Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

১০ দিনে রাজস্ব আয় এক কোটি ২৮ লাখ

কাপ্তাই হ্রদে মাছের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার,রাঙামাটি থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৫৯ এএম

পার্বত্য রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ধরা পড়ছে হরেক রকমের দেশীয় প্রজাতির কার্প জাতীয় মাছ। পহেলা মে থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম এই হ্রদে সকল প্রকার মৎস্য সম্পদ আহরণ ও বিপনন বন্ধ ঘোষণার তিন মাস পর গত পহেলা আগষ্ট থেকে আবারো পুরোদমে শুরু হয় মাছ আহরণ।
দেশীয় মৎস্য প্রজাতির এক বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধশীল জলভান্ডার কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা মৌসুমের শুরুর প্রথম দিনেই আহরিত মৎস্য সম্পদ থেকে রাঙামাটি জেলার বাইরে পাঠানো বাবদ মাছ থেকে সরকারীভাবে রাজস্ব অর্জিত হয় ১৭ লাখ টাকারও বেশি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০দিনে কাপ্তাই হ্রদ থেকে আহরিত ৮ লক্ষ ৩২ হাজার ৯৭৬ কেজি মাছের বিপরীতে রাঙামাটিস্থ বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাজস্ব আদায় করেছে ১ কোটি ২৮ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪০২ টাকা।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়িরা জানান, অন্যান্য বছরের ন্যায় কাপ্তাই হ্রদে এবছর নানা ধরনের প্রাকৃতিক সমস্যার পরেও দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে এবছর ১০ থেকে ১৪ কেজি ওজনের বাঘাআইড়, ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের আইড় মাছও ধরা পড়ছে জালে।
এদিকে, মৎস্য ব্যবসায়িদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদ থেকে আহরিত মৎস্য সম্পদের ব্যবসায় সরকারি হিসেবে আদায়কৃত রাজস্বের বিপরীতে যে পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়, জেলায় স্থানীয় বাজারে তার চেয়েও অন্তত দ্বিগুণ অর্থ লেনদেন হয়।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি মো. কবির আহাম্মদ সওদাগর জানিয়েছেন, মাছ ধরা মৌসুমের শুরুতে যে পরিমান মাছ ধরা পড়েছে গত কয়েকদিনে সেটি কিছুটা কমে গেছে। না হয় রাজস্ব আদায় আরো অনেক বেশি হতো। এদিকে মৎস্য ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ব্যবসায়িরা রাঙামাটি থেকে ঢাকায় মাছ পরিবহণ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে, তার অন্যতম কারন হলো মহাসড়কের যানজট। যানজটের কারনে রাঙামাটি থেকে বরফ দেওয়া মাছ নিয়ে রাজধানীতে পৌছাতে বর্তমানে ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টার মতো সময় লাগছে। এতে করে মাছগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কাঙ্খিত দাম থেকে বঞ্চিত হয়ে বিপুল পরিমান ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে ব্যবসায়িরা।
ব্যবসায়িদের তথ্যানুসারে ছোট-বড় অন্তত তিনশো ব্যবসায়ি কাপ্তাই হ্রদের মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত। এসব ব্যবসায়িদের বিনিয়োগকৃত অর্থের ব্যবহার করছে অন্তত ৩০ হাজার জেলে। এছাড়াও স্থানীয় বাজারে বিক্রিসহ পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আরো ২০ হাজার স্থানীয় জেলে। এসবের বিপরীতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদের আহরণ-বিপননের মাধ্যমে প্রতিবছর ৬০ কোটি টাকার লেনদেন চলা কাপ্তাই হ্রদ থেকে বর্তমানের চেয়ে অন্তত ৫গুন বেশি রাজস্ব আদায় হতো যদি হ্রদের নাব্য সঠিকভাবে রাখা যেত। এমন মন্তব্য করে মৎস্য ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি কবির আহাম্মদ সওদাগর। তিনি বলেন, কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর হতে অদ্যবদি পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে কোনো প্রকার ড্রেজিং করা হয়নি। এতে করে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা কাঁদাযুক্ত পাহাড়ির ঢল ও হ্রদের চারপাশে অবস্থিত পাহাড়গুলোর মাটি ক্ষয়ে পড়ে হ্রদের নাব্য হ্রাস পেয়েছে অত্যন্ত বেশিপরিমানে। যার ফলশ্রæতিতে বর্তমানে হ্রদে ছোট মাছের অনেকগুলো জাত মরে যাচ্ছে। এছাড়াও কার্প জাতীয় মাছগুলো তাদের উৎপাদন তথা প্রজনন সঠিকভাবে করতে পারছেনা। তারপরও বিএফডিসির ব্যাপক তৎপরতায় বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন কিছুটা বৃদ্ধি হলেও এই ধারাবাহিকতায় বজায় রাখতে হলে হ্রদকে ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএফডিসি রাঙামাটি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নৌ-বাহিনীর কমান্ডার মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, মৌসুমের শুরু থেকে গত ১০ দিনে কাপ্তাই হ্রদ থেকে ধারাবাহিকভাবে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়ে আসছে এই ধারা অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় এবছর রাজস্ব আদায় বেশি হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাছের ঢল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ