বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সংঘাতে ফের রক্ত ঝরেছে পার্বত্য জনপদে। আজ শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরে পাহাড়ি সশস্ত্র দুই গ্রুপের প্রকাশ্যে গোলাগুলিতে ৬ জন নিহত এবং ৩ জন আহতসহ ৯ জনের হতাহতের ঘটনাকে ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে রক্তাক্ত খাগড়াছড়ি জেলায়। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। স্থানীয় লোকজনের জোরালো আশঙ্কা আবারও প্রতিপক্ষ কোনো না কোনো গ্রুপ এই হত্যার প্রতিশোধে মরিয়া হলে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী ঘটনা। পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে। সর্বত্র পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় বিবদমান দু’টি পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রæপের মধ্যকার তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়। বৃষ্টির মতো অবিরাম গোলাগুলি চলে আধাঘণ্টারও বেশী সময়। এতে নিহত হয় ৬ জন। এ সময় সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশ বক্সেও গুলি করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা এবং পুলিশ জানায়। জেলার বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র পাহাড়িদের গুলিতে খুনাখুনির ঘটনা ইতিপূর্বে ঘটলেও খাগড়াছড়ি শহরের মধ্যেই তাও প্রকাশ্য দিবালোকে গোলাগুলিতে এক সঙ্গে এতজন মানুষ খুন হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
পাহাড়িদের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ব্যানারে ‘ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ’ বনাম ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক গ্রুপ’ এই দু’টি বিবদমান পক্ষ উক্ত গোলাগুলিতে লিপ্ত হয় বলে প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়। সেই সাথে জনসংহতি সমিতির একটি প্রতিপক্ষ সংগঠনকেও এর সাথে জড়িত বলে দায়ী করা হচ্ছে। নিহত ৬ জনের মধ্যে ৩ জনকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে ইউপিডিএফ। তারা এর পেছনে জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) এবং স্থানীয় একটি মুখোশ বাহিনীকে দায়ী করেছে।
নিহতরা হচ্ছে তপন চাকমা ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, এলটন চাকমা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জিতায়ন চাকমা, পলাশ চাকমা (জেলা সভাপতি গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম), বিধান চাকমা ও অনুপম চাকমা। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহতরা হচ্ছে, সমর বিকাশ চাকমা, সুকিরন চাকমা ও সোহেল চাকমা। আহত ৩ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজ খাগড়াছড়ি সদরের উক্ত এলাকায় ইউপিডিএফ-এর একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা ছিল। সকাল ৭টা থেকেই ওই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেখানে জড়ো হচ্ছিল। কর্মসূচি শুরু হওয়ার ঠিক আগেই প্রতিপক্ষের সশস্ত্র ক্যাডাররা সেখানে আসে। আর তখনই ঘটে দুই পক্ষের এহেন সংঘাত ও সহিংসতা।
এদিকে গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বেলা ১১টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে আতঙ্কগ্রস্ত সাধারণ মানুষ বাড়িঘরে গিয়ে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় দোকান-পাট এবং যানবাহন চলাচল। চারিদিকে জনমনে বিরাজ করছে ভীতি আর শঙ্কা।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসকগণ জানান, প্রথমে ৫ জনকে নিহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আহত অবস্থায় আনা হয় ৪ জনকে। এদের মধ্যে একজন হাসপাতালে মারা যান। অপর ৩ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজ বিকেলে চমেক হাসপাতালে জরুরী ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গুরুতর গুলিবিদ্ধ ৩ জনের চিকিৎসা চলছিল।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন জানান, অতর্কিতভাবেই এই হামলা ও গোলাগুলির ঘটনাটি ঘটে। এর পরপরই এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পুলিশের টহলও চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।