Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের দখলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

অন্দোলনেও টনক নড়েনি

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল চান্দিনা (কুামল্লা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

প্রশিক্ষণ ছাড়াই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীবোঝাই চার চাকার মেসি-মারতি (মিনি মাইক্রোবাস) গাড়ি নিয়ে ছুটছেন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ চালকরা। এই চালকদের অনেকেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। এরা কেউ আইনের তোয়াক্কা করে না। ওস্তাদের কাছ থেকে শিখে কোনো প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই তারা বসছে চালকের আসনে। মেসি-মারতি চালিয়ে দক্ষ বিবেচিত হলে সেই চালকরা চাকরি পায় দূরপাল্লার বাসে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, ওস্তাদরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে চালক তৈরি করছেন ব্যস্ত রাজপথে। আর এ ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের কারণে খেসারত দিচ্ছেন মহাসড়কে চলাচল করা মানুষ। অদক্ষ হাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছেন অনেকেই। অথচ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের টানা সাত দিনের নিরাপদ সড়ক চাই অন্দোলনের পরও এসব অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালকদের টনক নড়েনি। এরা পুলিশের সামনে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও রয়েছেন নীরব ভূমিকায় ।
হাইওয়ে পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করলেও অনেকে এজন্য বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দুষছেন গাড়ি মালিকদের। তবে মালিকদের ভাষ্য, প্রচুর চালক সঙ্কটের কারণে কেউ কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিতে বাধ্য হন। এক্ষেত্রে চালক সংগঠনের কর্তৃত্বের কাছে মালিকরা অসহায় বলে অভিযোগ করেছে একাধিক মালিক সমিতি।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা বন্ধ করে দেয়ার পর লক্কর, ঝক্কর পুরনো গাড়ি দিয়ে কুমিল্লা ক্যন্টারমেন্ট-চান্দিনা-মাধাইয়া-ইলিয়টগঞ্জ ও গৌরীপুর লেগুনা ও মেসি-মারতি সেইফ লাইন নামে শত শত গাড়ি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় চালক নেই। তাই গাড়ি মালিকরা বাধ্য হয়ে অদক্ষ, শিশু কিশোরদের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দিচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়ে কেন কিশোর চালকের গাড়িতে উঠেছেন জানতে চাইলে যাত্রী আব্দুর রহমান বলেন, গাড়িতে ওঠার সময় চালকের দিকে তাকাননি। সামনে পেয়েছেন, তাই গাড়িতে উঠে পড়েছেন। অপর যাত্রী নাজমুল বলেন, এই সড়কে ১৩-১৪ বছর বয়সী অনেক চালক আছে। যানবাহনের সঙ্কটের কারণে ঝুঁকি আছে জেনেও তাঁরা এসব গাড়িতে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে হাজার হাজার গাড়ি দ্রুতগতিতে প্রতিদিন চলাচল করছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকরা বয়সসুলভ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকে।
লাইসেন্সপ্রাপ্ত একাধিক চালক অভিযোগ করে বলেন, কিশোর বয়সী চালকরা মালিকদেরকে দৈনিক জমার টাকা বেশি দেয় বলে মালিকরা তাদেরকেই গাড়ি দিয়ে থাকে। তাদের কারণে আমাদের বেকার থাকতে হচ্ছে। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট-চান্দিনা সড়কে চলাচল করা মেসি-মারতি’র একাধিক মালিক জানান, আমরা বরাবরই অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের দিয়ে গাড়ি চালানোর বিরোধী। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাপট এতো বেশি যে তাদের সাথে পেরে ওঠা যায় না। পুলিশের সঙ্গে এসব শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের রয়েছে দহরম মহরম। পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব শ্রমিক নেতারা এমনই শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন, তাদের কাছে মালিকরা এক রকম জিম্মি হয়ে আছে। মেসি-মারতি গাড়ীর মালিক মিজানুর রহমান বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দিয়ে গাড়ি চালানোর পক্ষে নন বলে জানিয়ে বলেন, সমস্যা হচ্ছে, লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া এই পেশার প্রবণতা হচ্ছে, হেলপাররাই পরবর্তীতে চালক হয়ে আসেন। অন্যদিকে, মালিকদের সামনে বিকল্প না থাকায় তারাও অগত্যা তাদেরকে গাড়ি দিয়ে দেয়। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করছে হাইওয়ে পুলিশ। কিশোর চালকদের হাতে গাড়ি না দিতে বিভিন্ন সময়ে মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ