বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মায়ের দুধের ওপর শিশুর অধিকার জন্মগত, স্বাভাবিক ও অবিচ্ছেদ্য। আল্লাহপাক এই অধিকার প্রদান করেছেন। তিনি শিশুর জন্মগ্রহণের অনেক আগেই তার জন্য মায়ের বুকে একটি দুধের ভান্ডার প্রস্তুত করে রাখেন। যখনই শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, সঙ্গে সঙ্গে মায়ের বুকে জমাকৃত দুধ নির্গত হয়। আল্লাহপাকের প্রতিপালন ব্যবস্থার এটা একটা অসাধারণ ও মহিমাময় দিক। মায়ের দুধ নবজাতকের জন্য সর্বোত্তম খাদ্য। এটা তারই জন্য এবং এ থেকে তাকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই। কী আছে মায়ের দুধে? এ কালের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মধ্যে প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ, দেহের জন্য অতি আবশ্যকীয় এই পাঁচটি উপাদানই রয়েছে। প্রথম দুধকে বলা হয় শাল দুধ। এটা শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। মায়ের দুধ শিশুর রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষা দেয়, পুষ্টি দেয়, শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। বিজ্ঞানীদের মতে, অন্তত ছয় মাস একনাগাড়ে শিশুকে মায়ের দুধ পান করানো উচিত। এ সময় তার অন্য কোনো খাদ্যের প্রয়োজন নেই। স্তন্যদানকারী মায়েরও এতে রয়েছে প্রভূত উপকার। বলা হয়েছে, এতে মায়ের শারীরিক মঙ্গল ও মানসিক প্রশান্তি আসে। অন্তত ছয় মাস তার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। স্তন্যদানকারী মায়ের ডিম্বাশয় ও স্তনে ক্যান্সার শতকরা ৫০ ভাগ কম হয়।
ইউনিসেফের একটি স্লোগান হলো : মায়ের দুধই সেরা। ১২টি উন্নয়নশীল দেশে শিশুমৃত্যুর হার রোধে নেয়া কর্মসূচিতে এই স্লোগানটিই সামনে রাখা হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ওইসব দেশে মায়ের দুধ পান না করার ফলে বছরে এক মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু হয়। একই কারণে কয়েক মিলিয়ন শিশু ইনফেকশন ও নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এসব কারণেই মায়ের দুধের কোনো বিকল্প হতে পারে না। গবাদিপশুর দুধ কিংবা বিকল্প খাদ্য মায়ের দুধের সমতুল্য হতে পারে না। একসময় আমাদের দেশের মায়েরা তাদের নবজাতকের জন্য বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানোর চিন্তাই করত না। পরিবর্তীতে নানা কারণে বোতলের দুধের প্রচলন হয়। শিশু খাদ্যের প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে অনেক মা-ই বুকের দুধের বদলে বোতলের দুধ খাওয়ানোর জন্য উৎসাহী হয়ে উঠেন। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষার বিভ্রান্তিকর কথায় আকৃষ্ট হয়ে অনেকে বুকের দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকেন। এর ফল শুভ হয় না। এখন অবশ্য মায়েদের মধ্যে সচেতনতা ও সুবুদ্ধি অনেকটাই জাগ্রত হয়েছে। তা সত্ত্বেও পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের ৪৯ শতাংশ নবজাতক জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পান থেকে বঞ্চিত হয়। আর ৪৫ শতাংশ শিশু ছয় মাস পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পানে বঞ্চিত হয়। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক চিত্র।
আল্লাহপাক ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা মেনে চললে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের শোচনীয় অবস্থা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া সম্ভব। আল্লাহপাক নবজাতককে জন্মের পর থেকে দু’বছর পর্যন্ত দুধ পান করানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সূরা বাকারার একটি আয়াতে তিনি বলেছেন : মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের সদাচারণের নির্দেশনা মনে করিয়ে দিতে গিয়ে সূরা লুকমানের একটি আয়াতে তিনি বলেছেন : আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করে। অতঃপর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সূরা কাসাসের একটি আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন : আমি মূসার মায়ের অন্তরে ইঙ্গিতে নির্দেশ দিলাম, তাকে দুধপান করাও।
রাসূলুল্লাহ সা. নবজাতককে দুধপান করানোর জন্য মায়েদের নির্দেশনা দিয়েছেন। একটি হাদিসে তিনি বলেছেন : স্তন্যদানকারী ও গর্ভবতী মহিলার ওপর থেকে রমজানের রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। (সহনীয় হলে রোজা রাখবে, নিজের বা শিশুর ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে এসব রোজা পরে রাখবে)।
অতঃপর আমরা আশা করি, আল্লাহ-রাসূল সা. এর বিধান অনুসরণ করবে সবাই। শুধু মুসলিম নয়, সমগ্র মানবমন্ডলী। কারণ, আল্লাহ-রাসূল সা. এর বিধান সমগ্র মানব জাতির জন্যই প্রণীত ও প্রযোজ্য। এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে তাদের কল্যাণ ও মঙ্গল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।