Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আজ থেকে সারাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৮, ১:১৬ এএম

নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে সাহস নিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ কঠোর হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের এখন ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ রোববার থেকে সারা বাংলাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করবে। ট্রাফিক সপ্তাহে লাইন্সেস ছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ি, হেল্পার দিয়ে গাড়ি চালানোসহ ট্রাফিক আইনের যে কোনো ব্যত্যয় হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইসঙ্গে মোটর সাইকেলে তিনজন চড়া, ট্রাফিক সিগন্যাল ভায়োলেশন করা, উল্টো পথে চলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। স্কুল-কলেজের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে ট্রাফিকের কাজ করছে। চালকের লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার পাশাপাশি সড়কে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের রাজপথ দখলের কারনে রাজধানীসহ সারাদেশে অনেকটাই নিস্ক্রিয় ট্টাফিক পুলিশ। তাদের কাজের গতি ফিরিয়ে আনতে আজ (রোববার) থেকে রাস্তায় আইন প্রয়োগে কঠোর অবস্থান নিয়ে মাঠে নামছে পুলিশ। রাজধানীসহ সারাদেশেই পালন করা হবে ট্টাফিক সপ্তাহ। এ জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সকলকে গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স সঙ্গে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। একই সাথে তিনি শিক্ষার্থীদের রাস্তা ছেড়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সাধারণ ছাত্রদের আমরা স্যালুট করি। যে কাজটি আমাদের আরও আগে করার কথা ছিল, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা তা পারিনি। আজকে শিক্ষার্থীরা আমাদের নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়, তারা আমাদের পরিপূরক। ভবিষ্যতে অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন করতে আমরা নৈতিক ভিত্তি পেয়েছি, আইন প্রয়োগ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সাহস পেয়েছি। ট্রাফিক আইন যুগোপযোগী করার জন্য গণপরিবহন ও ট্রাফিক আইন নামে নতুন একটি আইন সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে হবে বলেও শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে নাশকতা ঘটার শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি এখন তাদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে, হীন ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহারের জন্য নানা অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আন্দোলনকে পলিটিসাইজ করার জন্য নানা অপচেষ্টা চলছে, যার ফলে আমরা এ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বেশে ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ আন্দোলনে ঢুকে নানা ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক অপচেষ্টা চালাতে সক্রিয় বলে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা সূত্রে আমরা প্রমাণ পেয়েছি, স্কুল ড্রেস বিক্রি ও তৈরির হিড়িক পড়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে পড়ে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকে অন্য খাতে প্রবাহিত করে ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের প্ল্যাকার্ডে, ফেইসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, এতে পুলিশকে নেতিবাচকভাবে উপস্থানের অপচেষ্টা চলছে। ২০১২-১৩ সালে বাসে আগুনের ঘটনায় পুলিশ যেসব আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেসব ছবি শেয়ার করে এখন পুলিশকে ঘিরে উদ্দেশ্যমূলক ও ভিত্তিহীন’ অপপ্রচার চলছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, পুলিশ বিনয়ের সাথে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করে আছে। যে কোনো উস্কানি ও দুরভিসন্ধি উপেক্ষা পুলিশ পেশাদার দায়িত্ব পালন করছে। এ আন্দোলন চলাকালে রাজারবাগ, মিরপুর পুলিশ লাইন্স ও কাফরুল থানায় হামলার ঘটনার নিন্দা জানান ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ৩১ বছরের কর্মজীবনে আমি রাজারবাগ ও মিরপুর পুলিশ লাইনে হামলার ঘটনা শুনিনি। শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় হামলায় বেশ কজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, এটা সাধারণ ছাত্রদের দ্বারা হতে পারে না। যারা তাদের উস্কানি দিচ্ছে, তারা নৈরাজ্য তৈরি করে জনগণের পুলিশের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাইছে। পুলিশের কাজ শিক্ষার্থীরা করায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামতে ভয় পাচ্ছে। যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। কাঁচা শাকসবজি, মাছ, মাংসের দাম বেড়ে গেছে। জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মহানগরে এমন জনদুর্ভোগ দীর্ঘ দিন চলতে পারে না।
পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পেছনে অশুভ মহলের উস্কানি রয়েছে। কারণ, এসব উদীয়মান তরুণ ছাত্রদের পুলিশ ও সরকারকে প্রতিপক্ষ মনে করার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে তাই ঘটছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো অশুভ শক্তির ইন্ধন রয়েছে। এদিকে পরিবহন শ্রমিকরাও মাঠে নেমেছে। এতে করে শিক্ষার্থী আর পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও আছে। এতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। যা সরকারের জন্য কল্যাণকর হবে না। ফলে পুলিশকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মাঠে থেকে নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য ইতোমধ্যে শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ