Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ছাত্র বিক্ষোভে উত্তাল চট্টগ্রাম

অঘোষিত গণপরিবহন ধর্মঘটে জনদুর্ভোগ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৮, ১:১৬ এএম

পথচারীদের কেউ বলেন ‘কিশোর আন্দোলন’। কেউ কেউ মন্তব্য করেন ‘একটা ধাক্কার দরকার ছিল। দেশে রাস্তাঘাটে পশুপাখির মতো প্রতিদিন যেভাবে মানুষ মরছে তা আসলেই ভয়াবহ। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ আসতে হবে।
শিশু-কিশোররাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সড়কে নিয়ম-শৃঙ্খলা কাকে বলে’। কোনো কোনো গাড়ির চালককে আবার বলতে শোনা গেল, ‘কই রাস্তাঘাটে গত কয়েকদিনে দুর্নীতিবাজ পুলিশ ও বিআরটিএর লোকদের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি টোকেন বাণিজ্য তো আর এখন দেখিনা। বাচ্চারা গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চেক করুক আমাদের আপত্তি নেই। যাদের এতে আপত্তি তারা গাড়ি বের করেনি’। একে অন্যের কাছে কেউবা জানতে চান, ‘আজকে কোথায় কেমন ছাত্র বিক্ষোভ হলো’? গতকাল শনিবার দুপুরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়, নিউমার্কেট, কাজির দেউড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে পথচারী, কর্মমুখী নানা স্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত মন্তব্য-বক্তব্য থেকে উপরোক্ত মতামত বেরিয়ে এসেছে। নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সবার একাত্মতা ও সমর্থন এতে প্রকাশ পায়। চাটগাঁর ঘরে-বাইরে সবখানে চলছে এনিয়ে আলোচনা আর পর্যালোচনা। গতকালও অনেক অভিভাবককে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষাভকারী শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের মুখে খাবার তুলে দিতে। আবার নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভকারী স্কুল শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে মিষ্টিমুখ করাতে দেখা যায় পুলিশ কর্মকর্তাদের। দোকানিরাও কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন বিস্কুট, চকলেট, সিঙ্গারা-সমুচাসহ হরেক খাদ্যসামগ্রী।
এদিকে বাস-মিনিবাস কোচসহ বিভিন্ন যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত গণপরিবহন ধর্মঘটের কারণে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে গতকাল সপ্তাহের প্রথম দিনে জনদুর্ভোগ ছিল সীমাহীন। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় নিত্য কর্মমুখী অগণিত মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পে উৎপাদন এবং চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্যসামগ্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে পড়েছে এর বিরূপ প্রভাব। গণপরিবহন চালুর বিষয়ে প্রশাসন নির্বিকার। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, তারা ‘নিরাপত্তার অভাবে’ যানবাহন বের করতে পারছেন না। চট্টগ্রাম নগরীর সাথে সমগ্র দেশ সড়কপথে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম, তিনটি পার্বত্য জেলার যাত্রীরা গন্তব্যে যেতে পারছেনা। গতকালও নগরীর বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ রাখা হয়। হাজারো মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যান। তীব্র চাপ পড়েছে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেনের ওপর।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে চট্টগ্রাম গতকালও ছিল উত্তাল। নগরী ও শহরতলীর শতাধিক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম, বই-খাতা ভর্তি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশের সাথে চলমান ছাত্র বিক্ষোভে গতকাল বন্দরনগরীর নিউমার্কেট, ওয়াসা মোড়, জিউসি, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, চকবাজার, অক্সিজেন, আগ্রাবাদ, হালিশহর, কাজির দেউড়িসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ নানান শ্লোগান হাতে লেখা পোস্টার ফেস্টুন বহন করে সকাল থেকেই অবস্থান ও বিক্ষোভ-সমাবেশ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়কে চলাচলরত কার, মাইক্রেবাস ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ি, অটো রিকশাসহ যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করে দেখেন। ফিটনেস, চালকের লাইসেন্স না থাকা ও বিভিন্ন ত্রæটিপূর্ণ গাড়ির চাবি আটক করে তারা পুলিশের হাতে দেন। যানবাহন চেকিংয়ের কারণে নগরীর অনেক স্থানে যানজট সৃষ্টি হয়। রিকশা চলাচলও হঠাৎ কমে গেছে।
আবার শিক্ষার্থীদেরই যানজট নিরসন ও যান চলাচলে সহায়তা করতে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা গাড়ির ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখার সাথে সাথে নির্দিষ্ট লাইনে যান চলাচলে বাধ্য করেন। চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, সিটি কলেজ, কমার্স কলেজ, বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পুলিশ লাইন্স স্কুল, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ, মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান ও সমাবেশ করেন। পুলিশ বিভিন্ন সমাবেশস্থলের কাছে থাকলেও উটকো কোনো ঝামেলায় জড়ায়নি। এসব সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ৯ দফা ন্যায্য দাবি পূরণে বাস্তবে কোনো অগ্রগতি নেই। দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন হলেই আমরা স্কুল-কলেজে ফিরে যাবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ