Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অচল চট্টগ্রাম

স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য জনদুর্ভোগ

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

সকালে ঘর থেকে যারাই রাস্তায় নেমেছেন তাদের সবাইকে পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। কারণ, সড়কে কোনো গণপরিবহন নেই। হঠাৎ উধাও বাস, মিনি-বাস, টেম্পু হিউম্যান হলার। অটোরিকশা, ইজিবাইক আর ব্যক্তিগত গাড়িও হাতেগোনা। এতে করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীর বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এই চিত্র ছিল জেলার ১৪টি উপজেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের সর্বত্র। দূরপাল্লার বাস চলাচলও বন্ধ থাকায় সড়ক পথে গোটা অঞ্চল বিচ্ছিন্ন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে। পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে সড়ক-মহাসড়কে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে অচল হয়ে পড়েছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।
গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেই এমন দুর্ভোগে চাকরিজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শ্রমজীবীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষকে নাকাল হতে হয়। নগরীর প্রতিটি মোড় ও সড়কে ছিল যাত্রীদের ভিড়। কেউ কয়েকগুণ ভাড়ায় রিকশায়, কেউ অটোরিকশায় আবার কেউ ভ্যানগাড়িতে চড়ে কর্মস্থলও অথবা গন্তব্যে পৌঁছান। বিপাকে পড়েন বিদেশ ও হজ যাত্রীসহ অসুস্থরা। শ্রমিকের উপস্থিতি কম হওয়ায় কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। ব্যাংক বীমা, অফিস-আদালত, সরকারি বেসরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমও বিঘিত হয়েছে। দেশের প্রধান বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ এই অঞ্চলে দিনভর দৃশ্যত হরতাল পরিস্থতি বিরাজ করে। গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগ ও পরিবহন শ্রমিকদের মহড়া দিতে দেখা গেছে। নগরীর ওয়াসা মোড়ে প্রতিদিনের মতো গতকালও শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে। সকাল থেকে পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানে ছাত্রলীগ কর্মীরা অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে শিবির সন্দেহে দুই ভার্সিটি ছাত্রকে ধরে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। ছাত্রলীগের হামলায় আহত হন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী আসিফ ও সিফাত।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের পাল্টা হিসেবে অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। এ অবস্থায়ও গত কয়েকদিন নগরীতে কিছু গণপরিবহন চলাচল করেছে। তবে গতকাল থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাফিক সপ্তাহের ঘোষণা দেয়ার পর গোটা নগরী যানবাহন শূন্য হয়ে পড়ে। চালকরা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি চেক করবে। আর এ কারণে তারা রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না। সকাল থেকে নগরী ফাঁকা হয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় অবস্থান নেয় পরিবহন শ্রমিকেরা। তারা ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলেও বাধা দেয়। মহানগরীর বাইরে উপজেলা সদরে সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন শ্রমিকেরা। এতে করে মহানগরীর সাথে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলা এবং আশপাশের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জেও অচলাবস্থা নেমে এসেছে। এসব বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতিদিন শত কোটি টাকার পণ্য বেচাকেনা হলেও পরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। রেলস্টেশনে যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় ছিল দিনভর।
এদিকে নগরীতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হয়। তবে রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় পুলিশ সদস্যদের চেকপোস্টে অলস বসে থাকতে দেখা যায়। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান একটি নিয়মিতম প্রক্রিয়া। গত সাত মাসে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের দায়ে যানবাহনের বিরুদ্ধে মোট এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৭১টি মামলা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬৫০ টাকা ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নগরীর ১৬টি এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বেশ কয়েকটি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি। আজ ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে নগরীতে র‌্যালি বের করা হবে। অঘোষিত ধর্মঘট প্রসঙ্গে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গণপরিবহন যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে ঢাকার নেতাদের নির্দেশনা পেলে তারা যানবাহন চলাচল শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ