Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা উভয়েই পণ্য বিনিময়ে লাভবান হবে

ইনকিলাবের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব

বি এম হান্নান, আগরতলা (ত্রিপুরা) থেকে ফিরে | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। বিজেপির এই প্রভাবশালী নেতার আদি নিবাস বাংলাদেশে। চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলায় এখনো তার বংশধরের বসবাস।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মায়ের গর্ভে ভারত পাড়ি জমাতে হয়েছিল তাকে। সেখানেই তার জন্ম। শৈশব, কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে আজ তিনি রাজ্য সরকারের প্রধান। জনপ্রিয় এই মুখ্যমন্ত্রী ভারত ও বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে সমানভাবে ভাবতে আগ্রহী। অতি সম্প্রতি ইনকিলাবের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তার সেসব ভাবনাগুলো পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেছেন, ‘নিজেদের উৎপাদিত উদ্ধৃত্ত খাদ্য ও পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা উভয়ে লাভবান হতে পারে। বিশেষ করে ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। এখন দরকার দুই দেশের সরকারের মধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি-রফতানির ব্যাপারে কিছু চুক্তি করা।’ এ প্রতিনিধিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ত্রিপুরা রাজ্যটি ভারতের মূল ভ‚খÐ থেকে অনেক দূরে। দিল্লী, বোম্বের চেয়ে ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। বাংলাদেশের সাথে আমাদের যাতায়াত ও যোগাযোগ সহজ। তাই সেখান থেকে অল্প খরচে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পণ্য আনা-নেয়া করা সম্ভব।’
বাংলাদেশ থেকে কী কী পণ্য ত্রিপুরা যেতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টেসের বড় বাজার হতে পারে ত্রিপুরা। তৈরী পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে আমাদের এখানে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে আলু, চাল, শাক-সবজি, মাছ আসতে পারে।
ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে কী কী পণ্য আসতে পারে- এর জবাবে বিপ্লব দেব বলেন, আমাদের এখান থেকে চিনি, আনারস, চাপাতা, রাবার, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ রফতানি সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে দেড়শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এটি আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এর সাথে যোগ করে তিনি আরো বলেন, বৈধপথে এসব পণ্য আমদানি- রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হলে সীমান্তে চোরাকারবার বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি দুই দেশ এই খাতে ব্যাপক রাজস্ব আয় করতে পারবে। আমরা বাণিজ্যে ও সুবিধা বিনিময়ের সম্পর্ক করতে পারি।
মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে প্রদত্ত এই সাক্ষাৎকারে অত্যন্ত সহজ-সরল ও সাবলীলভাবে বাংলা ভাষায় নিজের দেশ ভারত ও পূর্বপুরুষের ভ‚মি বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন বিপ্লব কুমার দেব। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশটির দ্রæত উন্নয়নেরও প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা উভয়ে আমাদের উদ্ধৃত্ত খাদ্য ও পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে আমজনতাকে সরাসরি লাভবান ও সুবিধা দিতে পারি। তখন আমজনতা উভয় দেশের সরকারকে সমর্থন দেবে, সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। দু’দেশের অমীমাংসিত সমস্যাগুলোও সমাধান সহজ হবে। এভাবে আমরা দুই দেশ লাভবান হতে পারবো।
উদাহরণ দিতে যেয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মৌসুমে বাংলাদেশে প্রচুর আলু উৎপাদিত হয়। কোল্ডস্টোরে রাখার পরও সংরক্ষণের অভাবে অনেক আলু পঁচে নষ্ট হয়। দামও ঠিক মতো পায় না কৃষক। এই আলু ত্রিপুরায় আনা গেলে বাংলাদেশের কৃষকরা আলুর দাম একটু বেশি পাবে অন্যদিকে ত্রিপুরার মানুষও কম দামে পর্যাপ্ত আলু পাবে। কারণ, আমাদেরকে বিশাল পথ পাড়ি দিয়ে পাঞ্জাবসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আলু আনতে হয়। এতে জ্বালানি খরচ হয় প্রচুর। কুমিল্লা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া কিংবা চাঁদপুর থেকে আলু এলে আমাদের এখানকার কোল্ডস্টোরগুলোও আর খালি পড়ে থাকতে হবে না।
বাণিজ্যের এসব সম্ভাবনা নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে জানিয়ে বিজেপির এই গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, অচিরেই বাংলাদেশ সরকারের সাথে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সে জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় ও ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শীর্ষনেতৃত্ব বাংলাদেশ সফর করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 



 

Show all comments
  • বাবুল ১০ আগস্ট, ২০১৮, ২:১৫ এএম says : 0
    আশা করি সরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • আজগর ১০ আগস্ট, ২০১৮, ২:১৫ এএম says : 0
    সাক্ষাৎকারটি নেয়া জন্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ