পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গুজবে ভাসছে দেশ। ছড়িয়ে পড়ছে তথ্য বিভ্রাটের ডালপালা। শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন ইস্যুতে তথ্য আদান-প্রদানে ফেসবুকের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের মূল ধারার গণমাধ্যম বিশেষ করে ‘টিভি মিডিয়ার’ খবরের ওপর আস্থাহীনতায় আন্দোলন নিয়ে যার ‘যেমন খুশি’ ফেসবুকে মন্তব্য দিচ্ছে; সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে তথ্য প্রকাশ করছে; সে তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে অন্যেরা লাইক দিচ্ছে। তারাও আবার শেয়ার-লাইকের মাধ্যমে সর্বত্র গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এতে অবস্থা হয়ে পড়েছে চরম বিশৃংখল। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল ব্যাক্তি, বিশিষ্টজন ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই গুজব ছড়ানোর মূল দায় ডিজিটাল মাধ্যমের। বিজ্ঞানের এই অবদানকে নেতিবাচক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের মূল ধারার গণমাধ্যমগুলো এই ‘গুজব ছড়ানোর’ দায় এড়াতে পারে না। বৈরী পরিবেশে খবর সেলফ সেন্সর এবং ফিল্টারিং হলেও গণমাধ্যমের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত চিত্র জানতে অভ্যস্ত। কিন্তু মূল ধারা অধিকাংশ মিডিয়ায় প্রতি পাঠক-দর্শন আস্থাহীন হয়ে পড়েছে। মিডিয়াগুলো নিয়ন্ত্রিত এবং পক্ষপাতিত্বমূলক খবর প্রচার করায় মানুষ ‘খবরের ক্ষেত্রে’ মিডিয়াগুলো প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।
সে কারণেই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে খবরের জন্য ‘বিশ্বাসযোগ্য’ মাধ্যম মনে করছে। একে অন্যের সঙ্গে মতবিনিময় এবং খবরের আদান প্রদান করছে। খবরের এই আদান প্রদানই মূলত গুজব ছড়াচ্ছে চতুর্দিকে। কারণ ফেসবুক, টুইটার, ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ, ইউটিউব, ব্লগ ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর প্রচার ও তথ্য আদান প্রদানে যাচাই বাছাইয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। ব্যবহারকারীদের তেমন দায়বদ্ধতাও নেই। সে জন্যই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন ইস্যুতে যে যেভাবে পারছে তথ্য একে অন্যের সঙ্গে আদান প্রদান করছে। এতেই ছড়িয়ে পড়ছে গুজব। এই গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তথা, নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট ছড়ানোর অভিযোগে ২৯টি আইডি ও লিংক ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই রমনা থানায় মামলা করেছে ডিএমপি’র সিটিটিসি’র সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টিম। কাজী নওশাবা নামের এক অভিনেত্রী গ্রেফতার হয়েছে। শনিবার হঠাৎ করে গুজব ছড়ানো হয় ঢাকার ঝিকাতলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় চারজন প্রাণ হারিয়েছে। চারজন ছাত্রীকে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে এবং একজন ছাত্রের চোখ ওঠানো হয়েছে। ফেসবুকে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগের ধানমন্ডিস্থ নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তিনজনকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারা সংবাদ সম্মেলনে জানান হত্যাকান্ডের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কাউকে লুকিয়ে রাখাও হয়নি। প্রচারণা নিছক গুজব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই গুজব ছড়িয়েছে। এই প্রচারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ঝিকাতলায় হত্যাকান্ড গুজব ছড়ানোর ফলে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় এবং ওই কার্যালয়ের প্রতিটি কক্ষ তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখা হয়। কিন্তু কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। গতকালও মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে শিক্ষার্থীদের মিছিলে বোমা নিয়ে গুজব উঠে। মিরপুর কমার্স কলেজের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে। স্থানীয় নারী এমপিসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এসে তাদের মিছিল না করার এবং ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে পুলিশও তাদের অনুরোধ করে। বিকেলে বিভিন্ন কলেজের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে এলে ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। এতে শিক্ষার্থীরা চলে যায় এবং পুনর্গঠিত হয়ে আবার মিছিল বের করে। এসময় রোমান নামের অপরিচিত এক যুবক মিছিলে প্রবেশ করলে পকেটে ‘বোমা’ সন্দেহে শিক্ষার্থীরা তাঁকে মারপিট করে। অতপর শিক্ষার্থীরা তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিলে দেখা যায় তার পকেটে বোমা নয় আঠার কৌটা। অথচ বোমা গুজব নিয়ে হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদকে তথ্য প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করে ৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শনিবার ছাত্রদের উপর হামলার বিষয়টি নিয়ে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘জিগাতলায় একজন শিক্ষার্থীর চোখ তুলে ফেলা ও চার শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলা হয়েছে। সবাই এগিয়ে আসুন,রাজপথে নামুন’। অবশ্য র্যাবের দাবী কাজী নওশাবা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন রুদ্র নামের একজনের কাছে প্রভাবিত হয়ে তিনি এটা করেছেন। তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না এবং বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্যই এমন করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে ফোনালাপে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উসকে দেওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা থেকে মিলহানুর রহমান নাওমী নামে এক আইনজীবীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমির খসরুর সাথে নওমীর অডিও ফোনালাপ আন্দোলনের ৭ম দিনে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে এমন তথ্য দিয়ে গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গুজবে কান না দেয়ার জন্য সম্মানিত নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানায়। ডিএমপি থেকে বলা হয়, চলমান ঘটনাকে নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। অনেকে মুখে মুখোশ পড়ে ফেসবুকে লাইভ ভিডিও’র মাধ্যমে ৪ জন ছাত্র নিহত ও ৪ জন ছাত্রী রেইপ হওয়ার তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির পায়তারা করছে। প্রাথমিকভাবে ওই সংবাদ যাচাই করে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। আবার কেউ কেউ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য ও বক্তব্য প্রদান করছেন। তথ্য যাচাই-বাছাই ব্যতীত কোন মন্তব্য বা বক্তব্য প্রদান না করাই সমীচীন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর ক্রমাগত সহিংসতা চাপিয়ে দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সূ² রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে হামলায় জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। টিআইবি’র মতে, চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের মনে আস্থা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হওয়া এই আন্দোলন অব্যাহত। এক্ষেত্রে সরকারকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতার সাথে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের বল প্রয়োগ ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থেকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।