Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজৈর ও শিবচরে সরবরাহ করা হচ্ছে দূষিত পানি

মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল : | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

মাদারীপুরে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দু’টি পানির পাম্প থেকে সুপেয় নিরাপদ পানির বদলে সরবরাহ করা হচ্ছে আয়রনযুক্ত নোঙরা ও দূষিত পানি। নিরাপদ পানির জন্য ব্যয়বহুল এ ব্যবস্থা এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুককি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পানি ব্যবহারে জন্ডিস, কলেরাসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তা। প্রতি মাসে নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্রাহকরা পাচ্ছেন না বিশুদ্ধ পানি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সুপেয় ও নিরাপাদ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ২০১২ সালের আগস্ট মাসে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর ব্যয় ধরা হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। এ অর্থের ৭০ ভাগ সরবরাহ করে সরকার ও ৩০ ভাগ সরবরাহ করে এসএস কনস্ট্রাকশন ও এসএস এন্টারপ্রাইজ নামের এনজিও। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ও শিবচর উপজেলার নিলখী ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয় দু’টি পানির পাম্প। চুক্তি অনুসারে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৩০ ভাগ অর্থ জোগানদাতা প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ গ্রহণ করে পাম্প দু’টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট হস্তান্তর করে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসাবাড়িতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া হয় দুই হাজার ৯০০ টাকা করে। দু’টি পাম্পের এক হাজার ১২০ জন গ্রাহককে মাসে ১৮০ টাকা করে পানির বিল পরিশোধ করতে হয়। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পানি সরবরাহের কথা রয়েছে।
একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করে জানান, পাম্প চালুর পর থেকে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পানির সুবিধা দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিদিন দেয়া হচ্ছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। তাও মাত্রাতিরিক্ত আয়রনযুক্ত নোঙরা ও দূষিত পানি দেয়া হচ্ছে। এরপরও প্রতি মাসে ১৮০ টাকা নির্ধারিত পানির বিলের বিপরীতে নেয়া হয় ২০০ টাকা করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কবিরাজপুর ইউনিয়ন ভবনের পেছনে নির্মাণ করা হয়েছে পানির বড় একটি ট্যাংক। পাশেই রয়েছে পানির পাম্প। পাম্পের পাইপগুলো যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে। আশেপাশে ময়লার স্ত‚প। একই চিত্র শিবচর উপজেলার নিখলী ইউনিয়নে। কবিরাজপুর ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণদী গ্রামের বাসিন্দা কুলসুম বেগম বলেন, ‘এই পানি খাওয়ার অযোগ্য, তবুও প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে বিল দিতে হয়। কিন্তু সরকারি এই পানি এখন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই পানিতে প্রচুর ময়লা আর আয়রন আসে। পানি কোনো পাত্রে রাখলে পাত্র একদিনেই লাল হয়ে যায়।’ মহিউদ্দিন নামে আরেক গ্রাহক বলেন, ‘পাম্প দিয়ে সবসময় ময়লা পানি আসে। কিছুদিন আগে এই পানি পান করে আমার ঘরের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে রাজৈর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ আলী মাতুব্বর বলেন, ‘৫০ ফিট উঁচু ও ১০০ ঘনমিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প দু’টি থেকে নোঙরা পানি সরবরাহের কথা নয়। আমি গত ছয় মাস আগে পানির পাম্প থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে দেখেছি, তখন খারাপ কিছু পাইনি। পাম্প দু’টি যেহেতু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে, সেহেতু আমরা বিষয়টি দ্রæত সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘কোনো পানির পাম্প থেকে যদি নোঙরা, আয়রনযুক্ত পানি সরবরাহ করা হয়, তবে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে এই পানি পান করলে জন্ডিস, কলেরা, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত যে কোনো রোগ হতে পারে।’ জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল, কিন্তু এ প্রকল্পে জনসাধারণ উপকৃত হয়নি। জনসাধারণকে সঠিকভাবে পানি সরবরাহ করা হয়নি। আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। কোনো অনিয়ম পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দূষিত পানি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ