বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোনো ঘটনার স্মরণ উদযাপন করা ইসলামী নিদর্শনাবলির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিষয়। নামাজ যা ইসলাম এবং কুফরের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারীর মর্যাদা হাসিল করেছে এবং যা সকল মুসলমানের ওপর ফরজ করা হয়েছে এগুলো মূলতঃ আল্লাহ তায়ালার বরগুজিদাহ আম্বিয়াগণের সেই শোকরানা সেজদাহ পালনের চিহ্ন বহন করে, যা তারা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের বারগাহে বিভিন্ন সময়ে নফল হিসেবে আদায় করেছিলেন। স্বীয় প্রিয় বান্দাদের এই কার্যক্রম আল্লাহ তায়ালা এতই পছন্দ করলেন যে, তিনি এ সকল আমলকে স্বীয় হাবীবে মুকাররাম সা.-এর উম্মতগণকে ফরজ নামাজ হিসেবে দান করেছেন।
ইমাম তাহাভি রহ. (২২৯-৩১২ হি.) পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ সম্পর্কে ইমাম মুহাম্মদ বিন আয়শা’র কথা নকল করতঃ শরহে মায়ানিউল আছার গ্রন্থে নিম্নলিখিত বিবরণ প্রদান করেছেন। ০১. ফজর নামাজ হজরত আদম আ:-এর স্মৃতিচিহ্ন : যখন প্রত্যুষে আবুল বাশার সাইয়্যেদেনা আদম আ:-এর তাওবাহ কবুল হলো, তখন তিনি শোকরানা হিসেবে দুই রাকায়াত নামাজ আদায় করলেন। সুতরাং পরবর্তীতে তা ফরজ নামাজ হয়ে গেছে। ০২. জোহর নামাজ হজরত ইব্রাহিম আ:-এর স্মৃতিচিহ্ন : জোহরের সময় সাইয়্যেদেনা ইব্রাহিম আ:কে যখন হজরত ইসহাক আ:কে দান করা হলো, তখন তিনি শোকরানা স্বরূপ চার রাকায়াত নামাজ আদায় করেছিলেন। সুতরাং ইহাই জোহর নামাজ হয়ে গেছে। ০৩. আসর নামাজ হজরত ওযায়ের আ:-এর স্মৃতিচিহ্ন : যখন হজরত ওযায়ের আ:কে একশত বছর পর জাগ্রত করা হলো, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এই অবস্থায় কত বছর ছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন একদিন অথবা একদিনের কিয়দংশ। সুতরাং তিনি শোকরানা স্বরূপ চার রাকায়াত নামাজ আদায় করলেন। ইহা আসর নামাজ হয়ে গেছে। ০৪. মাগরিবের নামাজ হজরত দাউদ আ:-এর স্মৃতিচিহ্ন : আর এ কথাও বলা হয়েছে যে, হজরত ওযায়ের আ: এবং হজরত দাউদ আ:-এর মাগফিরাত মাগরিবের সময় হয়েছিল। তখন তিনি শোকরানা স্বরূপ চার রাকায়াত নামাজ আরম্ভ করলেন। কিন্তু দুর্বলতা ও কমজোরির কারণে ক্লান্ত হয়ে তৃতীয় রাকায়াতে বসে পড়লেন। এভাবে তিন রাকায়াত আদায় করলেন, চতুর্থ রাকায়াত পূর্ণ হলো না। তাই তা মাগরিব নামাজ হয়ে গেছে। ০৫. এশার নামাজ তাজদারে কায়েনাত সা.-এর স্মৃতিচিহ্ন : যে পবিত্র সত্তা এশার নামাজ আদায় করেছেন, তিনি আমাদের মাহবুব নবী হজরত মুহাম্মদ সা.। -তাহাভি, শরহু মায়ানিউল আছা, কিতাবুছ ছালাত, বাবু ছালাতিকা উছতা আয় আছ ছালাওয়াতু খন্ড : ১, পৃষ্ঠা ২২৬, বর্ণনা সংখ্যা ১০১৪।
মোট কথা, এই পাঞ্জেগানা নামাজ সেই জলিলুল কদর পয়গাম্বরগণের ইবাদতকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা দয়া ও অনুগ্রহ, ফজল ও ইহসান করেছেন এবং তারা শোকর প্রকাশের জন্য দুই রাকায়াত এবং চার রাকায়াত নফল নামাজ আদায় করেছেন। যেগুলোকে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত উম্মতে মুহাম্মদি সা.-এর জন্য পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ হিসেবে তাদের স্মৃতিচিহ্ন বানিয়ে দিয়েছেন। এমনিভাবে সারাদিনের এই নামাজগুলোকে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য আম্বিয়ায়ে কেরামের স্মরণের ধারাবাহিকতা বানিয়ে দিয়েছেন। আল্লমা ইবনে আবেদিন শামী (১২৪৪-১৩০৬ হি.) স্বীয় ফাতওয়া রাদ্দুল মুহতার আলা দুরবিল মুখতার আত তানভিরিল আবছর গ্রন্থে পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন : বলা হয়েছে যে, ফজর নামাজ হজরত আদম আ:, জোহর নামাজ হজরত দাউদ আ:, আসর নামাজ হজরত সুলায়মান আ:, মাগরিব নামাজ হজরত ইয়াকুব আ: এবং এশা হজরত ইউনূস আ:-এর জন্য ছিল। যেগুলো এই উম্মতের মধ্যে একত্রিত করা হয়েছে। -ইবনে আবেদিন : রাদ্দুল মুহতার আলা দুরবিল মুখতার আত তানভিরিল আবছার খন্ড-১, পৃষ্ঠা ৩৫১। ওই সকল মুহূর্ত যেগুলোকে আম্বিয়ায়ে কেরাম আল্লাহর দরবারে শোকর, বিনয় এবং আনুগত্য ও নম্রতার মধ্যে অতিবাহিত করেছেন, আল্লাহপাক সেগুলোকে ফরজ করে দিয়েছেন। স্বীয় আখেরি রাসূল সা.-এর উম্মতকে স্বীয় নৈকট্যের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছেন এবং মহব্বত ও আনুগত্যের নূরানী অবস্থার অগণিত রহমত দান করেছেন। আল্লাহ তায়ালার জালিলুল কদর পয়গাম্বরগণের ওই সকল সেজদা যা মকবুল হয়েছে, তা সরকারে দু’আলম সা.-এর ওসিলায় উম্মতে মুসলিমা লাভ করেছে। যা শেষ পর্যন্ত তাদের স্মরণকে উজ্জীবিত করে রাখবে। এর গুরুত্ব এর চেয়ে বেশি আর কি হতে পারে যে, আরকানে ইসলামের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রোকন, সালাত-এর আমলি আকৃতিতে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত হয়েছে, সেগুলার সবকিছুই কোনো না কোনো নবীর স্মৃতিচিহ্ন। সুতরাং বুঝা গেল, আল্লাহপাকের দরবারে মকবুল ও গ্রহণীয় কোনো আমল অর্থাৎ ঘটনার উদযাপন করা ইসলামে শুধু জায়েজই নয়, বরং দ্বীন ইসলামের বুনিয়াদি ফিকির ও দর্শনের উদ্দেশ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।