পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে আন্ত:নগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন টিকিট যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে লাইনে অপেক্ষা করেও মিলছে না সৈয়দপুর-ঢাকা রুটের একটি টিকিট। ঈদ স্পেশাল ট্রেন কিংবা অতিরিক্ত বগি সংযুক্ত না করায় আসন সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে ঈদের ছুটি শেষে পরিবার-পরিজন নিয়ে কর্মস্থলে কিভাবে ফিরবেন সে দুশ্চিন্তায় পড়েছে শত শত চাকরিজীবী মানুষ। এতে করে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহে চরম বিপাকে পড়েছেন। গতকাল সকাল ৮ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনে পুরুষ ও মহিলাদের দীর্ঘ লাইন। টিকিট সংগ্রহে আসা মানুষের ভীড় সামলাতে সেখানে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য পোষাকে ও সাদা পোষাকে দায়িত্ব নিয়োজিত রয়েছেন। এ সময় টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করছিলেন সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মো. মাহ্বুবুল হক মাহবুব। সকাল ৮টার পর পরই টিকিট কাউন্টার খুলে টিকিট দেওয়া শুরু হয়। এরপর ২০/২৫ মিনিট টিকিট দেওয়ার পর পরই টিকিট কাউন্টার থেকে বলা হয় ঢাকার নীলসাগর ট্রেনের টিকিট শেষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে গত ৮ আগস্ট থেকে আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রার আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেওয়া হয় ২৫ আগস্টের যাত্রার আন্ত:নগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। তাই নির্ধারিত দিনের আগের দিন অর্থাৎ গত বুধবার সকাল থেকে সাধারণ যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান নেয়। চব্বিশ ঘন্টা সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের অবস্থান নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও একটি টিকিট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয় অনেকেই। এমন একজন হলেন সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ার বৃদ্ধ মো. নেছার আলী। তিনি জানান, ঈদের পর মেয়ে বাড়ি ঢাকায় যাওয়ার মনস্থির করেছেন। তাই ২৫ তারিখের একটি টিকিটের জন্য বুধবার সকাল থেকে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান নেন। টিকিট সংগ্রহ করতে আসা যাত্রীদের লাইনে তাঁর অবস্থান ছিল মধ্যভাগে। কিন্তু কয়েকজনকে টিকিট দেওয়ার পর কাউন্টার থেকে বলা হয় আন্ত:নগর নীলসাগর ট্রেনের টিকিট শেষ। নিরূপায় হয়ে ব্যর্থ মনোরথে বাড়ি ফিরতে হয় বৃদ্ধ নেছার আলীকে। তার মতো অনেকেই টিকিট না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেন।
সৈয়দপুর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. ইকবাল হোসেন গুড্ডুর সঙ্গে স্টেশন এলাকায় ২৫ আগস্টের নীলসাগর ট্রেনের ৪টি টিকিট হাতে কথা হয় তিনি জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান নিয়ে ওই টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন তিনি। তিনি আরো জানান, গত চব্বিশ ঘন্টায় কখনও তিনি কখনও বা তাঁর লোক লাইনে অবস্থান নিয়েছিল। অপর এক ব্যক্তি বলেন, এখানে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট এতোই শক্তিশালী যে তাদের কাছে আমরা পাত্তাই পাচ্ছি না। আর ট্রেনে টিকিট যেন এখন সোনার হরিণ। কারণ টিকিট কালোবাজারি সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা কাউন্টারের বুকিং সহকারিরা আগেভাগেই টিকিট বের করে নেন। পরে কাউন্টার খুলে হাতেগোনা কয়েকজনকে টিকিট দিয়েই বলেন টিকিট শেষ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বুকিং সহকারি বলেন, অনলাইনে একটি টিকিট বের করতে সময় ৮ সেকেন্ড। সে হিসেবে সৈয়দপুর স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত টিকিট সরবরাহ দিতে ৩০ মিনিটও সময় লাগে না।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কালোবাজারে আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট শোভন চেয়ার শ্রেণীর ৪৫৫ টাকার টিকিট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২ শ’ টাকা এবং এসি চেয়ার স্নিগ্ধা শ্রেণীর ৮৭০ টাকার টিকিট ২ হাজার টাকা, এসি বাথ ১ হাজার ৬১০ টাকার টিকিট সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। গত ঈদুল ফিতরে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের এক সদস্যকে আন্তঃনগর নীলসাগর ট্রেনের টিকিটসহ হাতেনাতে আটক করে জিআরপি পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমান আদালত ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তাঁর। কিন্তু তারপর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সৈয়দপুরে রেলওয়ে স্টেশনের জন্য নীলসাগর ট্রেনের চেয়ার (শোভন) ১২০ টি, এসি স্নিগ্ধা চেয়ার ২৫ টি, নন-এসি বার্থ ৬ টি এবং এসি বার্থ ১০টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। এসবের মধ্যে আবার কয়েকটি ভিভিআইপিদের জন্য সংররক্ষণ করা হয়ে থাকে। ভিভিআইপিদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রী,সাংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা।
এ নিয়ে কথা হলে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার মো. শওকত আলী বলেন, প্রতি ঈদেই এ স্টেশনে টিকিটের ব্যাপক চাহিদা থাকে। বিশেষ করে নীলসাগর ট্রেনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এ স্টেশনে নীলসাগর ট্রেনের আসন বরাদ্দ এতোই কম যে যাত্রীদের চাহিদা মতো টিকিট সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হয় না। প্রতি উৎসবে আন্তঃনগর নীলসাগর ট্রেনে ২/১টি অতিরিক্ত বগি সংযুক্ত করলে অনেক যাত্রীই টিকিট পেত। আমি বিষয়টি উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষে অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কমার্শিয়াল কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।