Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

‘মত প্রকাশের সুযোগ যত কমে গুজব তত ছড়ায়’

পেন ইন্টারন্যাশনালের সভায় বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

‘আইয়ুব খান ও এরশাদের সময় মানুষ বিবিসি’র খবর বেশি শুনতো’ মন্তব্য করেছেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি বলেছেন, মত প্রকাশ কিন্তু একটা ‘ফ্রেজাইল’একটা ফুলের মতো জিনিস। আপনি জোরে একটা ধাক্কা দিলে এটা কিন্তু মত প্রকাশ হবে না। এতে করে মত প্রকাশের জগতটা ছোট হয়ে আসবে।
যখনই আপনার ব্যক্তিগত মত প্রকাশের জগত ছোট হয়ে আসে তখনই কিন্তু ‘রিউমার (গুজব) ছড়ায় বেশি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে পেন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, নতুন প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাস হলে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মত প্রকাশের একটি ধারা প্রবর্তিত হবে। এই খসড়ায় একটি ধারা আছে যেখানে বলা হয়েছে, পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতার। কোনও রকম পরোয়ানা থাকবে না, আপনাকে তল্লাশি করবে। আপনার কম্পিউটার সিস্টেম জব্দ করবে এবং প্রয়োজন হলে আপনাকে গ্রেফতার করবে। গ্রেফতারটা কে করবে? পুলিশ! আমি তো মনে করি এই একটি ধারা আপনার সমস্ত স্বাধীন মত প্রকাশের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে।
পেন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সভাপতি মাসুদ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান, পেন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর সৈয়দ আইরিন জামান, উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য কাজী রোজী প্রমূখ। গোলটেবিল আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পেন ইন্টারন্যাশনালের কার্যনির্বাহী সদস্য শাহ জাহান সিদ্দিকী।
মাহফুজ আনাম বলেন, আইয়ুব খান ও এরশাদের সময় এই দেশের মানুষের কাছে বিবিসি’র কদর বেশি ছিল। খবর শুনতে চাইলে সবাই বিবিসি শুনতো। কেননা জনগণের ধারণা ছিল, দেশীয় যারা সমস্ত তথ্য দেয়, তারা সত্য কথা বলতে পারে না। কিন্তু এখন যেমন আমরা অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করি। এখন কিন্তু বিবিসি’র প্রতি নির্ভরশীলতা অনেক কমে গেছে। চায়নার সম্পর্কে জানতে হলে আপনি চায়নিজ মিডিয়ার চেয়ে বাইরের মিডিয়াকে বেশি বিশ্বাস করবেন। তাই একটা রাষ্ট্রের আত্মসম্মানবোধ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, নিজের আমার তথ্য আমরাই নির্বিঘেœ বলবো। সেই বোধ থেকে সেই চেতনা থেকে আজকে যত বেশি মিডিয়া ফ্রি হবে, ততবেশি কিন্তু গুজব কম রটবে। অর্থাৎ পরের কথায় বিশ্বাস কমে যায়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় এসেছে, এখানে অনেক গণমাধ্যম আছে। ব্যক্তি স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আমি মনে করি এই ৫৭ ধারার অপব্যবহারও হয়েছে। বর্তমান প্রযুক্তির জন্য অবশ্যই সিকিউরিটি অ্যাক্টের প্রয়োজন আছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগের সঙ্গে একমত। কিন্তু যে খসড়াটা এসেছে, এটা যদি আমূল পরিবর্তন না হয়ে আইনে রূপান্তরিত হয় তাহলে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিবেক ও চিস্তার স্বাধীনতা এবং অবশ্যই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে।
দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক সাবেক এমপি তাসমিমা হোসেন বলেন, কথা বলার স্বাধীনতা আমাদের কখনোই ছিল না। স্বাধীন হওয়ায় পরেও বারবার মত প্রকাশে বাঁধা পড়ছে। মুক্ত চিন্তার স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের আজীবন লড়াই করতে হবে। শারমিন মোর্শিদ বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। এর প্রভাব সবার ওপর পড়তে পারে। কম-বয়সী শিশু থেকে সাংবাদিক; সবাই এই প্রস্তাবিত আইনের ফাঁড়ায় পড়তে পারে। জনগণের কল্যাণের জন্য আইনিটি নিয়ে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরাসহ জনসাধারণকেও ভাবতে হবে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন দিকে মোড় নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই আন্দোলনকে জড়িয়ে নানা অপরাধে অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে, যা শুভ নয়।
অনলাইন মিডিয়া লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, লাগামহীন কিছু মিডিয়া বন্ধে একটি আইন হওয়া দরকার। তবে সেটা করতে গিয়ে যেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ না হয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুষ্ঠুভাবে উপভোগ করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। আমি আমার মোবাইল থেকে ইউটিউব ব্লক করে রেখেছি। কারণ হলো, এটা চালু করলে এমন কিছু চলে আসে, হয়তো আমি বয়স্ক লোক বলে সহ্য করে নিচ্ছি, আমার জন্য কোনও ক্ষতি করবে না। কিন্তু একটা বাচ্চা ছেলেমেয়ের জন্য তো ক্ষতিকর। কাজেই এই ধরনের একটি আইন করে যেমন আমাদের মত প্রকাশের জায়গা বাধাগ্রস্থ করা যায় না, তেমনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জায়গা আমরা যাতে সুষ্ঠুভাবে উপভোগ করতে পারি সেটার জন্য একটি আইন দরকার। আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাবো যে, তারা এই আইনটি এখনও পাস করেনি। এই আইনটি নিয়ে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও চলছে। এই আইনটি এখনই পাস করবে বলে আমি মনে করি না। এই আইন নিয়ে আরও বিশ্লেষণ দরকার।
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে একটি ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। যখন রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি মিডিয়াকে ফেক নিউজ বলে নীচে নামাতে চায়, যার ফলে তারা ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। আগে ১০০ পত্রিকা ছিল, এখন ৩০০ পত্রিকার সম্পাদক এক জায়গায় হয়েছেন। তারা কমন সম্পাদকীয় পর্যন্ত লিখেছে যে, জার্নালিস্ট আর নট দ্য ক্রিমিনাল। কাজেই আমরাও মনে করি গণমাধ্যমের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন, যারা লেখক আছেন তারা কোনও ক্রিমিনাল না। কিন্তু এই ইন্সট্রুমেন্টগুলো ক্রিমিনালরাও ব্যবহার করে। ইন্সট্রুমেন্টগুলো পলিটিক্যাল ইন্টেনশনের জন্যও ব্যবহার করা হয়। কাজেই আমরা মনে করি পেন ইন্টারন্যাশনাল একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। তারাই নিজ জায়গায় সেই মতামত তৈরি করবে। আমার ধারণা, আইনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনারা যদি স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে বলেন কথাগুলো, তাহলে তারা হয়তো পরবর্তী সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকবে। এছাড়া আমরা যারা এর ভেতরে কাজ করছি আমাদের জন্য একটি উপকারও হবে। কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা ডিজিটাল নিরাপত্তায় অসংখ্য আইনের প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে বলেন, আইন তখনই করা হয় এবং বাড়ানো হয়, যখন কোনো আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সৃষ্টিশীল লেখকদের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে কিছু গণমাধ্যমকে ফেইস বুকের প্রতি নির্ভর হতে দেখা গেছে। ফেসবুক সব সময় গণমাধ্যমের ভূমিকায় যাওয়া শুভ নয়। ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। বর্তমানে প্রযুক্তিগতভাবে আমরা খুবই ঝুঁকিতে আছি। কোন বিষয় পোস্ট ও মন্তব্য করতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ##



 

Show all comments
  • মোঃ নুরুল ইসলাম ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ১০:১৩ পিএম says : 0
    বল বীর উন্নত মম শির,বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা|চল চল চল উর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিবিসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ