Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইজারা সম্পন্ন না হলেও পশুর হাট প্রস্তুত

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৫৯ এএম

রাজধানীর কোরবানির হাটগুলোতে পশু বেচা-বিক্রি শুরু হবে দু’য়েক দিনের মধ্যে। তবে এখনো ৮টি হাটের ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি দুই সিটি কর্পোরেশন। হাটগুলোর ইজারা প্রক্রিয়া নিয়ে দুই কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। ২৩টির মধ্যে ৮টি হাট এখন সিন্ডিকেটের কব্জায়। এ হাটগুলোর ভাগ্যে কি আছে সে বিষয়ে এখনো মন্ত্রণালয় থেকে কিছু জানা যায়নি। কোন প্রকার অনুমোদনের তোয়ক্কা না করেই হাটগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রিয় প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। সিন্ডিকিটের সদস্যরা ধরেই নিয়েছেন সিটি কর্পোরেশন খাস আদায়ের জন্য তাদেরকেই হাটগুলো পরিচালনা দায়িত্ব দিবে। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা এ চক্রের কারণে এবার কোরবানির পশু ক্রেতাদেরকে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হতে পারে। অন্যদিকে দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রায় ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব হরানোর আশঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ২৩টি পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১৩টি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ১০টি। নির্ধারিত সময়ে ডিএসসিসি ৭টি এবং ডিএনসিসি ৮টি হাটের ইজারা দেয়। বাকি ৮টি হাটের দরপত্রে কাঙ্খিত দর আসেনি। অভিযোগ রয়েছে- স্থানীয় এমপি, কাউন্সিলর ও ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিন্ডিকেট কাউকে দরপত্র জমা দিতে দেয়নি বা দিচ্ছে না। তারাই এই হাটগুলো খাস কালেকশনের জন্য নিতে চাচ্ছে।
প্রচলিত নিয়মে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় যদি কাঙ্খিত দর না পাওয়া যায় তাহলে তৃতীয় দফায় টেন্ডার আহ্বান করতে হয়। পর পর তিন দফা টেন্ডারের পর ইজারাদার পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠাতে হয়। মন্ত্রণালয় উল্লেখিত হাটগুলোতে পাওয়া সর্বোচ্চ দর দেয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিতে কিংবা হাটগুলো বাতিল আথবা খাস আদায়ের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিতে পারে। যদি খাস আদায়ের জন্য মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেয়, তাহলে দায়িত্ব দেয়া হয় সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারি ও স্থানীয় জনপ্রতিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ওপর। হাট থেকে প্রতিদিন যা আয় হয় খরচ বাদ দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগে জমা দিয়ে থাকে।
ডিএসসিসি’র সম্পত্তি বিভাগ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আতীতে কোরবানির হাট থেকে খাস আদায়ের টাকার সঠিক ও স্বচ্ছ হিসাব না পওয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে। খাস আদায়ের টাকার বেশিরভাগ অর্থই সিন্ডিকেটের পকেটে চলে যায়। এ ব্যাপারে ডিএসসিসিকে নমনীয় মনে হলেও ডিএনসিসির শক্ত অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। কাঙ্খিত দর না পাওয়ায় ডিএনসিসি ইতিমধ্যে একটি হাট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যটির পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা সত্তে ও ডিএসসিসি এলাকার ১৩টি হাটের মধ্যে ৯টিই খেলার মাঠকে বেছে নিয়েছে। এসব মাঠে পশুর হাট বসানো হলে দীর্ঘদিন খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে থাকে। পরবর্তীতে মাঠগুলো খেলাধূলা উপযোগী করতে কয়েক লাখ টাকা খরচ করতে হয়।
এ ব্যাপারে নগরবাসীর অভিযোগ থাকলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। খেলার মাঠে বসানো হাটগুলো হচ্ছে- উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলার ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কদমতলীর শ্যামপুর বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা।
এ হাটগুলোর প্রত্যেকটি প্রধান সড়ক সংলগ্ন। অনেক সময় সড়কের ওপরও হাট বসে। অন্যদিকে ডিএনসিসি হাট বসার জন্য খেলার মাঠ ইজারা না দিলেও তারা রাস্তা ইজারা দিয়েছে। এর মধ্যে মিরপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন পুলিশ লাইন্সের খালি জায়গা ও কুড়িল-পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা।
অভিযোগ উঠেছে- কম মূল্যে হাট ইজারা নিতে বা কিছু হাট খাস কালেকশনে দিতে ডিএসসিসিকে বাধ্য করতে প্রথম থেকেই কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। ফলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা টেন্ডার প্রক্রিয়ার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনি। তাদের সিন্ডিকেটের কব্জায় পড়ে ৮টি হাটের ইজারা হয়নি। ঈদের আগ মুহূর্তে এই হাটগুলো সিটি কর্পোরেশন থেকে খাস আদায়ের অনুমোদন নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে লড়ছেন তারা। কম মূল্যে হাট ইজারা বা খাস কালেকশনে হাট ইজারা নেয়া হোক না কেন, সব পক্ষকে খুশি করেই সেটা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, কোরবানি পশুর হাট ইজারা দিতে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বিধিমোতাবেক সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডিএসসিসির কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই। কেউ কোনো সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করছে না। আর সিন্ডিকেট কারা, সেটাও আমরা জানি না। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, বিগত তিন বছরে ডিএনসিসি এলাকার অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট ইজারার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই। কোনো হাটের কাঙ্খিত দর না পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পশুর হাট

৮ জুলাই, ২০২২
২০ জুলাই, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ