পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা সড়ক-মহাসড়কের কারনে গত ঈদুল ফিতরে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ঘরমুখো যাত্রীদের। সে সময় বেশিরভাগ কাজই জোড়াতালি দিয়ে করায় মেরামত করা সড়কগুলো আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। এর মধ্যে বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ সড়কের বেহাল অবস্থা। সবমিলে ভাঙাচোরা সড়ক এবারই ঈদ যাত্রায় শঙ্কা তৈরী করছে। যদিও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেছেন, এবার ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি হবে না। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছর ঈদের আগে সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের আয়োজন করা হয়। গত ঈদুল ফিতরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদ উদযাপন শেষে ঢাকায় ফেরার পথে যাত্রীরা দেখেছে সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেহাল দশা সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে বলে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ। বর্ষায় এরই মধ্যে আরও অনেক সড়ক-মহাসড়কে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল অঞ্চলের বেশিরভাগ সড়কই চলাচলের অনুপযোগী। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা (এইচডিএম) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাঙাচোরা সড়ক মেরামত ও পুনর্নিমাণে চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) প্রয়োজন ১৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। সওজের কর্মকর্তারা জানান, চলতি বর্ষায় মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ এখনও মেলেনি। এ কারণে আসন্ন ঈদের আগে সবগুলো সড়ক মেরামত করাও সম্ভব নয়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা (এইচডিএম) প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্বোধন করা হয়। এরই মধ্যে এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু অংশে পেভমেন্টে (পিচ ঢালাইয়ে) ফাটল এবং পটহোল (গর্ত) দেখা দিয়েছে। আবার রাজধানী থেকে বের হতেই নতুন নির্মিত যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর আট লেনের রাস্তায় কিছু অংশে পেভমেন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও পাথর উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, চার লেনের জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কও উদ্বোধন করা হয় ২০১৬ সালে। কিন্তু দুই বছরেরও আগে এ মহাসড়কেরও বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। কিছু অংশ এরই মধ্যে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। জায়গায় জায়গায় পেভমেন্টে ফাটল ও পটহোল দেখা দিয়েছে। এই মহাসড়কের ১০৭ থেকে ১১১ কিলোমিটার অংশ দুর্বল ও খারাপ। ১০১ থেকে ১০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চার কিলোমিটারের অবস্থা খারাপ ও খুব খারাপ। বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত এই দুই মহাসড়কের ভাঙনের কথা বলা হলেও ভাঙনের কারণ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি সওজের প্রতিবেদনে।
চলতি বছরের জুনের আগে সওজের সর্বশেষ এইচডিএম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক-মহাসড়কের প্রায় ২৭ শতাংশ এখনও ভাঙাচোরা, যাতায়াত অনুপযোগী। মহাসড়কের ৫৭ ভাগ ভালো হলেও সারা দেশে দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তার অবস্থাই খারাপ এবং সেগুলো চলাচলের অযোগ্য। এসব সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করতে হবে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশে এক হাজার ৭৩ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। খুব খারাপ রাস্তাও আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে। এর প্রভাব পড়তে পারে ঈদযাত্রায়। গত ঈদুল ফিতরের পর এবার ঈদুল আযহাতেও একই প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়ক-এই ক্যাটেগরিতে সওজের অধীনে সারা দেশে প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে সারা দেশের ১৭ হাজার ৯৭৬ কিলোমিটার রাস্তা জরিপ করে এইচডিএম। জরিপের ভিত্তিতে ২০১৭-১৮ সালের প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়। ওই প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের ৫৩ ভাগ সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ভালো। আগের বছরে ভালো ছিল ৩৯ ভাগ রাস্তা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর ও এ বছরের বর্ষায় সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আরও অনেক খারাপ হয়েছে। যেটা চলতি বছরের প্রতিবেদনে উঠে আসবে।
গত ঈদুল ফিতরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদের আগে সব সড়ক চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বৃষ্টি ও পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে তা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ কাজই করা হয়েছে জোড়াতালি দিয়ে। সে সময় সওজের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, বৃষ্টিতে মেরামত কাজ বিঘ্নি হচ্ছে। আবার নতুন নতুন সড়কও নষ্ট হচ্ছে। হয়েছেও তাই। গত দুই মাসে বৃষ্টিতে বহু ভালো সড়ক নতুন করে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার ভাঙাচোরা সড়কের অবস্থাও হয়েছে বেহাল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সওজের অধীন ১০টি জোনের মধ্যে রাস্তা সবচেয়ে খারাপ বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও সিলেটে । এর মধ্যে বরিশাল জোনের ৩২০ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। গত ৬ মাসে এ অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খানাখন্দে ভরা খুলনা-যশোর মহাসড়কখুলনা অঞ্চলের সব সড়ক ও মহাসড়কের বেহাল দশা। নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় মাগুরা-ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ও খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এ কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে ঈদযাত্রায় লোকজন ভোগান্তিতে পড়ার শঙ্কা করছেন।
যশোর বিমানবন্দর ও ভারত থেকে খুলনায় আসা-যাওয়ার অন্যতম রুট খুলনা-যশোর মহাসড়ক। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে ২০১৪ সালে যশোর অংশের ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়কের সদরের মুড়লি মোড় থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার সড়ক ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয় অভয়নগরের রাজঘাট থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার অংশের সড়ক। কিন্তু অত্যন্ত নিম্নমানের পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করায় দুই বছরের মাথায় মহাসড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মহাসড়কের খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা সামাল দিতে চাঁচড়া বাজার মোড়, মুড়লি, বকচর, রাজারহাট, বসুন্দিয়া, চেঙ্গুটিয়া, নওয়াপাড়া লেভেলক্রসিং, ভাঙাগেট, রাজঘাট এলাকার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তে ইট বিছিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ডালমিল, ঝিকরগাছা বাজার, গদখালী, বেনেয়ালি, নাভারণ বাজারসহ বিভিন্ন ভাঙা অংশ সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। এছাড়া আশাশুনি গোয়ালডাংগা-পাইকগাছা সড়ক, কয়রা-নোয়াবাকি-শ্যামনগর সড়ক, কেশবপুর- বেতগ্রাম সড়ক, তেরখাদা-বর্ণাল-কালিয়া সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাসচালক বিলাল হোসেন বলেন,ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে এ সড়কে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। বড় বড় গর্তে আটকে পড়ে অনেক সময় গাড়ি বিকল হয়ে যায়। ধীরগতিতে চলার কারণে সময় নষ্ট হচ্ছে। ঝাঁকুনির ভয়ে অনেক সময় যাত্রীরা বাস থেকে নেমে যেতে চান।
আরেক চালক মোরশেদ বলেন, খুলনা-যশোর মহাসড়কে ইট বিছিয়ে রাখার কারণে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় থাকে সবসময়। বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, নির্মান ও সংষ্কার কাজে দূর্নীতি ছাড়াও ওভারলোডেড যানযাবাহনের নিয়ন্ত্রনহীন চলাচলের কারণে বগুড়ার রাস্তা ঘাটের একট বিরাট অংশই এখন চলাচলের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে ।
ঢাকা , বগুড়া ,রংপুর মহাসড়কটি গত ঈদুল ফেতরের সময় জরুরীভাবে মেরামত ও সংষ্কারের পরে কিছুদিন ভাল ছিল। কিন্তু চলতি বর্ষা মৌসুমের কয়েকদফার ভারি বর্ষনের পর যেসব স্থানে দায়সারা ভাবে মেরামত করা হয়েছিল সেসব জায়গায় ফের বড়বড় গর্ত দেখো দিয়েছে। ফলে ওই পথে দুরপাল্লার কোচগুলোকে খুব সাবধানে চলাচল করতে হচ্ছে। মাঝে মাঝেই ভারি যানবাহনের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সড়ক ও জনপথ বিভাগের মতে রাস্তায় যতদিন না ধারণ ক্ষমতার অধিক পরিমানে মালামাল বহনকারী যান চলাচল বন্ধ না করা হবে ততদিন এই অবস্থার অবসান হবেনা ।
এদিকে বগুড়া কাহালু , বগুড়া নওগাঁ, বগুড়া-সারিয়াকান্দি, মোকামতলা , মহাস্থান, শিবগঞ্জ সহ বিভিন্ন আন্ত:জেলা কানেকটিভিটি সড়কগুলার পরিস্থিতি রীতিম মত ভয়াবহ। এই সব ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচলের সময় যাত্রীদেও সব সময় ভয়ে ভয়ে আল্লাহ রাসুলের নাম জপতে জপতে চলতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।