Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা ছুটির দিনেও রাস্তায়

দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে, নিসচা ও নাগরিক সমাজের মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

টানা ৬ষ্ঠ দিনের মতো গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে তাদের উপস্থিতি ছিল কম। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় বড় ধরণের কোন কর্মসূচি দেয়নি আন্দোলনকারীরা। আজ শনিবার থেকে আবারও আন্দোলন শুরু হবে বলে জানিয়েছে তারা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। এ দিকে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি রাজধানীতে ইলিয়াস কাঞ্চনের নিসচা ও নাগরিক সমাজসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন করে।
মিরপুর: বেলা পৌনে ১২টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে জড়ো হন মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বিউইবিটি, বিসিআইসি কলেজের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় তারা নৌমন্ত্ররি পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেন এবং মাঝে মধ্যে গাড়ির লাইসেন্স ও কাগজপত্র চেক করেন। তাদের একজন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী রুবিনা ফারহানা বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দাবি মানার কথা বললেও এখনো আন্দোলন করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এক শিক্ষার্থী বলেন, বাসের চাপায় দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরেও যে মন্ত্রী হাসতে পারেন তিনি আর মানবিক মানুষ থাকতে পারেন না। তার কাছে দু’জনের মৃত্যু তুচ্ছ বিষয়। আমাদের কথা হল-তিনি কোনভাবেই এদেশের মন্ত্রী থাকতে পারেন না। আমরা অতিসত্তর নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করছি। শাজাহান খান পদত্যাগ করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সবাই ঘরে ফিরে যাবে বলে তিনি জানান।
শাহবাগ: মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকার মৌখিকভাবে ৯ দফা দাবি মেনে নিয়েছে। মৌখিক কথার কোন ভিত্তি নেই। অতীতে অনেকে এমন মৌখিক আশ্বাস দিয়ে বাস্তবায়ন করেনি। তাই আমরা লিখিত প্রজ্ঞাপন জারীসহ দ্রুত এসব দাবির বাস্তবায়ন চাই। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কোনও ভাংচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিনি। আমরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে এসেছি। কোন ভাংচুর করতে আসিনি। ভাংচুর আমাদের কাজ নই।
বেলা সাড়ে ১০টার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শাহবাগে এসে জড়ো হতে শুরু করেন। এ সময় তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে দ্রুত ৯ দফার বাস্তবায়ন দাবি করেন। বিক্ষোভকালে অনেক শিক্ষার্থীকে গাড়ির লাইসেন্স ও কাগজপত্র চেক করতে দেখা গেছে।
বেলা ১১টার দিকে গাড়ির কাগজ পত্র চেক করার অভিযোগে আমিনুল ইসলাম নামে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) এক কর্মীকে আটক করে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকজন শিক্ষার্থী শাহবাগ মোড়ে গাড়ির লাইসেন্স চেক করছিল। তখন আমিনুল ইসলামও একটি প্রাইভেট কারের লাইসেন্স চেক করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তার পরিচয় জানতে চায়। তখন তিনি সদুত্তর দিতে না পারলে শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে আটক করে। পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছাত্র না হয়েও লাইসেন্স চেক করতে গেলে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ধানমন্ডি: বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডির ২৭ নম্বর, আড়ং ও আসাদগেইট এলাকায় অবস্থান নেয় কয়েকশ শিক্ষার্থী। তারা কেউ বিক্ষোভ করছিলেন, আবার গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স চেক করেন। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড দেখা গেছে। আন্দোলনকারীদের ফারহিনা বলেন, আজ শুক্রবার সপ্তাহিক ছুটির দিন ও বিসিএস পরীক্ষা থাকায় বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। তবে গণস্বাক্ষর অভিযানের চিন্তা রয়েছে বলে ওই শিক্ষার্থী জানান।
উত্তরা: উত্তরার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তবে যানচলাচলে কোন বাধা দেওা হয়নি। আন্দোলনকারী আশা ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী বলেন, দাবি বাস্তবায়নের জন্য শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে এসেছি। লিখিতভাবে প্রজ্ঞাপন জারী না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। আজ সকাল থেকে আবারও আন্দোলন শুরু করবেন বলে তিনি জানান।
আন্দোলনের নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা মহানরগ পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মানববন্ধনে দাঁড়ানোর সময় শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড চেক করা হয়। এছাড়া রাজধানীর সব জায়গায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল বলে তিনি জানান।
নাগরিক সমাজের মানববন্ধন: এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনার নামে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ হত্যা বন্ধ ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহীতা নিশ্চিত করাসহ ২১ দফা দাবি জানিয়েছে দেশের বিশিষ্টি ব্যক্তি ও সংগঠন। গতকাল বেলা ১১টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক ‘নাগরিক সমাজ’র ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। পরিবেশবাদী সংগঠন বাপাসহ ৩২টি সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করে।
সমাবেশে বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদসহ ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান, জনকল্যাণ সংস্থার শিবলী আনোয়ার, সিপিডির সিনিয়র ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নারী গ্রন্থ প্রবর্তনার সভানেত্রী ফরিদা আক্তার, বাপার যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব, পুরান ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের আহবায়ক মো. সেলিম, সচেতন নগরবাসীর সভাপতি জি এম রুস্তম আলী, বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদসহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সড়কপথ এক আতঙ্কের নাম। সড়কে যা চলছে তা কোন দুর্ঘটনা নয়, এটি স্পষ্ট হত্যাকান্ড। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ ঘাতকদের হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না। তারা বলেন, পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অধিক মুনাফার প্রবণতা ও পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য এ অবস্থার জন্য দায়ী। সরকার শুধু দাবি মেনে নেওয়ার কথা বললে হবে না এসব দাবি দ্রæততর সময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ সময় তারা ২১ দফা দাবি উত্থাপন করেন। উল্লেখযোগ্য দাবীর মধ্যে- নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, দায়ীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত, সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল আচরণ, নিজস্ব এলাকায় সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, চলমান আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতন বন্ধ, মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর যুগোপযোগী সংশোধনী ও বাস্তবায়ন, পথচারী ও অযান্ত্রিক যান নিরাপদে চলার পরিবেশ তৈরি, উল্টোপথে গাড়ি চালানো বন্ধ, দুর্নীতিমুক্ত রেখে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সড়কপথ মেরামত ও পরিচালনা, ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের নিষিদ্ধ করে শাস্তি নিশ্চিতসহ হেলপারদের গাড়ি চালনা বন্ধ, পরিবহন মালিকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা, বিআরটিএ দালালমুক্তকরণসহ চালকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষ করণে প্রশিক্ষণ একাডেমি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
রাজপথে ইলিয়াস কাঞ্চন: এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনারোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল বেলা সোয়া ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই- নিসচা’। সংগঠনের নেতা ইলিয়াস কাঞ্চন আগামী রোববার থেকে ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের শর্ত দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘আগামী রোববার থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে। না হলে আমি নিজেও রাস্তায় নেমে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলন করবো’।
মানববন্ধন ও সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সেফ দ্যা রোড, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি, ইনছানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ ও স›দ্বীপ সমিতি ঢাকা অংশগ্রহন করে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, শুক্রবার ও শনিবার অফিস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা না গেলেও রোববার থেকে কাজ শুরু করতে হবে। প্রথমত, চালকদের লাইসেন্স থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করণসহ সংশ্লিষ্ট সেক্টরে যারা আছেন তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এতদিন যে কাজটি হয়নি তা শিক্ষার্থীরা আমাদের শিখিয়ে গেল। তিনি শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে পড়াশুনায় মনোযোগী হতে বলেন। এ সময় তিনি অভিভাবক, সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সন্তানদের প্রতি নজর দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করেন।



 

Show all comments
  • Boby ৪ আগস্ট, ২০১৮, ২:১২ এএম says : 0
    দেশে দক্ষ চালক দরকার। কারণ চালকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে গন্তভে যাবে না রাস্তার বাহিরে গিয়ে পড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • Enamul Emon ৪ আগস্ট, ২০১৮, ২:১৫ এএম says : 0
    লাইসেন্স ছাড়া কোন চালক গাড়ি চালাতে পারবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Monirul Islam ৪ আগস্ট, ২০১৮, ২:১৯ এএম says : 0
    আগামীতে কোন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন হবেনা। এরাই একদিন দেশের হাল ধরবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তারেক মাহমুদ ৪ আগস্ট, ২০১৮, ২:২০ এএম says : 0
    বাস বন্ধ হলেও আইন তৈরী হোক। নিরাপদ সড়ক চাই। এই দাবি থেকে সরে যাবেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • M Shohag ৪ আগস্ট, ২০১৮, ২:২৭ এএম says : 0
    নিরাপদ সড়ক আইন পাশ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ