Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদুল আজহা সংখ্যা-২০১৮ এর পদাবলী

| প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ৪:০১ পিএম, ২০ আগস্ট, ২০১৮

আল মাহমুদ

নদীর ভিতরে নদী
তোমার গোসল আমি দেখেনি কি একদা তিতাসে? 
মনে পড়ে? শ্মশানঘাটের সেই সিঁড়ি ছুঁতে নেমে যাওয়া জল 
ডোবায় সে পাদপদ্মা। সফরী পুঁটির ঝাঁক আসে 
আঙুল ঠুকরে খেতে। নদী যেন নদীতে পাগল। 
নদীর ভিতরে যেন উষ্ণ এক নদী ¯œান করে। 
তিতাসের স্বচ্ছজলে প্রক্ষালনে নেমেছে তিতাসই। 
নিজের শাপলা লয়ে খেলে নদী নদীর ভিতরে
ঠাট্টা বা বিদ্রƒপ নেই, শ্যেনচক্ষু, নেই চারণের বাঁশি। 
অমন নাহানা আর দেখিনাকে; ঘুরি দেশান্তর 
সাগরের বেলাভূমি ঘুর আমি, তামায় হাম্মায়; 
সিনানের ছবি দেখে ম্যুজিয়মে কাটাই প্রহর 
পাই না সে দৃশ্যপট তিতাসের। প্রক্ষালনে নারীর আরাম। 
ঈভের শরীর যত কেলি করে প্যাসিফিকে, ভূমধ্যসাগরে 
নুনের দাহিকা হয়ে জ্বলে তারা অধরে, নধরে।

 

শাহীন রেজা
শিশিরের হাত
চেয়েছি পাখির চোখ প্রাচীনেরে বাঁধিব আবার
ফোটাব ছায়ার ফুল পাথরের মায়া আরশীতে
আমিও প্রবিষ্ট হবো আদমের গৃহ আর গীতে 
এবং ফসিল হবো সময়ের রূপালী আহার
যেমন পাখিরা বাঁচে যে রকম ঘুম নগরীতে
তমসার দেহ হয় পউষের দুধ কলা রাত
হরিণ রমণী কাঁদে ঘুমবনে শিশিরের হাত
কুহক কাঁথার ওম্ নদীরাও পান করে শীতে
আমার পৃথিবী জানি পৃথিবীর মতো হবে আজ
বাঁধিবে প্রাণের রাখি মানুষেরা মানুষের হাতে
ফুটিতে তারার ফুল অবিরাম প্রেমিকের রাতে
ধরণী সাজিবে দেখো অনুপম চাঁদোয়ার সাজ
চেয়েছি পাখির চোখ পৃথিবীকে দেখিব আবার
প্রাচীনের কোলাহলে ক্রমাগত নতুনের দ্বার।

 

অভিমানিনী
সৈয়দ আসরার আহমদ
আমার ডাক তুমি শুনতে চাও না জানি,অভিমানিনী,
অভিমান করে চলে গেছ দূরে ছেড়ে আর ফিরবে না,তাও জানি,
অভিমানিনী আমার তো সব দোষ সেকথা আমি জানি,কপালের দোষ
নইলে কি আমি নিজের হাতে মেরে ফেলতাম তোমাকে?
সেদিন শয়তান মাথায় চেপেছিল ভুলে গিয়েছিলাম কি করছি আমি
সেদিন আমি হেরে গিয়েছিলাম, শয়তান গিয়েছিল জিতে
আর এবার তুমি জিতে গিয়েছ আমি তো গিয়েছি হেরে,
তোমার জীবন দিয়ে তুমি তা প্রমাণ করে গেলে
তাহলে দু›বারই আমার হার হল তুমি জিতে গেলে শেষবারও
আমার সর্বনাশ লেখা ছিল যে আমার হাতে বুঝিনি সেদিন একবারও
তুমি ভাল থেকো আর আমাদের জন্য দোয়া রেখো,বলছি বারবার৷

 

ফাহিম ফিরোজ
পাদুকা কপাল
ফুল থেকে ফুল খুলে গেছে। মানে? 
আমি, আসার পরেই সে কি মেকাপের ধুম 
শাড়ির ভাঁজ ভাঙ্গা!
কে দেখবে, এসব রাস্তার পাদুকা? 
কাকীমারে, কারো ভাগ্য এ রকম...
ছুঁতে গেলেও কলসের গলা ধরা 
ভঙ্গিমায় সে পিচরঙ্গা নভকে জড়িয়ে ধরে 
বর্ষ-বর্ষান্তর। চায় পৃথিবী আমার 
করোমূলে স্বপ্ন দেয় 
আঙ্গুর ঝুলিয়ে 
কখনও কালো আকাশকে নয়
জানে, তার মাঝে আছে অগনন তার 
জড়ানো, তড়িৎ খুঁটির শিরে
কৃষ্ণ এক ঝুটি 
আছিলো আছিলো হাঁটুকালে একদিন 
উভয়ের সেকারিন বাদ 
নানীমারে, কৈ গ্যালো কৈ গ্যালো, এখন সে সব?
তা এখন বাউরÑ ঢেউহীন শব 
কেন্দে কেন্দে মরে। এই দিকে 
ঠাক্মারে রাগন্ত খোয়াজ।
ভাইসব, লাজে মরি! পাদুকা কপাল এখন চন্দ্রসমীপে
ছুঁড়ে ফেলা ঠিক ডাবের খোলস
এই সব দেখে, আমার বুকের হাঁড় তবু লালচে শ্মশান!
১৮.৮.১৮

 


রকি মাহমুদ
জীবন বৃক্ষের ঐশ্বর্য
অণুক্ষণ তোমার নিভৃতে আমি হব নিবিড় নিরুদ্দেশ
জীবন বৃক্ষের ঐশ্বর্যের উদ্যানে তুমি সৌভাগ্যের বসতি
নিয়তির নির্যাতনে ক্রমশ ম্রিয়মান বিবেকী বিশ্বাস
স্বৈরিণী সময় দ্রোহের চিতায় পোড়ায় হলুদিয়া বসন
নিদ্রাভিভূত মধ্যরাত বেদনার উৎসবে ছড়ায় নীল দীর্ঘশ্বাস
মনোভূমি পোড়াতে পারদর্শী চাঁদ অবজ্ঞার খিলখিল হাসি
অনিবার্য আততায়ী হয়ে বিপুলোৎসায়ে কেড়ে নেয় স্বপ্ন
তবু, আড়ষ্ট আবেগে পাপড়ি মেলে ভীষণ অন্য রকম পাপ।

 

বিশ্বজিৎ মন্ডল
তথ্যচিত্র নির্মাণ
কোথায় ঈশ্বরের কথা ?
কেবল ছড়ানো, মাধুর্য্য আঁঁকা ছল....
এভাবেই বয়স গোপন রেখে,তোর সঙ্গে
ঝুলে পড়ি .... ওলনদড়িতে
ডুবতে ডুবতে নদীর আশ্চর্য অতল
এইবার মেপে নাও আমার চৌহদ্দি...
সমর্পণ মাখা শেকলে আষ্টেপৃৃষ্ঠে জড়িয়ে
জেগে উঠি ...... বাৎসায়ন।

 

ফারিহা সারোয়ার
বর্ষার ছুটে চলা
মেঘলা আকাশ, মন ছোঁয়া বাতাস,
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, মেঘের আওয়াজ।
দমকা হাওয়া, স্পন্দিত বৃষ্টি,
এই যেন এক, অপরূপ সৃষ্টি....
হাওয়ার তালে খেলে গাছের শাখা,
ধুসর গগনে ছোটে, মেঘের ভেলা।
মনে হয়... মনে হয়...
উড়ে চলা ঐ মেঘ রাশি,
আমাকেও নিতো তার সাথে যদি?
এ শুধু কল্পনায়...
পাল্লাতে পাল্লাতে তারা ছুটে চলে যায়,
বর্ষা নামবে! বর্ষা নামবে!
জানিয়ে দিয়ে যায়,
ভোলা কি যায়.. এসময়?

 

রোকেয়া ইসলাম
জল নড়া প্রতিবিম্বে অনিন্দ্য ভোর 
মাটির বুকে লেপ্টে আছে হেমন্ত আর পরিপাটি কয়েকটি সবুজ 
আমরা গুল্মও ভাবতে পারি আবার ঘাসও
ভেবে নিতে পারি এই আসরের অমিমাংসিত মুহূর্ত- অবুঝ... 
লেপ্টে থাকা শরীরী স্বত্বায় কামগন্ধ পাতাদের টুপটাপ ফোরপ্লে 
কম্পোজ হয়ে আসা অমর অভিসারের পাতায়
সাবেকী শরীরের সংমিশ্রণ- দোর আটকানো বিছানা, 
বড় অন্ধ... ধান ক্ষেতের উদাস উতল বাতাসে গলে গেছে
নিশি পাওয়া কালকের রজত কণা দূরে ঐ হীম ছোঁয়া ধল স্রোতে
অবয়ব বুঝি মিহি কুয়াশার একান্ত আমন্ত্রণে
পারিপার্শ্বিক ক’জনা অদ্য এই বেলা অবধি আন্তরিক আছে?!
দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এবার স্ক্যান্ডালে আবৃত পূর্ণবতীর স্বরূপে প্রকাশ
এই অবিস্মরনীয় হেমন্তের অনিন্দ্য ভোরে
একাকী একা বহু পদচিহ্নের মেঠো পথে
প্রতীক্ষায় আছি দেবদূত আসবে বলে এই অনন্ত সূর্য প্রহরে...

 

সুমন আমীন
সার্বভৌমত্ব
হৃদয়ের সীমাহীন সার্বভৌমত্ব তোমার।
আমার যা অধিকার ছিলো সব ডুবে গেছে
ওই দুর্ধষ কাজল চোখের নদীতে।
অকস্মাৎ পিছু ফিরে দেখি
মনের দখল নেই মনের কাছেই।
এই দেহ-শরীরের প্রতি কোষে কোষে
স্নায়বিক নিউরনের অনু পরমানু জুড়ে কিংবা
হৃদপিন্ডের প্রতি স্পন্দনে স্পন্দনে
তোমারই তো জয়গান মেয়ে!
আপন স্বদেশ হারানো উদ্বাস্তু হয়ে
তোমার বিরহ কাঁটাতার পার হবো
চাতকের তৃষ্ণা বুকে নিয়ে তাই চেয়ে থাকি অপলক-
আমাকে শীতল করো,দাও প্রেমের হেমলক!
হাজার যাতনা বুকে স্বপ্ন বেশুমার
হৃদয়ের সীমাহীন সার্বভৌমত্ব তোমার।

 

শাকিল কালাম
বাতিঘর
বাতির জায়গায় বাতি থাকেব থাকেব না শুধু আলো
তোমার দেখা পাই নে বলে দুঃখই শুধু জ্বালো।
ঘর-সংসার পাট চুকিয়ে ভবঘুরে জীবন
আমার দুঃখ আমার কষ্ট আমাতে করি লালন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন