসায় যাত্রা কিছুটা দেরিতে হয়েছে। তিনি বলেন,আমরা সব সময় চেষ্টা করছি যাতে কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না হয়। ঈদের সময় যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ট্রেনগুলো নির্ধারিত গতিতে চলতে পারে না। আবার সব স্টেশনে দুই/ তিন মিনিট বেশি সময় প্রয়োজন হয় যাত্রী নামানোর জন্য। এজন্যও ট্রেনগুলো বিলম্বে আসা যাওয়া করছে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।