পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের কোরবানির পশুরহাটগুলো আওয়ামী লীগসহ সরকার দলীয় অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সিন্ডিকেটের দখলে। দফায় দফায় টেন্ডার আহŸান করেও কাক্সিক্ষত দর পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এবছর প্রায় সবকয়টি হাটেরই দর কম পড়েছে। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে সিটি কর্পোরেশন অনেকটা বাধ্য হয়েই কম দরে হাট ইজারা দিচ্ছে। দুই কর্পোরেশনের ৮টি হাটের জন্য তিনদফায় টেন্ডার আহŸান করেও কোন ইজারমূল্য পাওয়া যায়নি। ওই হাটগুলোর বিষয়ে এখনো সিটি কর্পোরেশন কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও এসব হাট বসার প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। সিন্ডিকেট ধরেই নিয়েছে খাস আদায়ের জন্য তারাই হাটগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। তাই আগে আগেই হাট প্রস্তুতির কাজ সেরে নিচ্ছে। ফলে দুই সিটি কর্পোরেশন গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএসসিসি’র ১৩টি হাটের ৬টি ও ডিএনসিসি’র ১০টি হাটের ৩টিতে টেন্ডারে কেউ অংশ নেয়নি। এমন কি এই হাটগুলোর জন্য দরপত্র ক্রয় করেও জমা দেননি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে জানা গেছে, যাতে সিটি কর্পোরশন খাস আদায়ে যেতে বাধ্য হয়। এতে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট চক্র ইজারা মূল্য ছাড়াই হাটগুলো পেয়ে যাবেন। ফলে কোনো ধরনের অর্থ খরচ ছাড়া সিটি কর্পোরেশনকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে হাট থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করে নিতে পারবেন তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ হাটের মধ্যে ৭টি হাটের ইজারা সম্পন্ন হলেও বাকি ৬টি হাটের ইজারা দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত এখনো মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারের রয়েছে। অথচ গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া হাটগুলোর পাশাপাশি ইজারা প্রক্রিয়া অসম্পন্ন হাটগুলোরও হাট প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে ডিএসসিসি এলাকার ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠ সংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গা, এ হাটগুলো এখনও ইজারা প্রক্রিয়া অসম্পন্ন রয়েছে। এই হাটগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা হাট প্রস্তুতির কাজ করছে। ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটের গোপিবাগ অংশে ও কমলাপুর রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যায়ের সামনে দুটি সুবিশাল গেট তৈরী কাজ প্রায় শেষ। হাটের ভিতরেও বাঁশ, খটি স্থাপনের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৭টি হাটের ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। বাকি ৬টি হাটের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, ঈদের দিনসহ ৪ দিনের জন্য হাটের অনুমোদন দেয়া হয়, এর দু’দিন আগে প্রস্তুতি শুরু করতে পারে। ঈদের ৬/৭ দিন আগে হাট প্রস্তুতি শুরু করতে পারে যাদেরকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে শুধু মাত্র তারা। যে হাটগুলোর ব্যপারে এখনো কোন সিদ্ধান্তই হয়নি সেগুলোর প্রস্তুতির তো প্রশ্নোই আসে না। যারা এমন কাজ করছে তারা অবশ্যই আইন অমান্য করছে। আমরা এ ব্যপারে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিব।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন অস্থায়ী ২২ হাটের দরপত্র আহŸান করলেও এ পর্যন্ত ১৫টি হাটের ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছে। এর অধিকাংশরই নামমাত্র ইজারামূল্য দিয়েছেন আবেদনকারীরা। দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তা, কর্মচারি ও তাদের সুবিধাভোগী চক্রে সহায়তায় সেসব হাটগুলো অল্প মূল্যে ইজারা ভাগিয়ে নিয়েছেন সিন্ডিকেটচক্র। আর বাকি হাটগুলো খাস কালেকশনের শর্তে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের বরাদ্দ দেয়ার গোপন তৎপরতাও এখন প্রায় শেষের দিকে। এ অবস্থায় চলতে থাকলে এবার এ হাটগুলো থেকে ন্যূনতম রাজস্বও সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে না।
অভিযোগ উঠেছে, জাতীয় নির্বাচনের নিকটবর্তী সময়ে কোরবানি ঈদ আসায় এসব হাট থেকে নির্বাচনী খরচ সংগ্রহ ও নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে সরকারদলীয় ব্যক্তিরা তা ইজারা নিতে জোর তৎপর। এ তালিকায় রয়েছে সংসদ সদস্য, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। তাদের সহযোগিতা করছেন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী। সর্বশেষ পর্যায়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় এর বৈধতা দেবেন ঢাকার দুই মেয়র, যে পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন আওয়ামী লীগের সক্রিয় দুই নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবছর ঢাকার কোরবানির হাট ইজারায় অংশ নেয়া এক ইজারাদার ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা তাকে ডেকে নিয়ে বলে দিয়েছেন। এ বছর তিনি যেন কোরবানির হাট ইজারায় অংশগ্রহণ না করেন। কারণ সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে অনেক খরচ আছে। তিনি যেন অহেতুক ইজারায় অংশ নিয়ে হাটের দাম না বাড়ান। তিন দফার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে তারা কর্পোরেশন থেকে খাস আদায়ের শর্তে নাম মাত্র মূল্যে হাটগুলো নিয়ে তাদের নেত-কর্মী দিয়ে পরিচালনা করাবেন। এ থেকে উপার্জিত অর্থ আগামী নির্বাচনে খরচ করা হবে।
এবছর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গাবতলী স্থায়ী হাটসহ ১০টি স্থানে হাট বসবে। এরমধ্যে রয়েছে- উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর ডিওএইচ এর উত্তর পাশের সেতু প্রোপার্টি সংলগ্ন খালি জায়গায়, মিরপুর সেকশন-২ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, আশিয়ান সিটি হাউজিং, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদ নগর) হাট, তেজগাও শিল্প এলাকার পরিটেকনিক্যাল কলেজ মাঠ এবং গাবতলী স্থায়ী পশুরহাট।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হবে। এসব হাটের মধ্যে রয়েছে- মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জয়গা, ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেশনের আশপাশের খালি জায়গা, ঝিগাতলার হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইউ অ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর খালি জায়গা সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন খালি জায়গা।
দুই সিটি কর্পোরেশনের তথ্যানুযায়ী, ২২টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে ৭টির ইজারা এখনো সম্পন্ন হয়নি। অর্থাৎ, কাক্সিক্ষত মূল্য না পাওয়ায় পুনরায় দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। অথচ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২১ বা ২২ আগস্ট ঈদুল আজহা উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরের উত্তরখান ও দক্ষিণের প্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেশনের আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইউ অ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন খালি জায়গার হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়নি।
ডিএনসিসির ৭টি পশুর হাটের সরকারি ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৮৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৭ টাকা। আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩টি অস্থায়ী হাটের ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৫ টাকা।
হাটের ইজারা সম্পর্কে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের ৯টি হাটের মধ্যে ৮টির ইজারা সম্পন্ন হয়েছে। শুধু উত্তরখানের হাটটি এখনো ইজারা হয়নি। সেটার জন্য পুনরায় দরপত্র আহŸান করা হয়েছে।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের ১৩টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে ৭টি ইজারা হয়েছে, বাকি ৬টির জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। তারা যেভাবে বলবে সেভাবেই বাকি হাটগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।