বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামী মূল্যবোধের শিক্ষার অভাব থেকে আত্মহত্যার দিকে মানুষ চলে যায়। সমাজের সহায়তা না পাওয়া এবং অভিভাবকদের মনে ধৈর্য সবর ও আল্লাহ নির্ভরতা না থাকা অনেক মানুষকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়। পরীক্ষায় কাক্সিক্ষত নাম্বার না পেয়ে যেসব ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করে, তাদের ওপর পরিবার ও সমাজের অন্যায় চাপও তাদের আত্মহত্যার জন্য কম দায়ী নয়। যদি তারা তকদিরে বিশ্বাসী হতো, তাহলে চরম মুসিবতে ধৈর্যধারণ তাদের পক্ষে সহজ হতো। পরকাল ও হিসাব কিতাব বিশ্বাস করলে আত্মহত্যার মতো মহাপাপ মানুষ করত না। বিশ্বের সব ঈমানহীন মানুষই সাধারণত আত্মহত্যা করে। প্রকৃত ঈমানদার আত্মহত্যা করতে পারে না। দ্বীনি শিক্ষার অভাবেই মানুষ এত বড় ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশে সারা জীবনই মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলা করে বেঁচে আছে। অনেক সময় বছরের পুরো ফসলই নষ্ট হয়ে যায়। কৃষক দুঃখ ও হতাশার সমুদ্রে পড়ে যান। কিন্তু আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তাকে বাঁচতে সাহায্য করে। কেননা, রিজিক তিনিই দান করেন। ব্যবসা, কৃষি, চাকরি ইত্যাদি মাধ্যম ছাড়া আর কিছু নয়।
আল্লাহপাক চাইলে এসব মাধ্যম ছাড়াও মানুষকে রিজিক দিতে পারেন। যে জন্য আমরা দেখি সংবাদপত্রে আসে ভারতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন কৃষক আত্মহত্যা করে। আর বাংলাদেশে এ সংখ্যা শূন্যের কোঠায়। এদেশে দু’চারটে ঘটনা যা ঘটে তার পেছনে এনজিওদের ক্ষুদ্র ঋণের কড়া তাগাদা, অসম্মান ও সীমাহীন চাপই দায়ী। সাধারণ অভাব বা ফসলহানী নয়। তা ছাড়া সুদি ঋণগ্রহিতা ঈমান থেকেও দূরে সরে যায়। তার ওপর আল্লাহর রহমত-বরকত বিপন্ন কৃষকের মতো বর্ষিত হয় না। যে মা তার দুইটি শিশুকন্যাসহ সম্প্রতি আত্মহত্যা করল, তার মানসিক অবস্থা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। কারণ, সে নিজে আত্মহত্যা করা ছিল বড় একটি অপরাধ, কিন্তু নিজের শিশুর কন্যা দু’টিকে মেরে ফেলা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। এর কোনো অধিকার মা’কে দেয়া হয়নি। এখানে মা দু’টি মানুষ খুন ও নিজেকে খুন, এমন তিনটি অপরাধ সংঘটিত করেছে। অথচ এদেশে কোটি কোটি মা এমন আছে যারা শিশু সন্তানদের নিয়ে তার চেয়েও খারাপ অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। এখানে এই মা নিজে চাকরিজীবী ছিল। তার স্বামীও সরকারি চাকরি করত। কী অসুবিধা এমন হতে পারে যার জন্য মা তার দুই নিষ্পাপ শিশুকন্যাসহ জীবন দিলো। এখানে দ্বীনি শিক্ষার অভাব যেমন কার্যকর, তেমনি কোনো প্রকৃত ওলামা-মাশায়েখ বা ধর্মীয় জ্ঞানী মুরব্বির তত্ত্বাবধানের ছায়া মাথার ওপর না থাকাও এমন ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে দায়ী। সুস্থ ধর্মীয় ও সামাজিক জীবন হতাশ মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে। বড় বড় গোনাহ ও মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত থেকে রক্ষা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।