পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল হত্যার রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে (র্যাডিসন হোটেলের উল্টোদিকে) বেপরোয়া বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে ১৩ জন। এর মধ্যে ২জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত একজনের নাম আবদুল করিম, সে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী দিয়া খানম ওরফে মিম। সে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব কাজ কাজ করে। বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনার পর গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি পেতেই হবে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি হবে। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, যে যতটুকু অপরাধ করবে সে সেভাবে শাস্তি পাবে। যে শাস্তি হবে সেই শাস্তি নিয়ে বিরোধিতার কোনো সুযোগ এখানে নেই।
মতিঝিলের ব্যবসায়ী মোজাহিদুল ইসলাম ও আবদুল মান্নান গতকাল দুপুরে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে নির্মম ও নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করেছে হানিফ পরিবারের বাস চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার। বাসে ঊঠতে গিয়ে আহত হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর নিষ্ঠুরভাবে পায়েলকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয় খালের পানিতে। এটি ছিল হানিফ পরিবহনের বাস চালকদের পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। হানিফ পরিবহনের মালিক পক্ষ্যও এ বিষয়ে কোন মানবতা দেখাননি। তারা যোগাযোগ করেননি নিহতের পরিবারের সাথে। রোববার বিমানবন্দর সড়কে ভিন্ন কায়দায় বাস চালক বাস চাপা দিয়ে মেধাবী ২জন শিক্ষার্থীকে হত্যা এবং ১৩জন শিক্ষার্থীকে আহত করেছে। দেশের মেধাবী ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এ ধরনের হত্যা প্রতিরোধের পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী বলে তারা মন্তব্য করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান ও কাউসার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দুঘটনার পর ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে একাত্ব ঘোষনা করে বিক্ষোভ প্রতিবাদে অংশ নেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় বিমানবন্দর সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে সাধারন যাত্রীরা বাস থেকে নেমে বিক্ষোভে অংশ গ্রহন করে। সাধারন মানুষ বাস চালকদের উপর যে কতটা ক্ষুব্ধ তা প্রতিবাদের ঘটনা প্রত্যক্ষ না করলে বুঝা যাবে না। মানুষ এ ধরনের বাস চালকদের হাত থেকে রেহাই চায়। তারা আরো বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশে যে বেপরোয়া আচরন করছে বাস চালকরা এর প্রতিকার হওয়া জরুরী। বাস চালকদের বেপরোয়া বাস চালানোর কারনে পথচারী নিহত হওয়ার পাশাপাশি বাসে অবস্থানরত সাধারন যাত্রীরাও বিভিন্ন সময় গুরুত্বর আহত হচ্ছেন। বাস চালকদের এ ধরনের নৈরাজ্য আমরা দেখতে চাই না। এখনই এর প্রতিকার হওয়া উচিত বলে তারা মন্তব্য করেন।
কুর্মিটোলা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক লে. কর্নেল মো. ছগির মিয়া জানিয়েছেন, দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন ছাত্র ও আরেকজন ছাত্রী রয়েছে। আহত ১৩জনের চিকিৎসা চলছে।
গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল আহাদ জানান, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে বাসচালক ও তার সহকারীকে (হেলপার) পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দর সড়কের অদূরে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজটির অবস্থান। ছুটি শেষে বাসে ওঠার জন্য কলেজটির বেশ কিছু শিক্ষার্থী র্যাডিসন হোটেলের উল্টো পাশে সিএমএইচ স্টপেজে অপেক্ষা করছিলেন। এসময় কালশি ফ্লাইওভার দিয়ে মিরপুর থেকে উত্তরাগামী একটি বাস ওই স্টপেজে এসে দাঁড়ালে সেটিতে শিক্ষার্থীরা উঠার চেষ্টা করছিলেন। ঠিক সেই সময় যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে একই রুটের জাবালে নূরের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১১৯২৯৭) দাঁড়ানো বাসটির বাম পাশ দিয়ে দ্রæতগতিতে ঢুকে পড়ে এবং দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে পড়ে। বাসটির চাপায় ঘটনাস্থলেই কলেজ শিক্ষার্থী দিয়া আক্তার মিম ও আব্দুল করিম নিহত এবং আরও ১৩/১৪ জন গুরুতর আহত হয়। পথচারীরা সঙ্গে সঙ্গে আহতদের নিকটস্থ কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর বাসটিকে আটক এবং চালক ও হেলপারকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এ দুঘর্টনার খবর পেয়ে কলেজটির শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও জনতা এ ঘটনায় ইসিবি চত্বরের সামনে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং আরও অর্ধ শতাধিক বাস ভাঙচুর করে। এতে বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে কয়েক ঘন্টা পর সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী জীবন বলেন, শিক্ষার্থী নিহতের খবর কলেজে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রেডিসন হোটেলের সামনে থেকে বনানী উড়াল সেতু ও কালশী উড়াল সেতু এবং শেওরা পর্যন্ত শতাধিক বাস ভাঙচুর করে। এসময় শিক্ষার্থীরা রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর থেকে ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়।
ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত এসআই মুন্নি আক্তার জানান, বিক্ষোভের কারণে ওই সড়কের যানবাহনকে অন্য সড়ক দিয়ে বের করে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
ম্যাজিস্ট্রেট হতে চেয়েছিল মিম
মেয়ে দিয়া খানম মিমের দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরেই ছুটে আসেন বাবা জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু হাসপাতালে এসে শোনেন ততক্ষণে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে দিয়া। লাশের সামনে দাঁড়ানো বাবা বারবার মূর্ছা যান। ধরে বাইরে বসানোর পর জ্ঞান ফেরে তার। শুরু করেন ফের আহাজারি। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মেয়েকে কলেজে পাঠানোর পর থেকেই আমার খারাপ লাগছিল। এখন বুঝলাম কেন এমন হচ্ছিল। যদি আগে বুঝতাম এমন করে দুর্ঘটনায় আমার মেয়ে মারা যাবে তবে একা ফিরতেই দিতাম না। তিনি বলেন, আমার ইচ্ছের কবর হয়ে গেল। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে দিয়াই ছিল সবার ছোট। ওর ইচ্ছে ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হবে। কিন্তু ওর মৃত্যুতে সে ইচ্ছেরও মৃত্যু হলো। কলেজ থেকে বাসায় ফেরার আর অপেক্ষা শেষ হবে না। পাশেই কান্নায় অসুস্থ হয়ে পড়া দিয়ার বান্ধবী রূপা বলেন, এভাবে দিয়া চলে যাবে বুঝিনি। হাসিখুশি দিয়া ছিল আমার বেস্ট বন্ধু। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
সেনা কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল করিমের
বিমানবন্দর সড়কের বাস চাপায় প্রাণহারানো আবদুল করিম ওরফে রেজাউল করিমের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হবেন। ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর খালাতো ভাইয়ের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করতেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি গান গাইতেন করিম। তার গলায় মোহিত পরিচিতজন সবাই। ইউটিউবে তার একটি গানের চ্যানেলও রয়েছে। তার খালাতো ভাই মেহজাব উদ্দিন। তিনি বলেছেন, এখন একটাই চাওয়া। যার কারণে রাজু মারা গেছেন, তার যেন বিচার হয়। আমাদের যে স্বপ্ন ছিল সেটা ভেঙে গেল এক দুর্ঘটনায়। আমি ভাই হারিয়েছি কিন্তু ওকে যারা মেরেছে তাদের যেন বিচার হয়।
মেহজাব উদ্দিন বলেন, রাজু যখন ক্লাস ফাইভে পড়াশোনা করত তখন ওর বাবা মারা যায়। পরে সে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে আমাদের ঢাকার এয়ারপোর্ট এলাকার আশকোনা বাজারের পাশের বাড়িতে চলে আসে। এখানে থেকেই পড়াশোনা করত সে। খালা (রাজুর মা) গ্রামেই থাকেন। আপন ছোট ভাইয়ের মতো ওর সাথে সর্ম্পক ছিল আমাদের। সে প্রায় আমার কসমেটিকস-এর দোকানে বসত। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে সিজিপিএ ৪.৫ পেয়েছিল। লম্বা চওড়া ছিল বলে সব সময় বলত সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে। আর ছাত্র হিসেবেও খুব ভালো ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।